প্রেমিকের কথায় গুন্ডা ভাড়া করে স্বামীকে খুন স্ত্রীর

বছর দু’য়েক আগে বারাসতে প্রেমিকের সঙ্গে পরিকল্পনা করে স্বামী অনুপম সিংহকে খুন করেছিল মনুয়া মজুমদার। মামলাটি এখনও বিচারাধীন। বাদুড়িয়ার ঘটনায় মনুয়া কাণ্ডের ছায়া দেখছেন তদন্তকারীরা।  

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বসিরহাট শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৯ ০০:৪৯
Share:

ধৃত: মিঠুনকে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। ইনসেটে, টুম্পা। নিজস্ব চিত্র

বাদুড়িয়ায় যুবক খুনের তদন্তে নেমে স্ত্রী ও বন্ধুকে গ্রেফতার করল পুলিশ। তদন্তকারীদের দাবি, অজয় মণ্ডল নামে নিহত যুবকের স্ত্রী টুম্পার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠেছিল মিঠুনের। বন্ধুর সঙ্গে স্ত্রীর প্রেমের সম্পর্কের কথা জানতে পেরে গিয়েছিলেন অজয়। অভিযোগ, সেই রাগেই টুম্পা-মিঠুনরা ভাড়াটে গুন্ডা লাগিয়ে খুন করে অজয়কে।

Advertisement

বছর দু’য়েক আগে বারাসতে প্রেমিকের সঙ্গে পরিকল্পনা করে স্বামী অনুপম সিংহকে খুন করেছিল মনুয়া মজুমদার। মামলাটি এখনও বিচারাধীন। বাদুড়িয়ার ঘটনায় মনুয়া কাণ্ডের ছায়া দেখছেন তদন্তকারীরা।

রবিবার ভোরে বাদুড়িয়ার বাজিতপুর গ্রামে একটি কালভার্টের পাশ থেকে মাছ ব্যবসায়ী অজয়ের ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হয়েছিল। অজয়ের মোবইল ফোনের হদিস পাচ্ছিল না পুলিশ। তাদের দাবি, টুম্পার হেফাজত থেকে উদ্ধার হয়েছে সেই ফোনও।

Advertisement

তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, কিছু দিন আগে সপরিবার দিঘায় বেড়াতে গিয়েছিলেন অজয়-মিঠুনরা। সেখানে স্ত্রীর সঙ্গে মিঠুনকে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখে ফেলেন অজয়। এই নিয়ে শুরু হয় অশান্তি। তদন্তকারীদের দাবি, অজয়কে পথ থেকে সরিয়ে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে টুম্পা-মিঠুনরা। সেই মতো স্থানীয় কিছু দুষ্কৃতীদের খুনের বরাত দেয় মিঠুন। ৮০ হাজার টাকায় রফা হয়। ‘কাজ’ হাসিলের আগে ২০ হাজার টাকা দিয়েও দেওয়া হয়েছিল দুষ্কৃতীদের হাতে। অজয়কে চিনিয়ে দেওয়ার পরে বাকি টাকাটাও দিয়ে দিয়েছিল মিঠুন। টাকার বেশির ভাগটাই অবশ্য জোগাড় করেছিল টুম্পা, এমনটাই জানতে পারছেন তদন্তকারী অফিসারেরা। মঙ্গলবার ধৃতদের বসিরহাটের এসিজেএম আদালতে তোলা হলে বিচারক টুম্পাকে চোদ্দো দিনের জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। মিঠুনকে পাঁচ দিনের জন্য পুলিশি হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।

মুদি ব্যবসায়ী মিঠুনও বিবাহিত। পুলিশের দাবি, খুনের জন্য তিন দুষ্কৃতীকে ঠিক করেছিল সে-ই। অজয় খুন হওয়ার পরে তাঁর সাইকেল, পকেটে কয়েক হাজার টাকা এবং রক্তমাখা দা উদ্ধার হয়। তবে গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ জানতে পারে, ভোরের দিকে অজয়কে খুনের পরে বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁর মোবাইলটি সরিয়ে ফেলেছিল টুম্পা।

সোমবার রাতে পুলিশ মিঠুনকে গ্রেফতার করে। তাকে জেরা করে মঙ্গলবার ভোরে ধরা হয় টুম্পাকে। জেরায় পুলিশকে মিঠুন জানিয়েছে, যাতে কেউ সন্দেহ না করে, সে জন্য খুনের পরে এলাকায় থেকে গিয়েছিল সে। অজয়ের আত্মীয়-পরিজনের সঙ্গে হাসপাতাল, থানা, শ্মশানেও ছিল। স্বামীর মৃত্যু পরে টুম্পার কান্নাকাটি দেখে গ্রামবাসী, পরিবার-পরিজনের কেউ ঘুণাক্ষরেও ভাবেননি, খুনের ঘটনায় তার হাত থাকতে পারে! নিহতের ভাই দেবকুমার বলেন, ‘‘দাদার মতো একজন নিরীহ মানুষকে কেন খুন করা হল, তা বুঝতে পারছিলাম না। এখন সব স্পষ্ট হল।’’

পুলিশ আরও জানতে পেরেছে, পরিস্থিতি ঠান্ডা হলে বাংলাদেশে পালিয়ে যাবে বলে ঠিক করেছিল মিঠুন-টুম্পারা। ভাড়াটে তিন দুষ্কৃতীর খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন