এ বার ছিল তার পালা।
কন্যাশ্রী ক্লাবের হয়ে এর আগে জনা তিনেক নাবালিকার বিয়ে আটকানোর কাজে তৎপর ছিল সে। কিন্তু সতেরোয় পা রাখার আগে তারই যে বিয়ের ঠিক করে বসবেন বাবা-মা, তা বোধ হয় স্বপ্নেও ভাবেনি শ্রাবণী জানা।
কিন্তু ঘটেছে ঠিক তাই। যদিও শ্রাবণীর আইন-কানুন জানা। শুক্রবার সে নিজেই ফোন করে কাকদ্বীপ চাইল্ড লাইনে। নড়েচড়ে বসে পুলিশ-প্রশাসন। শেষমেশ সরকারি আধিকারিকেরা বিয়ে রুখে দিয়েছেন।
শ্রাবণীর বাবার সামান্য আয়। তিন মেয়েকে নিয়ে সংসার। বাবা আর পড়াশোনার খরচ বহন করতে পারছেন না বলে জানিয়ে দেন। সেই যুক্তিতেই দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়া শ্রাবণীর বিয়ের ঠিক করে ফেলেন। শুক্রবার কালীমন্দিরে বিয়ের কথাও ছিল।
কাকদ্বীপের যুগ্ম বিডিও শরৎচন্দ্র বিশ্বাস কাকদ্বীপ থানার পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে নিয়ে এলাকায় ছোটেন। দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন ভুবননগর হাইস্কুলের ওই ছাত্রী ও তার পরিবারের সঙ্গে। মেয়েটি জানায়, সে এখন কন্যাশ্রীর প্রথম পর্যায়ের টাকা পাচ্ছে। তার সঙ্গে কথা বলেই প্রশাসনের আধিকারিকেরা জানতে পারেন, মেয়েটি নিজেই কন্যাশ্রী ক্লাবের সদস্য।
সে জানায়, আরও পড়তে চায়। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখে। পরিবারের লোকজনকে যখন সে কথাটা বুঝিয়ে উঠতে পারেনি, তখন নিজেই ফোন করে চাইল্ড লাইনে।
প্রশাসনের কর্তারা পরিবারকে বুঝিয়েছেন, অল্প বয়সে বিয়ে দিলে আইনি সমস্যা হতে পারে। শারীরিক-মানসিক সমস্যা তো আছেই। তা ছাড়াও আর বছর দেড়েক পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারলে কন্যাশ্রী ও রূপশ্রী প্রকল্পের অনেকগুলো টাকাও পেতে পারে।
প্রশাসন থেকে শ্রাবণীর পড়াশোনায় সাহায্যের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। মেয়েটির অভিভাবকেরা মুচলেকাও দেন। পাত্রের পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগ করে বলে দেওয়া হয়, এই বিয়ে এখন হবে না। পুলিশকর্তারা জানিয়েছেন, জোর করে মেয়েকে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে কিনা, তা জানতে শ্রাবণীর পরিবারের উপরে নজর রাখা হবে।