পাস করে চাকরি পাব কি, প্রশ্ন পড়ুয়াদের

দেশের নানা সমস্যার কথা উঠে এল এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের কথায়। 

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৯ ০২:০৭
Share:

সরগরম: কলেজ ক্যাম্পাসে জমে উঠেছে আড্ডা। নিজস্ব চিত্র

গাছতলায় গোল হয়ে ঘিরে বসে-দাঁড়িয়ে আড্ডার ছন্দেই শুরু হয়েছিল আলোচনা। ক্রমশ তা গম্ভীর হয়ে উঠল। দেশের নানা সমস্যার কথা উঠে এল এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের কথায়।

Advertisement

কথা শুরু করলেন রানু মণ্ডল: আমার যেমন পড়াশোনার শেষ করে চাকরি-বাকরি করে বৃদ্ধ বাবা-মাকে দেখাশোনা করার দায়িত্ব আছে, সরকারেরও উচিত আমাদের মতো তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থানের দিকটা ভাবা। কত দিন ধরে এসএসসি পরীক্ষা হয়নি। তাতে কর্মসংস্থান বন্ধ রয়েছে।

একদম ঠিক কথা, বলে ওঠেন দেবশ্রী কপাট: এই প্রথম ভোট দেব। আমি তাকেই ভোট দেব যে আমাদের নিরাপত্তা, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে। এসএসসি পরীক্ষা নিয়ে, এটা ঠিক পরীক্ষা সময় মতো না হওয়ায় বেকার যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থান বন্ধ।

Advertisement

শুভজিৎ মণ্ডল: ভোটে গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার দিকটাও ভাবা উচিত। কেন্দ্র এবং রাজ্যে কিন্তু সেটা নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। গত পঞ্চায়েতে নিজের ভোটটুকুও দিতে পারিনি। এটা কেন হবে?

আর সেই সঙ্গে মেয়েদের নিরাপত্তার কথাটাও উড়িয়ে দিলে চলবে না, বললেন সাবর্ণী হালদার: আমিও প্রথম ভোট দেব। খুবই উত্তেজিত এ নিয়ে। যে-ই ক্ষমতায় আসুক, মেয়েদের নিরাপত্তা ও এলাকায় উন্নয়নে নজর দিক।

কথার সুর টেনে বলে উঠলেন সাথী প্রামাণিক: আমাদের মুখ্যমন্ত্রী কত রক্ষী নিয়ে ঘোরেন। কিন্তু আমাদের নিরাপত্তা কোথায়?

হাসির রোল ওঠে ছেলেমেয়েদের ভিড়ের মধ্যে থেকে। ফের আলোচনার দিক ঘোরালেন আকাশ কয়াল: বললেন, ভোটে ধর্ম নিয়ে হানাহানি বন্ধ করা দরকার। অনেক খুনখারাপি হচ্ছে। পুলিশের ভূমিকা ভাল নয়। গ্রামের স্কুলগুলিতে শিক্ষকের অভাব। ভোট চাইতে অনেকে আসবেন, যাঁদের আগে কখনও চোখেই দেখিনি। তাঁরা কি স্থানীয় সমস্যাগুলোর কথা বুঝবেন?

স্নেহাশিস বৈরাগী: ভোট তো এখন একটা উৎসব। নেতারা বাড়িতে আসবেন। এটা করে দেবেন, ওটা করে দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেবেন। সত্যি বলতে এ বার আর কিছু প্রতিশ্রুতির কথা শুনতে চাই না। কাজ চাই।

হ্যাঁ, কাজই হল শেষ কথা, বললেন জ্যোতিশঙ্কর ভান্ডারী। বললেন, এ রাজ্যে এখনও কোনও বিষয়ে পাস কোর্স নিয়ে পড়া ছাত্রছাত্রীদের জন্য মাস্টার ডিগ্রি পড়ার বিশ্ববিদ্যালয় নেই। ভিন রাজ্যে গিয়ে পড়তে হয়। যে দলই নির্বাচনে ক্ষমতায় আসুক, এটা নিয়ে ভাবা উচিত।

রণজিৎ মণ্ডল: এখন তো দেখি, ভোটের কাজে যারা যোগ দিচ্ছে, বেশির ভাগই পাড়ার গুন্ডা-মস্তান। তারাই করবে সমাজের উন্নয়ন?

দীপিকা মিস্ত্রি: কেন্দ্রীয় সরকার আমাদের অনেক কিছু দিয়েছে। তবে হ্যাঁ, আমাদের সময় মতো চাকরি পাওয়াটা সব থেকে জরুরি। আমি জয়নগরে থাকি। সেখানে লোডশেডিংয়ের সমস্যাটা কি কেউ মেটাতে পারেন?

সমস্যার আরও গভীরে গেলেন রামকৃষ্ণ প্রামাণিক: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে আরও শিক্ষক নিয়োগ করা না হলে সমূহ বিপদ। আমাদের দেশের সংবিধানে প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে বিধিনিষেধ নেই। ফলে চোর-গুন্ডারাও প্রার্থী হচ্ছে। তারাই ভোটে জিতে সমাজে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।

বিদিশা হালদার: এক দম ঠিক কথা। প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতার মাপকাঠি না থাকায় আখেরে রাজনীতিরই ক্ষতি হচ্ছে। গুন্ডা বদমাইশরা ভোটে দাঁড়ালে এলাকায় গন্ডগোল তো বাধবেই।

সুমন হালদার: কেন্দ্র, রাজ্য— দুই সরকারেরই কিছু প্রকল্প ভাল। কিন্তু এলাকার ছোটখাট সমস্যাগুলোর দিকেও নজর দেওয়া দরকার। জয়নগর শহরে আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জল সরবরাহটুকু এখনও হল না। এ দিকেও তো নজর পড়া উচিত নেতানেত্রীদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন