Lok Sabha Election 2019

পাহারা কেন ছিল না সে দিন, প্রশ্ন খোদাবক্সের

গত পঞ্চায়েত ভোটের দিন বালির চক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বুথের বাইরে গুলিবিদ্ধ হন আরিফ।

Advertisement

সমীরণ দাস

জয়নগর শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৯ ০০:৩৯
Share:

বেখেয়ালে: কথাবার্তা ইদানীং তেমন বলেন না আরিফের মা— ছবি: সুমন সাহা

সকাল সকাল ভোট দিলেন কুলতলির বালির চকের বাসিন্দা খাজাবক্স গাজি। পঞ্চায়েত ভোটে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছিল খাজাবক্সের ছেলে আরিফ আলি গাজির। রবিবার ভোট দিয়ে বেরিয়ে খাজাবক্স বলেন, ‘‘সে দিনও যদি এ রকম পাহারা থাকত, ছেলেটাকে অকালে চলে যেতে হত না।’’

Advertisement

গত পঞ্চায়েত ভোটের দিন বালির চক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বুথের বাইরে গুলিবিদ্ধ হন আরিফ। রাজনৈতিক সন্ত্রাসের অভিযোগ ওঠে এই বুথে। এ দিন সেই বুথে গিয়ে দেখা গেল, ভোট চলছে নির্বিঘ্নে। এলাকার অনেকেই জানালেন, এমন শান্তির ভোট বহু কাল দেখেননি।

আরিফের বাড়ির উল্টো দিকেই থাকেন আসমা মোল্লা। তাঁর কথায়, ‘‘এক সপ্তাহ আগে থেকেই এলাকায় বাহিনী চলে এসেছে। পাড়ায় পাডা়য় ঘুরে বেড়াচ্ছে। এ রকম আগে দেখিনি। পঞ্চায়েত ভোটে এত পুলিশ থাকলে আমাদের ছেলেটার জীবনটা এই ভাবে শেষ হয়ে যেত না।’’

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

আরিফের মা ফতেমা গাজিও এ দিন ভোট দিয়েছেন। খাজাবক্স জানালেন, ছেলের মৃত্যুর পর থেকেই মানসিক ভারসাম্য ঠিক নেই ফতেমার। আরিফের বাড়ি গিয়ে দেখা গেল, মাটির বাড়ির দাওয়ায় বলে শূন্য দৃষ্টিতে বসে আছেন ফতেমা। আরিফের কথা জিজ্ঞেস করতে একবার শুধু তাকালেন। তবে ওই পর্যন্তই। কোনও কথা নেই মুখে।

তৃণমূল কর্মী হিসেবেই এলাকায় পরিচিত ছিলেন আরিফ। তাঁর গোটা পরিবারই তৃণমূলের সমর্থক। তাঁর মৃত্যুতে সরকারের তরফে ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করা হয়। তবে আরিফের ভাই আবুল হোসেন গাজির অভিযোগ, সেই টাকা এখনও হাতে পাননি তাঁরা। এ নিয়ে স্থানীয় নেতৃত্বের দিকেই আঙুল তোলেন তিনি। বলেন, ‘‘আরিফের স্ত্রী কিছু টাকা পেয়েছে। বাবা-মায়েরও কিছু পাওয়ার কথা ছিল। শুনেছি টাকা নাকি এসেছিল। কিন্তু এখানকার নেতারা সেই টাকা কী করলেন জানি না। আমাদের হাতে অন্তত আসেনি।’’ আরিফের পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে আবুলই ছোট। বাবা মায়ের দেখাশোনা তিনিই করেন। বাকি ভাইরা সকলেই বাড়ি ছেড়েছেন বলে জানালেন আবুল। কখনও মাটি কাটার কাজ করে, কখনও চানা, আলুকাবলি বিক্রি করেন। তাঁর কথায়, ‘‘মা অসুস্থ। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছি না। ওই টাকাটা পেলে খুব সুবিধা হত। মায়ের চিকিৎসাটা অন্তত হত।’’ আবুলের কথায়, ‘‘সে দিনের সঙ্গে আজকের পরিস্থিতি মেলাতেই পারছি না। এ রকম শান্তিতে ভোট অনেক দিন দেখিনি। পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকলে আমাদের পরিবারটা এভাবে ছারখার হয়ে যেত না!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন