রক্ত বিক্রির কথা কখনও ভাবেননি বম্বে গ্রুপের মালিক

সম্প্রতি সুধীরবাবু পাথরপ্রতিমায় পুলিশের উদ্যোগে আয়োজিত রক্তদান করেন। সুন্দরবন পুলিশ জেলার সুপার তথাগত বসু বলেন, ‘‘সুধীরবাবু নিজের গ্রুপ সম্পর্কে জেনেই পুলিশের উদ্যোগে রক্তদান শিবিরে এসেছেন। সকলেই উচ্ছ্বসিত।’’

Advertisement

শান্তশ্রী মজুমদার

পাথরপ্রতিমা শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৭ ০৩:২৯
Share:

সুধীরকুমার মান্না

তাঁর রক্তে সোনা। এক কথায় অমূল্য।

Advertisement

বিরলতম ‘বম্বে গ্রুপ’-এর (এইচএইচ গ্রুপ) রক্ত বইছে সুধীরকুমার মান্নার শিরায়-ধমনীতে। পাথরপ্রতিমায় পান-বিড়ির দোকান আছে তাঁর। নিজের রক্ত যে বিরলতম, সে কথা বিলক্ষণ জানেন সুধীরবাবু। জানেন বলেই, রক্তদান করতে কখনও পিছপা হননি।

এইচএইচ গ্রুপের রক্তের সন্ধান প্রথমবার পাওয়া গিয়েছিল ১৯৫২ সালে। সাবেক বম্বেতে (অধুনা মুম্বই) এর সন্ধান পান চিকিৎসক ওয়াইএম ভেন্ডে। সেই সূত্রেই ‘বম্বে গ্রুপ’ বলে পরিচিতি মেলে রক্তের এই গ্রুপের। পরবর্তী সময়ে গবেষণায় জানা যায়, প্রতি ১০ লক্ষের মধ্যে মাত্র ৪ জনের শরীরে বইছে অতিবিরল এই রক্ত।

Advertisement

সম্প্রতি সুধীরবাবু পাথরপ্রতিমায় পুলিশের উদ্যোগে আয়োজিত রক্তদান করেন। সুন্দরবন পুলিশ জেলার সুপার তথাগত বসু বলেন, ‘‘সুধীরবাবু নিজের গ্রুপ সম্পর্কে জেনেই পুলিশের উদ্যোগে রক্তদান শিবিরে এসেছেন। সকলেই উচ্ছ্বসিত।’’

২০০৭ সালে প্রথমবার ব্যবসায়ী সমিতির রক্তদান শিবিরে রক্ত দেওয়ার পরে জানা যায়, সুধীরবাবু বিরল এই রক্তের গ্রুপের অধিকারী। মানিকতলা কেন্দ্রীয় ব্লাড ব্যাঙ্কের ডিরেক্টর কুমারেশ হালদার বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট করে বলা না গেলেও এ রাজ্যে মাত্র কয়েকজন মানুষের শরীরেই রয়েছে এই বিরল গ্রুপের রক্ত। খুব ভাল ভাবে তা সংরক্ষণ করা উচিত।’’ এর আগে বারুইপুর ও সন্দেশখালিতে দু’জনের দেহে বম্বে গ্রুপের রক্তের সন্ধান মিলেছিল বলে ব্লাড ব্যাঙ্ক সূত্রের খবর।

মানিকতলা কেন্দ্রীয় ব্লাড ব্যাঙ্কে বেশ কয়েকবার রক্ত দিয়েছেন বলে জানালেন সুধীরবাবু। শেষবার দিয়েছিলেন ২০১৪ সালে। তারপর থেকে কোনও রক্তদান শিবিরে বিশেষ যেতেন না।

ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে ডেকে পাঠালে কারও প্রয়োজনেই দিতেন নিজের রক্ত। প্রায় তিন বছর পরে পাথরপ্রতিমার রক্তদান শিবিরে অবশ্য নিজেই হাজির হয়ে রক্ত দিয়েছেন সুধীর। তাঁর কথায়, ‘‘কোনও শিবিরে রক্তদানের ক্ষেত্রে মা একটু আপত্তি করতেন। বলতেন, এত দুর্লভ রক্ত দান করছিস, তোর লাগলে কোথায় পাবি? কিন্তু আমার মনে হল, অন্যদের যদি আমার গ্রুপের রক্তই প্রয়োজন হয়, তা হলে তারা তা কোথায় পাবে?’’

পাথরপ্রতিমার দক্ষিণ শিবগঞ্জে একচিলতে টিনের চালের বাড়িতে থাকেন সুধীরবাবু। পাথরপ্রতিমা ফেরিঘাটে সাইকেল স্ট্যান্ড ভাড়া দেন। সেখানেই ছোট্ট পান-বিড়ির দোকান। মাসে আয় মেরেকেটে ৫ হাজার টাকা। বৃদ্ধা মায়ের ওষুধপত্র ছাড়াও দুই ছেলেমেয়ের পড়াশোনার খরচ চলে তা দিয়েই।

সুধীরবাবুর কথায়, ‘‘জানি খুব বিরল রক্ত বইছে আমার শরীরে। কিন্তু রক্ত হল দানের জিনিস। বিক্রির কথা কখনও ভাবিনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন