বিপজ্জনক: মিড-ডে মিলের রান্না চলে স্কুলে। তার জেরেই ধোঁয়ায় কালো স্কুলে বাড়ির দেওয়াল। ছবি: অরুণ লোধ
এ বার দক্ষিণ ২৪ পরগনার পড়ুয়ারা স্কুলেই পেতে চলেছে খাওয়ার ঘর।
যদিও এ ব্যবস্থা রাজ্যে প্রথম নয়। গত বছর জঙ্গলমহল আর চা-বাগানের প্রাথমিক ও হাই স্কুলগুলি এই সুবিধা পেয়েছিল। এ ছাড়াও বিভিন্ন জেলায় পড়ুয়াদের মিড-ডে মিলের জন্য খাওয়ার ঘর বরাদ্দ রয়েছে। কিন্তু এত দিন সব থেকে খারাপ অবস্থায় ছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রাথমিক ও হাই স্কুলগুলি। সেখানকার কোনও স্কুলে শ্রেণিকক্ষ বদলে যায় খাওয়ার ঘরে, কোথাও আবার অ্যাসবেস্টস বা ত্রিপলের ছাউনির নীচেই চলে রান্না, খাওয়া। পরিচ্ছন্নতার জন্য হাত ধোওয়ার পরিকাঠামোও নেই ওই জেলার অনেক স্কুলে।
অবশেষে সেই ছবি বদলাতে সচেষ্ট হয়েছে রাজ্যের স্কুল শিক্ষা দফতর। জেলার ২৯টি ব্লকের প্রাথমিক ও হাই স্কুলগুলিকে বেছে নেওয়া হয়েছে। বিষ্ণুপুর দু’নম্বর ব্লক পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত ও পরিবহণ দফতরের কর্মাধ্যক্ষ মজনু শেখ বলেন, “এই ব্লকের ৪৫টি স্কুল এই সুবিধা পাচ্ছে। ২০টি প্রাথমিক এবং ২৫টি হাই স্কুলে পড়ুয়াদের খাওয়ার ঘর করে দেওয়া হবে। বসে খাওয়ার বেঞ্চ ছাড়াও, হাত ধোওয়ার অভ্যাস তৈরি করতে বেসিনও থাকবে সেখানে।”
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদ সূত্রের খবর, প্রতিটি প্রাথমিক স্কুলের জন্য ৩ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা এবং হাই স্কুলের জন্য ৪ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা ধার্য করেছে রাজ্য স্কুল শিক্ষা দফতর। জেলা পরিষদের এক আধিকারিক জানান, এ কাজের জন্য দরপত্র জমা পড়ে গিয়েছে। এ বার কাজের বরাত দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে। মে মাসের মধ্যে ওই কাজ শেষ হবে।
যদিও একটা প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে। সরকারের তৈরি করে দেওয়া পরিকাঠামো কি আদৌ যথাযথ ভাবে ব্যবহার করা হবে?
কারণ ইতিমধ্যেই জেলা স্তর থেকে বিক্ষিপ্ত ভাবে মৌখিক অভিযোগ আসছে, সরকারের তৈরি করে দেওয়া মিড-ডে মিলের রান্নাঘর বেশ কিছু স্কুল ব্যবহার করছে অন্য কাজে। সম্প্রতি জেলা প্রশাসন থেকে ‘মহা পরিদর্শন অভিযান’ করা হয়েছিল, সেখানে বহু স্কুলে মিড-ডে মিলের রান্নাঘর ও খাওয়ার ঘরের দৈন্যদশা ফুটে উঠেছিল।
বিষ্ণুপুর দু’নম্বর ব্লকের গৃহশ্রী শিক্ষায়তন ফর গার্লস-এর এক অভিভাবক বলেন, “স্কুলের মিড-ডে মিলের রান্না হয় প্লাস্টিকের আচ্ছাদনের নীচে। আগুন লাগলে যে কোনও দিন বড় অঘটন ঘটে যেতে পারে।” মজনু শেখের দাবি, “এমন হওয়ার কথা নয়। ওই স্কুলে তো রান্নাঘর সরকার করে দিয়েছিল। এ রকম কিছু হয়ে থাকলে তা অন্যায়।” জেলা পরিষদের আধিকারিক বলেন, “প্রতিটি স্কুলের উপর আমাদের নজরদারি চালানোর পরিকাঠামো নেই। নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই দেখা হবে। কিন্তু সন্তানদের নিরাপত্তা ও নায্য অধিকারের কথা ভেবে অভিভাবকদেরও অভিযোগ দায়ের করতে হবে।”