উদ্ধার হওয়া নরকঙ্কাল। — নিজস্ব চিত্র।
নতুন বাড়ি তৈরির জন্য ভিত কাটা হচ্ছিল। চলছিল মাটি খোঁড়ার কাজ। সেই সময়েই হঠাৎ মাটির নীচ থেকে উদ্ধার হল নরকঙ্কাল! রবিবার উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরে ঘটনাটি ঘটেছে। খবর প্রকাশ্যে আসতেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়। কঙ্কাল দেখতে ভিড় জমিয়েছেন স্থানীয়েরা। খবর দেওয়া হয়েছে পুলিশেও।
রবিবার বেলার দিকে অশোকনগর থানার কল্যাণগড় বাজারের পার্শ্বস্থ স্বামীজি সঙ্ঘ ক্লাবের পাশে ঘটনাটি ঘটে। মাটি খোঁড়ার সময় হঠাৎ দু’টি মাথার খুলি দেখতে পান মিস্ত্রিরা। পরে আরও মাটি খুঁড়তেই উদ্ধার হয় বেশ কয়েকটি হাড়গোড়। সঙ্গে সঙ্গে সাড়া পড়ে যায় এলাকায়। খবর দেওয়া হয় অশোকনগর থানায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছোন অশোকনগর থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক চিন্তামণি নস্কর-সহ একাধিক পুলিশ কর্তা। খুলি ও হাড়গোড় দেখে প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, কঙ্কালগুলি বেশ পুরনো। তবে কবে সেগুলি পোঁতা হয়েছিল, তা জানা যাবে তদন্তের পরেই। আপাতত ঘটনাস্থল ঘিরে রেখেছে পুলিশ। কঙ্কালগুলি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।
ওই জমির পাশেই থাকেন আশিস মুখোপাধ্যায়। ঘটনাচক্রে, যে জমি থেকে কঙ্কালগুলি উদ্ধার হয়েছে, সেটি তাঁদের আত্মীয়ের। আশিস বলেন, ‘‘এ সবের কিছুই জানতাম না। আগে এখানে আমাদের কাকা বিজন মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি ছিল। আজ মিস্ত্রিরা ডেকে দেখালেন মাথার খুলি আর হাড়গোড় পাওয়া গিয়েছে। দেখে তো মনে হচ্ছে কঙ্কাল অনেক পুরনো।’’ আশিসদের পরিবারের দাবি, দেশ স্বাধীন হওয়ারও আগে থেকে তাঁরা অশোকনগরের ওই এলাকায় থাকছেন। সেখানে যে মাটির তলায় আস্ত নরকঙ্কাল পুঁতে রাখা আছে, ঘুণাক্ষরেও টের পাননি কেউ।
আশিসের স্ত্রী মৌসুমীর কথায়, ‘‘২০১৩ সালে কাকাশ্বশুর ও তাঁর স্ত্রীর মৃত্যুর পর থেকে এই ঘর বন্ধই পড়ে ছিল। কখনও কখনও কাকাশ্বশুরের মেয়েরা এসে থাকত। এখন জায়গাজমি ভাগবাঁটোয়ারা হয়ে যাওয়ার পর নতুন করে ঘর তোলা হচ্ছিল। তাতেই খুলি আর হাড়গোড় পাওয়া গিয়েছে।’’
এ বিষয়ে এলাকার তৃণমূল বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামী বলেন, ‘‘অশোকনগর ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কল্যাণগড়ে সিপিএমের এক সময়ের হার্মাদ বিজন মুখোপাধ্যায়ের বাড়ির শোওয়ার ঘরের মেঝের নীচে কঙ্কাল পাওয়া গিয়েছে। বিজনেরা এককালে অশোকনগর-হাবড়ার ত্রাস ছিল, আশির দশকে এই এলাকায় এদের কথাই ছিল শেষ কথা।’’ নারায়ণের দাবি, ২০০২ সালেও এক বার এলাকার এক জলের ট্যাঙ্ক থেকে পচাগলা দেহ উদ্ধার হয়েছিল। তাঁর কথায়, ‘‘আরও না জানি কত কঙ্কাল বিজনের বাড়ির চৌহদ্দি থেকে বেরোবে! এগুলো হয়তো তখনকার কংগ্রেস কর্মীদের দেহ। সিপিএমের সেই কলঙ্কিত ইতিহাস আজ মাটি খুঁড়ে বেরিয়ে আসছে!’’