তিনি মারা গিয়েছেন তিন বছর আগে। এতদিনে পেনশনের চিঠি এল তাঁর বাড়িতে!
তিনি— অশোকনগর হাইস্কুলের শিক্ষক অচ্যুতানন্দ বিশ্বাস। স্কুলে যোগ দিয়েছিলেন ১৯৬৬ সালে। নানা অভিযোগে স্কুল থেকে সাসপেন্ড হন ১৯৮৩-তে। তার পর থেকে আমৃত্যু তিনি স্কুলে পুনর্বহাল এবং পেনশনের জন্য আইনি লড়াই লড়ে গিয়েছেন। মারা যান ২০১৪ সালের ২২ এপ্রিল। জীবদ্দশায় কাজ ফিরে পাননি। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরেও পেনশন জোটেনি কপালে। তাই এতদিন পরে, গত ১৯ জুলাই অশোকনগরের ২ নম্বর স্কিম এলাকায় তাঁর বাড়িতে যখন পেনশনের চিঠি আসে, দেখে থ পরিবারের লোকেরা। অবশ্য তাঁরা মনে করছেন, এতদিনে নৈতিক জয় পেলেন অচ্যুতানন্দবাবু।
অশোকনগরের বিধায়ক ধীমান রায় বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে মামলা-মোকদ্দমা চলায় অচ্যুতানন্দবাবুর পেনশন চালু হতে দেরি হল। তবে, তাঁর সাসপেন্ড হওয়ার পিছনে সিপিএমের কারসাজি ছিল। সেই কারণে শীর্ষ আদালতের নির্দেশের পরেও পেনশন পাননি। উনি কংগ্রেস করতেন। এটাই ছিল তাঁর অপরাধ।’’ এই অভিযোগ মানেননি অশোকনগরের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক সত্যসেবী কর। তাঁর দাবি, ‘‘ওঁর পেনশন চালু হওয়ায় আমি খুশি। ওই সময় এলাকার বহু স্কুলে অনেক শিক্ষকই কংগ্রেস করতেন। কই তাঁদের তো কোনও সমস্যায় পড়তে হয়নি! মিথ্যা অভিযোগ তোলা হচ্ছে।’’
কোনও রাজনৈতিক কাজিয়ার মধ্যে যেতে চাইছেন না প্রয়াত শিক্ষকের ছেলে মৃত্যুঞ্জয়বাবু। তিনি বলেন, ‘‘বাবা প্রায় ৩৪ বছর যে জন্য লড়াই করেছেন তাতে অবশেষে জয় এল। বাবার কথা খুব মনে পড়ছে।’’
অচ্যুতানন্দ স্কুলে ইংরেজি ও ইতিহাস পড়াতেন। তাঁর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, যে সময়ে তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়েছিল সেই সময় স্কুল পরিচালনার ভার ছিল প্রশাসকের হাতে। ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন অচ্যুতানন্দবাবু। হাইকোর্ট তাঁকে স্কুলে পুর্নবহালের নির্দেশ দেয়। সেই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে যান স্কুল কর্তৃপক্ষ। সেখানেও একই রায় দেওয়া হয়। কিন্তু অচ্যুতানন্দবাবুকে স্কুলে যোগ দিতে দেওয়া হয়নি এবং তাঁকে মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয় বলে অভিযোগ। ১৯৯৯ সালের জুলাই মাসে তিনি অবসর নেন। পরে বিষয়টি সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। ২০০০ সালে সুপ্রিম কোর্টও ওই শিক্ষককে যাবতীয় বকেয়া মেটানো এবং তাঁর পেনশন চালু করার নির্দেশ দেয় বলে ওই পরিবারের দাবি। এর পরে অচ্যুতানন্দবাবু বকেয়া পেলেও এতদিন পেনশন পাননি।
ওই পেনশন চালুর জন্য চলতি বছরের জানুয়ারিতে অচ্যুতানন্দবাবুর পরিবারের লোকজন এবং তাঁর প্রাক্তন ছাত্র প্রবীরকুমার দে বিধায়ক ধীমানবাবুর সঙ্গে দেখা করেন। ধীমানবাবু উদ্যোগী হন। শিক্ষকের পরিবারের লোকজন দেখা করেন জেলা স্কুল পরিদর্শকের সঙ্গে। এরপরই ১৯ জুলাই শিক্ষা দফতরের নির্দিষ্ট বিভাগ (ডিরেক্টর অব পেনশন প্রভিডেন্ট ফান্ড অ্যান্ড গ্রুপ ইনস্যুরেন্স) থেকে পেনশন চালু হওয়ার চিঠি আসে অচ্যুতানন্দবাবুর বাড়িতে। মৃত্যুঞ্জয়বাবু বলেন, ‘‘ওই চিঠিতে ১৯৯৯ সালের অগস্ট মাস থেকে বাবার পেনশন চালু হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে। দীর্ঘদিনের লড়াই শেষ হল।’’