পাশাপাশি দুই সম্প্রদায়ের মহিলারা

দুর্গা পুজোর আয়োজনকে কেন্দ্র করে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে এমনই সম্প্রীতির দৃশ্য দেখা গেল বনগাঁ থানার সুন্দরপুর পঞ্চায়েতের  রাউতারা গ্রামে।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র 

বনগাঁ শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৮ ০২:২৩
Share:

বার্তা: সম্প্রীতির বার্তা দিতে গত সাত বছর ধরে পঞ্চমীর দিন রক্তদান শিবিরের আয়োজন করে আসছে হাবড়ার গুমা বালুইগাছি পালপাড়া অধিবাসীবৃন্দের পুজো উদ্যোক্তারা। এ বারও রক্তদানে এগিয়ে এলেন এলাকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পুরুষ ও মহিলারা। ছবি: সুজিত দুয়ারি

সংসারের যাবতীয় কাজকর্ম দুপুরের মধ্যে শেষ করে একত্রিত হচ্ছেন জনা পঁয়ত্রিশ মহিলা। সকলেই ব্যস্ত। হবে না-ই বা কেন? তাঁদের উপরেই তো গ্রামের একমাত্র দুর্গাপুজোটির দায়িত্ব! হিন্দু মহিলাদের পাশাপাশি মুসলিম মহিলারাও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সেই দায়িত্ব সামলাচ্ছেন।

Advertisement

দুর্গা পুজোর আয়োজনকে কেন্দ্র করে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে এমনই সম্প্রীতির দৃশ্য দেখা গেল বনগাঁ থানার সুন্দরপুর পঞ্চায়েতের রাউতারা গ্রামে।

অতীতে এখানে দুই সম্প্রদায়ের পুরুষেরাই পুজোর আয়োজন করতেন। গত সাত বছর ধরে কাজটি করছেন মহিলারা। তবে পুরুষেরা এখন মহিলাদের সাহায্য করেন। মনিরুল মণ্ডল নামে এক গ্রামবাসী জানান, এখানে তিনশো ঘর মুসলিম ও একশো ঘর হিন্দু পরিবার বাস করছেন দীর্ঘ দিন ধরেই। দুই সম্প্রদায়ের প্রবীণেরা জানালেন, অন্যত্র যা-ই ঘটুক, এই গ্রামে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে অশান্তি বাধতে কেউ কখনও দেখেননি। এখানে সকলেই একে অপরের বিপদে পাশে দাঁড়ান। এটিই এই গ্রামের ঐতিহ্য। এক হিন্দু মহিলা বলেন, ‘‘রাতে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে হাসপাতালে বা ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হলে মুসলিম ভাইয়েরা এগিয়ে আসেন। আমরাও ওঁদের বিপদে ছুটে যাই।’’

Advertisement

গ্রামে দুর্গা পুজোর পাশাপাশি ইদের সময়ও সম্প্রীতির আবহ দেখা যায়। এক মুসলিম যুবক জানালেন, ‘‘ইদের সময়ে হোক বা অন্য কোনও সময়ে, জলসা বা কোনও অনুষ্ঠানে হিন্দু যুবকেরাই এখানে স্বেচ্ছাসেবকের ভূমিকা পালন করেন। যে কোনও অনুষ্ঠানই আমরা এখানে মিলিত ভাবে করি।’’ জানা গেল ইদে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজন হিন্দু লোকজনকে তাঁদের বাড়িতে নিমন্ত্রণও জানান।

দুই সম্প্রদায়ের মহিলারাই এখানে বাড়ি বাড়ি ঘুরে এ পুজোর চাঁদার জন্য বিল কাটছেন, অর্থ সংগ্রহ করছেন। আবার মণ্ডপ তৈরির তদারকিও করছেন। পুজো পরিচালনার জন্য ‘আগমনী মহিলা কমিটি’ নামে একটি কমিটি তৈরি করা হয়েছে। প্রতিমা বায়না দেওয়া, মণ্ডপ তৈরির জন্য ডেকরেটর্সকে বলা, পুজোর বাজার করা— সবই করছেন মহিলারা।

কেন পুজোর আয়োজনে মহিলারাই এগিয়ে এলেন?

জানা গেল, গ্রামের বেশির ভাগ পুরুষ কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত। তাঁরা জমিতে ব্যস্ত থাকেন। সময় দিতে পারেন না। তাই মহিলারাই এগিয়ে এসেছেন।

গীতা সেন, রেহেনা মণ্ডলেরা জানান, স্থানীয় মালিপোতা এলাকা থেকে প্রতিমা নিয়ে আসা হয়। প্রতিমা আনার সময়েও যেমন মুসলিম ছেলেরা সঙ্গে থাকেন, তেমনই কোদালিয়া নদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়ার সময়েও তাঁরা এগিয়ে আসেন। জানা গেল এ বার পুজোয় গ্রামে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনও চলছে।

সম্প্রীতির এমন দৃশ্য দেখতে গ্রামে গিয়েছিলেন বনগাঁ থানার আইসি সতীনাথ চট্টরাজ। তিনি গোটা ঘটনায় আপ্লুত। সতীনাথবাবু জানান, ‘‘থানার তরফে এই পুজো কমিটিকে আমরা পুরস্কৃত করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন