শান্তিতে ভোট দিতে পারব তো?

দেশের বেশির ভাগ ভোটারই বয়সে তরুণ। এঁদের অনেকেই প্রথম ভোট দেবেন। রাজনীতি নিয়ে কী ভাবছে এই প্রজন্ম? ভোট নিয়েই বা কতটা সচেতন তাঁরা? ভাঙড় মহাবিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে গিয়ে তাঁদের কথা শুনলেন সামসুল হুদা

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৯ ১০:০২
Share:

গপ্পো: ভাঙড় মহাবিদ্যালয়ে। নিজস্ব চিত্র

কথা শুরু করলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র আকাশ ঘোষ। বললেন, ‘‘পড়াশোনা করে যে চাকরি পাব, তার নিশ্চয়তা কই? আমরা দেখতে পাচ্ছি, এসএসসি পরীক্ষায় পাশ করেও ছেলেমেয়েরা চাকরি পাচ্ছেন না। চাকরির জন্য তাঁদের ধর্নায় বসতে হচ্ছে।’’

Advertisement

তাঁকে সমর্থন করে ইতিহাসের ছাত্রী নার্গিস পারভিন বলেন, ‘‘আমাদের প্রলোভন দেখানো হচ্ছে। ভোট এলেই লোক-দেখানো কাজ শুরু হয়ে যায়। যেন এ সব দেখে আমরা ভুলে যাব। আর চাকরি? এসএসসিতে পাশ করেও লোকজন চাকরি পাচ্ছেন না। তাঁদের তো বয়স চলে যাচ্ছে। প্রত্যেকটা মানুষের একটা স্বপ্ন থাকে!’’ বেশ ক্ষুব্ধ কণ্ঠে নার্গিস আরও বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার কন্যাশ্রী, রূপশ্রী চালু করেছে। দেখা যায়, টাকাটা উচ্চশিক্ষার জন্য ব্যবহার না করে মেয়েদের বিয়ের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। সরকার যদি কর্মসংস্থানের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করে, সেটাই এই সব প্রকল্পের চেয়ে ভাল হবে।’’

তাঁকে থামিয়ে দর্শনের খাদিজা খাতুন বলে ওঠেন, ‘‘আমি এ বার প্রথম ভোট দেব। জানি না ভোট দিতে পারব কিনা? আমি চাই মানুষ শান্তিতে নিজের ভোট নিজে দিন।’’

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

এর মধ্যেই ইতিহাসের পল্লবী মণ্ডল বলেন, ‘‘কন্যাশ্রীতে মেয়েরা উপকৃত হচ্ছে। ২৫ হাজার টাকা পাওয়ার পরে পরিবারকে তাঁরা বলতে পারেন, এখনই বিয়ে করব না, আরও পড়াশোনা করব।’’ তাঁকে থামিয়ে নার্গিস আবার বলে ওঠেন, ‘‘শুধু মেয়েদের জন্যই কেন প্রকল্প ঘোষণা করা হবে? অনেক গরিব ছেলে আছে তারাও টাকার অভাবে পড়াশোনা করতে পারে না। তাদের জন্য সরকার কিছু ভাবুক। তা ছাড়া, সকলে কন্যাশ্রীর উপকারিতার কথা বলছ, এক দিকে সরকার কন্যাশ্রীর টাকা দিয়ে মেয়েদের উচ্চশিক্ষার কথা বলছে, কিন্তু অন্য দিকে রূপশ্রীর টাকা দিয়ে বিয়ের জন্য তাদের উৎসাহিত করছে না কি?’’

আকাশ বলে ওঠেন, ‘‘হ্যাঁ, সরকারের এমন কিছু পদক্ষেপ করা উচিত যাতে ছেলে এবং মেয়ে উভয়ই লাভবান হতে পারে।’’ তাঁকে থামিয়ে ইতিহাসের আলমগির মোল্লা বলেন, ‘‘আসলে বাঙালি মেয়েরা শুধু এসএসসি পরীক্ষা নিয়ে পড়ে থাকেন। ইউপিএসসি, ডব্লিউবিসিএসের মতো পরীক্ষা নিয়ে ভাবা যায় না?’’ তিনি এ বার প্রসঙ্গান্তরে গিয়ে বলেন, ‘‘আমাদেরকেই ঠিক করতে হবে, আমরা কাকে ভোট দেব। আমরা যদি সঠিক মানুষকে নির্বাচন করতে পারি, তা হলে এলাকার উন্নয়নও ঠিকঠিক হবে।’’দর্শনের ছাত্রী করিমা খাতুন বলেন, ‘‘ইন্টারভিউ দেওয়ার পরে অনেকের কাছেই চাকরির জন্য টাকা চাওয়া হয়। টাকা দিতে না পারলে চাকরি হয় না। তা হলে এত কষ্ট করে পড়াশোনা করে কী লাভ? সরকারের এ ধরনের দুর্নীতি বন্ধ করা উচিত।’’

ইংরেজির রেজাউল মোল্লা বলেন, ‘‘কেন্দ্র যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বছরে ২ কোটি চাকরি দেবে তার কী হল? প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ সড়ক যোজনা প্রকল্পে কিছু রাস্তাঘাট ও প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্পে সাধারণ মানুষ ঘর ছাড়া আর কোনও ভাবে উপকৃত হননি। নোট বাতিলের ফলে বহু সাধারণ মানুষ সমস্যায় পড়েছেন। বলা হয়েছিল কালো টাকা দেশে ফিরিয়ে এনে প্রত্যেকের অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ করে টাকা দেওয়া হবে। কোথায় কী?’’

এর মধ্যে আয়েষা খাতুন বলে ওঠেন, ‘‘এমন অনেক সরকারি প্রকল্প আছে, যার সুবিধা গরিব মানুষ পান না। যাঁদের ঘর-শৌচালয় আছে তাঁদের আবার ঘর-শৌচালয় হচ্ছে। সরকারি প্রকল্পের সুযোগ যাতে গরিব মানুষ পান, তা সরকারের সুনিশ্চিত করা উচিত।’’নানা বিষয়ে তাঁদের মধ্যে মতানৈক্য হয়েছে। কিন্তু সকলেই ভাঙড়ের বেহাল রাস্তাঘাট এবং যানবাহনের সমস্যা নিয়ে সরব হলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন