সারফুদ্দিনকে খুনে ১০ লক্ষ টাকার ‘সুপারি’ দেয় কায়ুম

তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, জয়নগরের হাসানপুরে কয়েক বিঘা একটি পুকুর ভরাটের বরাত নিয়ে দু’জনের বচসা হয়েছিল। ওই পুকুর ভরাট করে বিক্রি করতে পারলে কোটি টাকার মুনাফা হওয়ার কথা।

Advertisement

শুভাশিস ঘটক

জয়নগর শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:৫০
Share:

কায়ুম মোল্লাই।

জয়নগরের তৃণমূল নেতা সারফুদ্দিন খান-সহ তিন জনকে খুনের ঘটনার মূল চক্রী কায়ুম মোল্লাই, দাবি সিআইডি গোয়েন্দাদের। ঘটনার দিন দুষ্কৃতীদের হাতে সে নিজেই অস্ত্রশস্ত্র তুলে দিয়েছিল বলে দাবি করছেন তদন্তকারীরা।

Advertisement

জয়নগরের কল্যাণপুর পেট্রল পাম্পে দুষ্কৃতীর গুলি-বোমায় খুন হন সারফুদ্দিন-সহ তিন জন। সিআইডির এক অফিসারের কথায়, ‘‘ঘটনার পরে জয়নগরের নিমপীঠের বাসিন্দা কায়ুম বেকবাগানে একটি বস্তিতে গিয়ে ওঠে। পরে ডেরা বদল করে ঠাকুরপুকুরের হোটেলে ঘর নেয়। দিন কয়েক আগে সেখান থেকেই বারুইপুর জেলা পুলিশের স্পেশাল অপারেশন গ্রুপ ও সিআইডির তদন্তকারীরা কায়ুমকে গ্রেফতার করেন।

কিন্তু কায়ুমের সঙ্গে সারফুদ্দিনের শত্রুতা কী নিয়ে?

Advertisement

তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, জয়নগরের হাসানপুরে কয়েক বিঘা একটি পুকুর ভরাটের বরাত নিয়ে দু’জনের বচসা হয়েছিল। ওই পুকুর ভরাট করে বিক্রি করতে পারলে কোটি টাকার মুনাফা হওয়ার কথা। মাস ছ’য়েক আগে খুনের মামলায় জেল থেকে জামিন পাওয়ার পরে সারফুদ্দিন জয়হিন্দ বাহিনীতে যোগ দিয়ে বিধায়ক বিশ্বনাথ দাসের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে। সেই খুঁটির জোরেই কায়ুমদের জমির ব্যবসায় থাবা বসানো শুরু করেছিল সারফুদ্দিন।

শুধু জমির ব্যবসা নয়, গত পঞ্চায়েত ভোটে কায়ুমের স্ত্রীকে পঞ্চায়েত প্রধান করার কথা দিয়েছিল সারফুদ্দিন। মোটা টাকার বিনিময়ে কয়েক জন পঞ্চায়েত সদস্যের সমর্থন করে দেওয়ার আশ্বাস দেয়। সে কথা রাখেনি। সম্প্রতি জমির দখল নিয়ে হাসানপুরের বাসিন্দা সাজামল নামে এক দাগি দুষ্কৃতীর সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েছিল সারফুদ্দিন। সাজামলকে চড় মারে। সাজামলও এই খুনে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার হয়েছে। তারও পুরনো রাগ ছিল সারফুদ্দিনের উপরে।

কায়ুমের সঙ্গে বাবুয়া নামে আর এক তৃণমূল কর্মী জড়িত বলে সিআইডি অফিসারদের দাবি। ঘটনার পর থেকে বাবুয়া ফেরার। তার খোঁজ চলছে। সারফুদ্দিনের উপরে তার কিসের আক্রোশ, তা খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা। তাঁদের দাবি, ছোট্টু নামে হাসানপুরের এক দুষ্কৃতীকে ভাড়াটে খুনির দল তৈরি করতে বলেছিল কায়ুম। এ জন্য ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত তারা খরচ করতে রাজি বলে জানায় বাবুয়া ও কায়ুম।

হাসানপুরে ছোট্টুর ডেরায় বসেই সারফুদ্দিনকে খুনের ছক কষা হয়েছিল। তবে পেট্রল পাম্পে সিসি ক্যামেরা রয়েছে তা জেনেও কেন ভাড়াটে দুষ্কৃতীদের সজাগ করেনি কায়ুম, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। ঘটনার দিন ‘অপারেশন’ নিয়ন্ত্রণ করেছিল কায়ুম ও বাবুয়াই। সাজামল সিসিটিভির আওতায় চলে আসে। তাকে শনাক্ত করে ফেলে পুলিশ। সাজামল ধরা পড়ে ঘটনার রাতেই। তাকে জেরা করে একে একে ভাড়াটে খুনির দলকে গ্রেফতার করা হয়। খোঁজ মেলে বাকিদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন