ক্ষতিকর রাসায়নিক মিশছে গঙ্গার জলে

পরিবেশ মন্ত্রক এবং রাজ্য পরিবেশ দফতর থেকে থেকে বারবার কলকাতা-সহ সব পুরসভাকেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ভাসানের পরে পরেই যেন কাঠামো নদী থেকে তুলে ফেলা হয়। তা না হলে প্রতিমার রাসায়নিক রঙ, পোশাক-সহ বিভিন্ন ক্ষতিকর জিনিসপত্র জলে মিশে নদীর জলকে আরও দূষিত করে। 

Advertisement

সুপ্রকাশ মণ্ডল

শ্যামনগর শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৯ ০১:৫৭
Share:

দূষণ: আতপুরে গঙ্গায় ভেসে বেড়াচ্ছে কাঠামোর অংশ। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

নীলকণ্ঠ পাখি ফিরে গিয়েছে। মণ্ডপ ফাঁকা। শ্যামনগর-উত্তর ব্যারাকপুরের গঙ্গার ঘাটে-ঘাটে কিন্তু দূষণ ছড়াচ্ছে প্রতিমার কাঠামো। প্রতিমার রঙ ধুয়ে, মাটি গলে মিশছে নদীর জলে। প্রশাসন থেকে বারবার বলা হলেও নদীর কয়েকটি ঘাট থেকে কাঠামো তোলার কাজ শুরু হয়নি। পুর কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছে, দিন দু’য়েকের মধ্যে সব কাঠামো নদী থেকে তুলে ফেলা হবে।

Advertisement

পরিবেশ মন্ত্রক এবং রাজ্য পরিবেশ দফতর থেকে থেকে বারবার কলকাতা-সহ সব পুরসভাকেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ভাসানের পরে পরেই যেন কাঠামো নদী থেকে তুলে ফেলা হয়। তা না হলে প্রতিমার রাসায়নিক রঙ, পোশাক-সহ বিভিন্ন ক্ষতিকর জিনিসপত্র জলে মিশে নদীর জলকে আরও দূষিত করে।

শ্যামনগরে বেশিরভাগ প্রতিমা বিসর্জন হয় নানাবাবার ঘাটে। এ বার প্রায় ২০০টি প্রতিমার ভাসান হয়েছে এই ঘাটে। মূলত দশমী এবং একাদশীতেই বেশিরভাগ প্রতিমা বিসর্জন হয়। দ্বাদশী, অর্থাৎ বৃহস্পতিবার এই ঘাটের বেশিরভাগ কাঠামো তুলে ফেলে ভাটপাড়া পুরসভা। শ্যামনগরের বাকি প্রতিমা বিসর্জন হয় আতপুর ঘাটে। সেই ঘাটে দশমী থেকে কোনও কাঠামো তোলা হয়নি। শুক্রবার দেখা গেল ওই ঘাটের ধারে কাঠের জেটির পাশে সার দিয়ে ভাসছে প্রতিমার কাঠামোগুলি। কোনও কোনও কাঠামো বেশ কিছুটা দূরে চলে গিয়ে ভাসছে। স্থানীয়েরা জানালেন, বেশ কিছু প্রতিমা এবং ব্যবহৃত সামগ্রী স্রোতে ভেসে গিয়েছে। এখনও নদীর জলে ভেসে রয়েছে প্রতিমার পোশাক সামগ্রী। বেশিরভাগ প্রতিমার রঙ ধুয়ে মিশে গিয়েছে নদীর জলে। বেশিরভাগ প্রতিমা ঘাটের ধারে থাকলেও ভাটার টানে সেগুলি মাঝগঙ্গায় যাচ্ছে।
একই অবস্থা উত্তর ব্যারাকপুরের দেবীতলা ঘাটের। সেখানেও ঘাটের ধারে ভেসে রয়েছে বেশ কিছু প্রতিমার কাঠামো। ব্যারাকপুর এবং উত্তর ব্যারাকপুরে বেশ কয়েকটি ঘাটে প্রতিমা বিসর্জন হয়। অন্য ঘাটগুলি থেকে বেশিরভাগ কাঠামো তুলে ফেলা হলেও দেবীতলা ঘাট থেকে এখনও কাঠামো তোলার কাজ শুরুই হয়নি।

Advertisement

এই ঘাটে দেখা গেল, বেশ কয়েক জন নদীতে নেমে কাঠামোগুলি থেকে বিভিন্ন জিনিসপত্র খুলে নিচ্ছে। কোনও কোনও জিনিস তারা সংগ্রহ করলেও বাকি জিনিসপত্র তারা নদীতে ছুড়ে ফেলছে। সেগুলি স্রোতে ভেসে যাচ্ছে। তার মধ্যে থার্মোকল-সোলা, কাপড় এবং ধাতুর জিনিসপত্র রয়েছে। সেগুলি জলের সঙ্গে মিশছে।

পরিবেশবিদেরা বলছেন, গঙ্গার জল এমনিতেই দূষিত। বিভিন্ন শহরের নিকাশি এবং বর্জ্য সরাসরি গঙ্গায় পড়ছে। একই সঙ্গে গঙ্গা তীরবর্তী কলকারখানার দূষিত বর্জ্যও মিশছে গঙ্গার জলে। প্রতিমাতে সাধারণত রাসায়নিক রঙ ব্যবহৃত হয়। সেগুলি জলজ প্রাণীদের পক্ষে ক্ষতিকর। সেই জন্যই বিসর্জনের পরেই কাঠামো সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ।

ভাটপাড়া উপ পুরপ্রধান সোমনাথ পাল বলেন, ‘‘নানাবাবার ঘাটে প্রচুর কাঠামো সরাতে সময় লেগেছে অনেকটা। শনিবারের মধ্যে আতপুর ঘাটের কাঠামো সরিয়ে ফেলা হবে।’’ উত্তর ব্যারাকপুরের পুরপ্রধান মলয় ঘোষও জানান, শনিবার দেবীতলা ঘাট থেকে কাঠামো সরিয়ে ফেলা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন