গ্রন্থাগারের জীর্ণ দশা। —নিজস্ব চিত্র।
বই আছে। গ্রন্থাগারও আছে। কিন্তু গ্রন্থাগারিক ও কর্মীর অভাবে সে সবের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন পাঠকেরা। কর্মী সঙ্কটে ভুগছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার প্রায় সব ক’টি গ্রন্থাগার। কোথাও নেই গ্রন্থাগারিক। আবার কোথাও চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর অভাবে ধুলো জমছে বইয়ের তাকে। জেলা প্রশাসনের আশ্বাস, সমস্যার কথা সংশ্লিষ্ট দফতরে জানানো হয়েছে। কিন্তু কাজ হচ্ছে কই!
গ্রন্থাগার দফতরের প্রতিমন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী বলেন, ‘‘আমি সবে দায়িত্বে এসেছি। আপাতত ফাইলগুলি খতিয়ে দেখছি। ঈদ মিটলে এই বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে পারব।’’
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ডায়মন্ডহারবার, কাকদ্বীপ, বারুইপুর, ক্যানিং ও বারুইপুর এই ৫টি মহকুমায় বর্তমানে ১৫৫টি গ্রন্থাগার রয়েছে। ডায়মন্ডহারবার মহকুমায় ২টি শহর গ্রন্থাগার ও ৩৪টি গ্রামীণ গ্রন্থাগার রয়েছে। কাকদ্বীপ মহকুমায় ১টি শহর গ্রন্থাগার ও ১৭টি গ্রামীণ গ্রন্থাগার, বারুইপুর মহকুমায় ৭টি শহর ও ৩৩টি গ্রামীণ, ক্যানিং মহকুমায় ১টি শহর ও ১৭টি গ্রামীণ এবং আলিপুর মহকুমায় ৮টি শহর গ্রন্থাগার এবং ৩৫টি গ্রামীণ গ্রন্থাগার রয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ সাধারণ গ্রন্থাগার কর্মী সমিতির দক্ষিণ ২৪ পরগনা কমিটির জেলা সম্পাদক নদিয়াবিহারী গোড়ে বলেন, ‘‘বেশিরভাগ গ্রন্থাগারেই কর্মী নেই। আমাকেই দু’টি গ্রন্থাগারের কাজ সামলাতে হয়।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাথমিক ভাবে জেলার বেশির ভাগ গ্রামীণ গ্রন্থাগার তৈরি হয়েছিল কোনও বাড়িতে অথবা কোনও ক্লাব ঘরে। সেখানেই রাখা থাকত পাঠ্যপুস্তক, কর্মসংস্থান সংক্রান্ত পত্রিকা। এগুলিই পরে সরকারি অনুমোদন পায়। কিন্তু সেখানে কর্মী নিয়োগ সেভাবে হয়নি। যে সব কর্মী ছিলেন তাঁদের অনেকেই আবার অবসর নিয়েছেন। কেউ কেউ অবসরের মুখে। ফলে জেলার অনেক সরকারি গ্রন্থাগার এখন তালাবন্ধ থাকে। কয়েকটি আবার সারা দিনে মাত্র ঘণ্টা দুয়েক খোলা থাকছে।
গ্রন্থাগার দফতর থেকে জানা গিয়েছে, মহকুমা এলাকার শহর গ্রন্থাগারে নিয়ম অনুসারে ১জন গ্রন্থাগারিক, ১জন সহকারী গ্রন্থাগারিক, ১জন বুক বাঁধাই কর্মী, ১জন রক্ষী থাকার কথা। গ্রামীণ গ্রন্থাগারে ১জন গ্রন্থাগারিক এবং ১জন সহকারী কর্মীর থাকার কথা। কিন্তু বর্তমানে জেলার ১৫৫টি গ্রন্থাগার মিলিয়ে মোট ১৭৩ জন কর্মী রয়েছেন। বর্তমানে গ্রন্থাগারে বইয়ের সংখ্যা এবং বিষয় বৈচিত্র্য অনেক বেড়েছে। কিন্তু কর্মীর অভাবে সে সব শুধুই তালাবন্দি।
দিন কয়েক আগে দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ মথুরাপুরের অনির্বাণ পাঠাগারে গিয়ে দেখা গেল দোতলা বাড়ির সদর দরজায় তালা ঝুলছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, গ্রন্থাগারিক অসুস্থ, তাই ছুটিতে রয়েছেন। মগরাহাটের মহেশপুর সাধারণ পাঠাগারে গিয়ে দেখা গেল, দরজায় তালা। গ্রন্থাগারের সদস্যরা জানান, দূর থেকে আসা এক জন গ্রন্থাগারিক ঘণ্টা দুয়েক থেকে চলে যান। ডায়মন্ডহারবারের নেতড়া গ্রাম্য পাঠাগারে আবার কোনও কর্মী নেই। এই গ্রন্থাগারটি ১৯৮৪ সালে সরকারি অনুমোদন পেয়েছিল। এখন কাজ চালাচ্ছেন এক জন অস্থায়ী কর্মী। গ্রন্থাগারের ছাদ থেকে চাঙর খসে পড়ছে। বৃষ্টি হলে বইগুলি পলিথিন ঢাকা থাকে। ভিতরে গুমোট গন্ধ। গ্রন্থাগারটির অস্থায়ী কর্মী সাহাবুদ্দিন গাজি বলেন, ‘‘আমি মন্দিরবাজারের দক্ষিণ বিষ্ণুপুরের একটি গ্রন্থাগার সামলাই। নেতড়াতে সপ্তাহে এক দিন করে যাই।’’ ডায়মন্ডহারবার শহর গ্রন্থাগারেও প্রধান গ্রন্থাগারিক নেই। কয়েক বছর ধরে গ্রন্থাগার পরিচালনা নিয়ে স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ কয়েকজন মিলে অস্থায়ী ভাবে ওই গ্রন্থাগারের দৈনন্দিন কাজ সামলাচ্ছেন।
জেলা গ্রন্থাগারিক তাপস মণ্ডল জানান, কর্মী সমস্যা-সহ অনান্য সব বিষয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।