মাসান্তে টাকা পেলেই খুশি বাড়িওয়ালা

বসিরহাটের পুরপ্রধান তপন সরকার বলেন, ‘‘ভাড়া দিলে কী কী করতে হবে, সে সম্পর্কে বাড়ির মালিকদের সচেতন করা হয়। মাইকে প্রচার করা হচ্ছে। লিফলেট দিয়েও মানুষকে সতর্ক করা হচ্ছে। তারপরেও মানুষ পুলিশকে কিছু জানাচ্ছেন না।’’ভাড়াটে সম্পর্কে উপযুক্ত তথ্য রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বসিরহাটের মহকুমাশাসক সুপ্রিয় দাস।

Advertisement

নির্মল বসু

বসিরহাট শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৮ ০০:০২
Share:

নজরদারি: ভাড়াটিয়ার তথ্য দেখছে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র।

অস্ত্র বিক্রি করতে গিয়ে ধরা পড়েছিল মনোতোষ দে। বাংলাদেশের নিষিদ্ধ জঙ্গি গোষ্ঠী সংগঠন জেএমবি-র কাছে অস্ত্র বিক্রি করতে গিয়েছিল বলে জানতে পারেন তদন্তকারীরা। আরও জানা যায়, দুই স্ত্রীকে নিয়ে বসিরহাটের বিভিন্ন জায়গায় গত কয়েক বছর ধরে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকত সে। কোনও বাড়ির মালিকই মনোতোষের সম্পর্কে কোনও তথ্য, পরিচয়পত্র রাখেননি। ফলে পুলিশের কাছেও আগে থেকে কোনও তথ্য ছিল না মনোতোষ সম্পর্কে।

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, বাড়তি টাকার লোভে বাড়িওয়ালারা ভাড়াটিয়ার পরিচয় জানার প্রয়োজন মনে করেন না। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে মনোতোষ ওরফে শ্যামল ওরফে জিয়ারুল গাজির মতো দুষ্কৃতীরা বসিরহাটের মার্টিনবার্ন রোড, ভবানীপুর, খোলাপোতা, রঘুনাথপুরে বাড়ি ভাড়া নিয়ে নানা রকম বেআইনি কাজ চালানোর সুযোগ পেয়ে যায়।

এই ঘটনা ঘটার পরেও মানুষের টনক নড়েনি বলে পুলিশ জানায়। কারণ, এখনও বেশির ভাগ বাড়ির মালিকই বাড়ি ভাড়া দেওয়ার সময়ে পুলিশকে ভাড়াটিয়ার কোনও তথ্য দেন না। বসিরহাট শহর তো বটেই, সীমান্তবর্তী ঘোজাডাঙা, ইটিন্ডা, শাঁকচুড়ো, স্বরূপনগরের সোনাই খালের পাশে থাকা বাড়ির ভাড়াটেদের সম্পর্কেও আগাম কিছু জানতে পারে না পুলিশ-প্রশাসন।

Advertisement

বসিরহাটের পুরপ্রধান তপন সরকার বলেন, ‘‘ভাড়া দিলে কী কী করতে হবে, সে সম্পর্কে বাড়ির মালিকদের সচেতন করা হয়। মাইকে প্রচার করা হচ্ছে। লিফলেট দিয়েও মানুষকে সতর্ক করা হচ্ছে। তারপরেও মানুষ পুলিশকে কিছু জানাচ্ছেন না।’’ভাড়াটে সম্পর্কে উপযুক্ত তথ্য রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বসিরহাটের মহকুমাশাসক সুপ্রিয় দাস।

বসিরহাটের সীমান্তবর্তী এলাকার কয়েকটি থানায় ভাড়াটিয়াদের তথ্য জানতে একটি রেজিস্টার খাতাও করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ভাড়াটিয়াদের তথ্য জানতে ফর্ম ফিলাপেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু বাড়ির মালিকেরাই এ বিষয়ে সচেতন নন। বসিরহাট থানার এক আধিকারিক বলেন, ‘‘শহরের নিরাপত্তার কারণে সীমান্ত এলাকায় কেউ বাড়ি ভাড়া নিলে ছবি-সহ নির্দিষ্ট ফর্ম ফিলাপ করতে হবে। তবেই তাঁকে বাড়ি ভাড়া দেওয়া যাবে।’’

পুলিশ জানিয়েছে, মনোতোষ এতগুলি বাড়ি ভাড়া নিয়েছিল। কিন্তু তার বাড়ির কোনও মালিকই জানতেন না সে কী কাজ করে। কোথা থেকে এসেছে। ঘোজাডাঙা, গাছা, পানিতর-সহ বসিরহাট সীমান্তে অনেকই বেআইনি ভাবে এ দেশে ঢুকে ভাড়া বাড়িতে থাকছে। অতীতেও এমন ঘটনার নজির মিলেছে। বাড়ির মালিক মোটা অঙ্কের ভাড়া পেয়ে কে এলো কে গেল তার খোঁজ না রাখে না।

পুলিশ জানায়, ১৯৯৮ সালে হাড়োয়ায় রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর সভায় সন্দেহভাজন জামাত-ই ইসলামের সক্রিয় সদস্য আব্দুল্লা শাকের ধরা পড়েছিল। জেরায় জানা যায়, পাকিস্তানের আইএসআইয়ের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। ঘোজাডাঙা সীমান্ত দিয়ে সে এ দেশে এসে বাড়ি ভাড়া নিয়েছিল।

১৯৯৯ সালে বসিরহাটের বদরতলায় ভাড়া বাড়ি থেকে গ্রেফতার হয়েছিল স্বপন দাস। পুলিশ জানায়, তার কাছ থেকে বাংলাদেশে বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীর কাছে পাঠানোর জন্য জড়ো করা গুরুত্বপূর্ণ নথি উদ্ধার করেছিলেন গোয়েন্দারা। সে বছরই বসিরহাটের শাঁকচুড়ো থেকে ধরা পড়েছিল বেলাল মিঁয়া। কান্দাহারে বিমান ছিনতাইয়ে জড়িত ছিল সে। ইটিন্ডা সীমান্ত দিয়ে বসিরহাটে ঢুকে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে অস্ত্র বিক্রি করত বেলাল।

পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘দেশ ও নিজেদের নিরাপত্তার জন্যই মানুষকে সচেতন হতে হবে। ভাড়াটিয়ার সমস্ত তথ্য পুলিশকে জানাতে হবে বাড়ির মালিকদেরই। না হলে সীমান্তবর্তী এলাকায় কে কখন কোন বাড়ি ভাড়া নিচ্ছে, তা জানার মতো পরিকাঠামো পুলিশের নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন