হাবড়া বড় বাজারের মেডিক্যাল গলি।
বাজারের মূল রাস্তার উপর সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে চালবোঝাই ট্রাক, মিনি ট্রাক, ম্যাটাডর ও ইঞ্জিন ভ্যান। রাস্তার উপরেই সেগুলি থেকে চাল ওঠা-নামার কাজ চলছে।
সেই সময়ে পণ্যবোঝাই কিছু মিনি ট্রাক চলে এল। যার জেরে গোটা রাস্তাটাই বন্ধ হয়ে গেল। সাধারণ মানুষও যাতায়াত করতে না পেরে দাঁড়িয়ে পড়লেন।
হাবড়া বড়বাজারের প্রায়ই এমন পরিস্থিতি হয়। এক পথচারী জানান, মানুষ হেঁটেও এখান থেকে যাতায়াত করতে পারেন না। মাঝেমধ্যে বাজারে এমন যানজট তৈরি হয় যে, আগুন লাগলে দমকল ঢোকারও উপায় থাকে না। এ বিষয়ে দমকলও একমত। দমকল জানিয়েছে, দিনের বেলা আগুন লাগলে গাড়ি নিয়ে বাজারে ঢোকা যথেষ্ট কঠিন।
পুরপ্রধান নীলিমেশ দাস বলেন, ‘‘হাবড়া বড়বাজারে আগুন নেভানোর পরিকাঠামোর অভাব রয়েছে। পুরসভার তরফে শীঘ্রই পুলিশ প্রশাসন দমকল ব্যবসায়ী-সহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করা হবে। বাজারের আগুন নেভানোর পরিকাঠামো বাড়ানোর চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে।’’
এই বাজারের অনেক দোকানই রাস্তার উপর চলে এসেছে। তার মধ্যে বাজারের অর্ধেক জায়গা জুড়ে সাইকেল-ভ্যান দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। বাজারে ঢোকা রেরোনোর রাস্তাগুলি ঘিঞ্জি হয়ে থাকে।
যশোর রোড থেকে হাবড়া বড়বাজারে ঢোকার জন্য চারটি রাস্তা রয়েছে। সেগুলো খুব সরু নয়। যা দিয়ে মানুষের যাতায়াত করতে অসুবিধা হওয়ারও কথা নয়। কিন্তু স্থানীয় মানুষ জানান, বাজারের প্রবেশ পথেই ফলের দোকান, জামা কাপড়ের দোকান, দশকর্মার দোকান, সিমেন্টের দোকান রয়েছে। এ ছাড়াও বাজারের অলিগলির মধ্যে রয়েছে অসংখ্য ছোট দোকান ও মাছের বাজার। কিছু দোকান অস্থায়ী পলিথিনের ছাউনি দিয়ে বসে পড়েছে। বিদ্যুতের তার বিপজ্জনক ভাবে ঝুলে আছে।
তার মধ্যেই কোথাও স্টোভ জ্বালিয়ে চা করা হচ্ছে। একটি উনুন দাউদাউ করে জ্বলছে। গরম কড়াইতে রান্না হচ্ছে। যা থেকে যে কোনও সময় আগুন লাগতে পারে।
বাজারের মধ্যে রয়েছে বহুতল বাড়িঘর। বাজারে ছোট বড় দোকানের সংখ্যা ১ হাজারেরও বেশি।
কিন্তু এমন গুরুত্বপূর্ণ বাজারের আগুন নেভানোর কোনও উপযুক্ত পরিকাঠামো নেই। সাধারণ মানুষের বক্তব্য, ‘‘সব জেনেও বিপদের ঝুঁকি নিয়ে বাজারে আসতে হয়। দীর্ঘদিন ধরেই শুনছি বাজারে আগুন নেভানোর ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। কিন্তু আজও হয়নি।’’
এক চাল ব্যবসায়ী জানান, আমরা সব সময় আশঙ্কায় থাকি। আগুন লাগলে তা নেভানোর বিকল্প কোনও ব্যবস্থা এখানে নেই। দিনের বেলা দমকলের গাড়ি বাজারে ঢোকাটা কার্যত অসম্ভব।
হাবড়া পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, হাবড়া বড় বাজারের ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করা হয়েছিল, তাঁর যেন দিনের বেলার বদলে রাতে চাল-আলু গাড়ি থেকে ওঠানো নামানো করেন। যাতে আগুন লাগলে দমকল দ্রুত বাজারে ঢুকতে পারে। যদিও ওই ব্যবস্থা কার্যকর হয়নি।
ব্যবসায়ীরা জানান, রাতে ওই কাজ করা সম্ভব নয়। কারণ হাবড়া বড় বাজারটা দাঁড়িয়ে আছে চাল ব্যবসার উপর। রাতে কেউ চাল কিনতে আসবেন না। তা ছাড়া কাজের জন্য রাতে পর্যাপ্ত শ্রমিকও মিলবে না। হাবড়া বাজার কল্যাণ সমিতির সম্পাদক বরুণ সাহা বলেন, ‘‘বাজারের মধ্যে একটি পুকুর আছে। আগুন লাগলে সেখান থেকে জল এনে আগুন নেভানোর ব্যবস্থা রয়েছে। তবে দোকানগুলিতে আগুন নেভানোর ব্যবস্থা নেই।’’
ব্যবসায়ীদের একাংশ জানান, পুরসভা যদি ট্রেড লাইসেন্স দেওয়ার সময় দোকানে দোকানে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা রাখা বাধ্যতামূলক করে তাহলে সমস্যা মিটবে।