বসিরহাটকে সাজাতে প্রায় ১ কোটি টাকা খরচের সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর। ওই টাকার মধ্যে বর্ডার ডেভলপমেন্টের পক্ষে ৬৮ লক্ষ টাকা খরচ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে বসিরহাট মহকুমার রাস্তা, বিদ্যুৎ, নিকাশি ব্যবস্থা, সেতু এবং পানীয় জলের জন্যে আরও একশো কোটি টাকার উপরে খরচ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার।
পুরো টাকাটাই শহরের পাঁচটি পার্ক সাজানোর জন্য খরচ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়ে বসিরহাটের পুরপ্রধান তপন সরকার জানান, পাঁচটি পার্কের মধ্যে পিকনিক স্পটে খালের উপর দিয়ে সেতু তৈরির জন্য ৪৮ লক্ষ এবং পার্ক সাজাতে আরও ২০ লক্ষ টাকা পাওয়া গিয়েছে। সূর্যকান্ত উদ্যান, ইছামতী পার্ক, টাউনহল, আলোর ঝর্না পার্ক-পিছু ৪ লক্ষ ৯৯ হাজার টাকা করে এবং দিলীপ মজুমদার পার্কের জন্য ৩ লক্ষ ৬৬ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়েছে। পার্কগুলি আধুনিক করে গড়ে তুলতে ই-টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ শুরু হয়েছে। আগামী ১০-১৫ দিনের মধ্যে টেন্ডারের কাজ শেষ করে বাকি প্রক্রিয়া শুরু হবে। দুর্গাপুজোর আগেই পার্কগুলি আধুনিক আলো-সহ নানা ধরনের রাইডার দিয়ে সাজিয়ে তোলা হবে।
আগামী ২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে দেখছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়— শনিবার বসিরহাটের রবীন্দ্রভবনে এক কর্মিসভায় এ কথা জানিয়ে রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী চাইছেন বসিরহাটের উন্নয়ন। তাই এখানকার বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা খরচের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কেবলমাত্র হাসনাবাদে কাঠাখালি সেতু তৈরি এবং স্বরূপনগর থেকে বসিরহাট এবং বসিরহাট ঘিরে রাস্তার জন্য একশো কোটি টাকা খরচের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। জেলা পরিষদকে বলা হয়েছে, তাদের ৫০ শতাংশ টাকা যেন কেবলমাত্র বসিরহাটকে সাজানোর জন্য খরচ করা হয়।’’ খাদ্যমন্ত্রীর দাবি, ইতিমধ্যে বসিরহাট, টাকি, বাদুড়িয়া শহরকে সাজাতে বেশ কয়েকটি হাইমাস আলো দেওয়া হয়েছে। খুব শীঘ্রই আরও আলোর ব্যবস্থা করা হবে।’’
খাদ্যমন্ত্রীর এমন ঘোষণার পর পরেই বসিরহাটের পুরপ্রধান প্রায় এক কোটি টাকা ব্যয়ে পাঁচটি পার্ক সাজানোর কথা বলেন। বাম আমলে বসিরহাটের টাউনহল চত্বরে ইছামতী নদীর পাশে গড়ে তোলা হয়েছিল আলোর ঝর্না পার্ক। রংবেরঙের আলোর সঙ্গে শব্দের মিশ্রণে সন্ধ্যার পরে এলাকা হয়ে উঠত মোহময়ী। এক বছরের উপরে ওই পার্কের রেলিং ভেঙে গিয়েছে। উধাও আলোর ঝর্না। ছোট একটা সেতুতে ফাটল দেখা দিয়েছে। আলোবিহীন ওই পার্কে এখন দুপুর থেকেই চলে অসামাজিক কাজ।
বসিরহাটের ইছামতী সেতুর পাশে বেশ কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে গড়ে তোলা হয়েছিল ইছামতী পার্ক। দোলনা, স্লিপ, নোংরা ফেলার পাত্র এখন উধাও। চুরি হয়েছে রেলিং। ভেঙে ফেলা হয়েছে বসার জায়গা। ফোয়ারা এবং পাহাড়ের গা বেয়ে ঝর্নার অস্তিত্ব প্রায় লোপ পাওয়ার জোগাড়। রবীন্দ্রভবনের পাশে বিশাল পুকুরকে সঙ্গে নিয়ে গড়ে ওঠা সূর্যকান্ত পার্কটির অবস্থাও তথৈবচ। এ সব কারণে বিশেষ করে প্রাতর্ভ্রমণকারীদের অসুবিধা বেশি। অন্য দিকে, শীতের সময়ে বহু মানুষ আসেন বসিরহাটের পিকনিক স্পটে। চার দিকে জলের মাঝে উচুঁ জমিতে সার সার ঝাউয়ের বাগানের মধ্যে চড়ুইভাতি করার মজাটাই আলাদা। এক সময়ে ঠিক ছিল, পিকনিক স্পট থেকে ইছামতী নদীর উপর দিয়ে রোপওয়ে সোজা চলে আসবে ইছামতী সেতুর কাছে ইছামতী পার্কে। টয় ট্রেন চলবে। নৈশাবাস গড়ে পর্যটন শিল্পে রাজ্যের মানুষের সামনে বসিরহাটকে তুলে ধরতে এমন সব পরিকল্পনা নেওয়া হলেও বাস্তবে তা হয়ে ওঠেনি। ইছামতী পিকনিক স্পটের মধ্যে প্রবেশ করতে লম্বা বাঁশের সাঁকো পার হতে হয়। এ বার ওই সাঁকোর পরিবর্তে কংক্রিটের সেতু হবে বলে জানানো হয়েছে। শিশুদের খেলার জন্য বিভিন্ন ধরনের রাইড বসছে। এ সব ঘোষণায় স্বভাতই খুশি বসিরহাটবাসী।