Hawkers

সহজ শর্তে ঋণ ফেরিওয়ালাদের, জানেনই না কেউ

আজগার আরও জানান, ভোর ৪টের সময়ে বাড়ি থেকে বেরোন। এরপরে তিনটি পঞ্চায়েত এলাকার বিভিন্ন বাড়ি ঘুরে ঘুরে লোহা, অ্যালুমিনিয়াম বা প্লাস্টিকের ভাঙাচোরা জিনিস কেনেন। সন্ধ্যায় স্থানীয় এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে কেজি পিছু ৩-৫ টাকা লাভ হয়।

Advertisement

নবেন্দু ঘোষ

হাসনাবাদ শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০২:৩৯
Share:

ফাইল চিত্র

লকডাউন পরিস্থিতিতে কেন্দ্র সরকার ফেরিওয়ালাদের জন্য ব্যাঙ্ক থেকে সহজে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়ার প্রকল্প চালু করেছে। তবে এই প্রকল্পের কথা জানেন না বেশিরভাগ ফেরিওয়ালাই। তাই তাঁরা কেউ চড়া সুদে টাকা নিয়ে ক্ষুদ্র পুঁজিতে কাজ শুরু করেছেন কিছু দিন হল। হাসনাবাদ থানার বিশপুর গ্রামের শেখপাড়ায় অনেক ফেরিওয়ালার বাস। বহু বছর ধরে গ্রামে ঘুরে ঘুরে তাঁরা ভাঙাচোরা জিনিস কেনেন। এরপর গ্রামের এক ব্যক্তির কাছে সামান্য লাভে তা বিক্রি করেন। এমনই এক ফেরিওয়ালা আজগার গাজি। শেখপাড়ায় ছোট্ট মাটির বাড়িতে স্ত্রী ও বাচ্চাকে নিয়ে থাকেন। আজগার জানান, লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে কয়েক মাস বাড়িতে বসে কেটেছে। যা স্বল্প সঞ্চয় ছিল, তা দিয়েই সংসার চালিয়ে হাত ফাঁকা হয়ে যায়। লকডাউন শিথিল হতে ফের কাজ শুরু করবেন বলে ঠিক করেন। তবে হাতে টাকা আর কিছুই ছিল না। তাই পড়শির থেকে ৫ হাজার টাকা সুদে নেন। আজগার বলেন, ‘‘মাসে হাজার টাকায় ৫০ টাকা সুদ গুণতে হয়। জানি অনেক বেশি সুদ দিতে হচ্ছে। তবুও উপায় নেই। তাই ধার নিয়েছি।’’

Advertisement

আজগার আরও জানান, ভোর ৪টের সময়ে বাড়ি থেকে বেরোন। এরপরে তিনটি পঞ্চায়েত এলাকার বিভিন্ন বাড়ি ঘুরে ঘুরে লোহা, অ্যালুমিনিয়াম বা প্লাস্টিকের ভাঙাচোরা জিনিস কেনেন। সন্ধ্যায় স্থানীয় এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে কেজি পিছু ৩-৫ টাকা লাভ হয়। সব মিলিয়ে কোনও দিন ২০০ টাকা কোনও দিন ৩০০ টাকা আয় রোজগার। একই অবস্থার কথা জানালেন নুর আলি শেখ নামে আর এক ফেরিওয়ালা। তিনিও প্রায় দশ বছর ধরে ফেরি করছেন। ৫ হাজার টাকা সুদে নিয়েছেন সম্প্রতি। যাঁর কাছে মালপত্র বিক্রি করেন, তাঁর কাছ থেকেই ধার করেছেন। মাসে এক হাজার টাকায় ৫০ টাকা সুদ দিতে হচ্ছে। স্থানীয় আর এক ফেরিওয়ালা রহমান শেখ বলেন, ‘‘আমিও প্রতিবেশীর থেকে ৫০০০ টাকা সুদে নিয়েছি বাধ্য হয়ে। লকডাউনের পরে হাতে আর টাকা ছিল না। এক হাজার টাকার মাসে ৮০ টাকা সুদ দিতে হয়। চেষ্টা করছি যতটা সম্ভব দ্রুত সব টাকা শোধ করার।’’

ফেরিওয়ালারা সকলে জানান, ব্যাঙ্ক থেকে সহজে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত যে ঋণ পেতে পারেন, তা তাঁদের জানা নেই। এ বিষয়ে নুর আলি শেখ নামে এক ফেরিওয়ালা বলেন, ‘‘আমাদের পুঁজি এতই কম যে পাড়া থেকে মাল তুলে বাড়িতে রাখতে পারি না। প্রতিদিন যা দাম থাকে, সেই দামে মাল বিক্রি করতে হয়। যদি কয়েক হাজার টাকা ব্যাঙ্ক থেকে স্বল্প সুদে ঋণ পেতাম, তবে ব্যবসায় খুব সুবিধা হত।’’ নুর আলি আরও বলেন, ‘‘ব্যাঙ্কে যেতে ভয় পাই আমরা। যদি সাহেবরা অপমান করে তাড়িয়ে দেয়। তাই ওখানে গিয়ে ঋণের বিষয়ে খোঁজ-খবর নেওয়ারই সাহস পাই না। আমাদের জন্য কোনও সুবিধা সরকার দিচ্ছে জানলে তবুও একবার যেতাম।’’

Advertisement

এ বিষয়ে বাইলানি বাজারের একটি সরকারি ব্যাঙ্কের শাখা ম্যানেজার জানান, ফেরিওয়ালাদের ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত সহজে ঋণ দেওয়ার কোনও প্রকল্পের বিষয়ে তাঁদের কাছে কোনও খবর নেই। তাই এই সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না। তিনি আরও জানান, কোনও ফেরিওয়ালাও আসেননি এই বিষয়ে খোঁজ নিতে।’’ তবে হিঙ্গলগঞ্জের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখা সূত্রে খবর, এই প্রকল্পের শর্ত হল দু’বছরের মধ্যে ঋণ শোধ করতে হবে। হিঙ্গলগঞ্জ শাখা থেকে ঋণ নিলে বার্ষিক ৮.৫ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে। তার উপরে সরকার ৭ শতাংশ হারে তিন মাস পরে ভর্তুকি দেবে। কোনও ফেরিওয়ালা ঋণ নিতে চাইলে তাঁকে স্থানীয় সরকারি ব্যাঙ্কেই যোগাযোগ করতে হবে। অর্থাৎ, ব্যাঙ্কগুলি তার সার্ভিস এরিয়ার মধ্যে থাকা বাসিন্দাকেই শুধু এই ঋণ দেবে। ঋণ পেতে কোনও সম্পত্তি দেখাতে হবে না। শুধুমাত্র ভোটার কার্ড, প্যান কার্ড, আধার কার্ড ও যে ব্যাঙ্কে থেকে ঋণ নেবেন, সেই ব্যাঙ্কের পাস বই থাকলে ভাল হয়। এ ছাড়া, যে ব্যক্তি ঋণ নেবেন, তিনি যদি এক বছরের মধ্যে ঋণ শোধ করে দিতে পারেন, তবে পরে ওই ব্যক্তি আবারও সহজে ঋণ পাবেন।

তবে এই ব্যাঙ্কের শাখায় এখনও কেউ এই ঋণ নিতে আসেননি বলে জানা গেল। ব্যাঙ্কের তরফ থেকেও এই প্রকল্পের সুবিধার কথা প্রচার করা হয়নি। এ প্রসঙ্গে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ জানান, জোনাল ও হেড অফিস থেকে তাঁদের কাছে কোনও ব্যানার বা পোস্টার আসেনি। তাই প্রচার করা যায়নি। এলে সে সব বিভিন্ন জায়গায় টাঙিয়ে দেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন