এ বার মাকে রড দিয়ে পেটাল ছেলে, থানায় গিয়ে ছেড়ে দেওয়ার আর্জি

বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে অশোকনগর থানার কল্যাণগড়ের ষাটফুট এলাকায়। রাতেই পুলিশ অভিযুক্ত ছেলেকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। পরে গ্রেফতার করে তাকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

অশোকনগর শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৮ ০২:৩৭
Share:

লক্ষ্মী মিত্র।

পান্তাভাত খেতে দেওয়ার ‘অপরাধে’ বৃদ্ধা মাকে বেধড়ক চড়-ঘুষি মারল ছেলে। লোহার রড নিয়েও চড়াও হয়েছিল সে। রডের আঘাতে বৃদ্ধার ডান হাতের বেশ কিছুটা অংশ কেটে গিয়েছে।

Advertisement

বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে অশোকনগর থানার কল্যাণগড়ের ষাটফুট এলাকায়। রাতেই পুলিশ অভিযুক্ত ছেলেকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। পরে গ্রেফতার করে তাকে।

ছেলের হাতে প্রহৃত হওয়ার কথা স্বীকার করলেও বৃদ্ধা ছেলের নামে থানায় অভিযোগ করতে রাজি নন। উল্টে, শুক্রবার সকালে থানায় গিয়ে ওসি আশিস দলুইয়ের কাছে ছেলেকে ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি। পুলিশ অবশ্য ছেলেকে ছাড়েনি।

Advertisement

বুধবার রাতেও অশোকনগর থানার ওসি একই ঘটনার সাক্ষী হয়েছিলেন।

বিল্ডিংমোড় এলাকার বাসিন্দা বৃদ্ধ মানিকলাল বিশ্বাস থানায় গিয়ে ছেলেকে ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। ছেলে প্রদীপের বিরুদ্ধে বাবাকে চড়-থাপ্পড় মারার অভিযোগ ছিল। পুলিশ প্রদীপকেও ছাড়েনি। পরে সে আদালতে জামিন পায়।

পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবারও পুলিশ বৃদ্ধা লক্ষ্মী মিত্রের অনুরোধ রাখেনি। ছেলের বিরুদ্ধে বৃদ্ধা কোনও অভিযোগ না করলেও পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে (সুয়ো মোটো) শিবশঙ্কর মিত্র নামে তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে মদ খেয়ে ঝামেলা বাধানোর মামলা দায়ের করেছে।

ছেলের হাতে মার খেয়ে রক্তাক্ত হয়েও লক্ষ্মী কেন পুলিশের কাছে অভিযোগ করলেন না?

শুক্রবার নিজের বাড়িতে বসে বছর পঁয়ষট্টির মহিলা বলেন, ‘‘ছেলে ছাড়া আমাদের তো আর কেউ দেখার নেই। ছেলেকে আর একটা সুযোগ দিতে চাই।’’ একই যুক্তি দিয়েছিলেন মানিকলাল ও তাঁর স্ত্রীও।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শিবশঙ্কর গাড়ি চালক। মাস তিনেক আগে তার স্ত্রী মারা গিয়েছেন। মা ছাড়াও বাড়িতে আছে দুই মেয়ে। পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি প্রায় দিনই মদ খেয়ে বাড়ি ফিরে শিবশঙ্কর অশান্তি করত। মা-মেয়েদের মারধর করত।

বৃহস্পতিবার বিকেলে বাড়ি ফিরে মায়ের কাছে ভাত খেতে চায়। লক্ষ্মী পান্তাভাত দিতে যান। তাতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে শিবশঙ্কর। গালিগালাজ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।

শিবশঙ্করের স্ত্রীর মৃত্যুর পরে শাশুড়ি প্রতিমা হালদার মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে এসে থাকেন। তাঁর কথায়, ‘‘নাতনিদের ওর বাবার অত্যাচারের হাত থেকে ঠেকাতে আমি নিজের বাড়িতে তালা দিয়ে এখানে থাকছি।’’

প্রতিমা বলেন, ‘‘জামাই বিকেলে বাড়ি ফিরবে, সেটা জানতেন না লক্ষ্মী। বাড়িতে প্রচুর জল দেওয়া ভাত ছিল। পুজোর প্রসাদও ছিল বাড়িতে। তাই গরম ভাত আর উনি রান্না করেননি। ছেলেকে বলেছিলেন, পান্তা ভাতের সঙ্গে আলু ভেজে দেবেন। কিন্তু জামাই তাতে কান দেয়নি।’’

অভিযোগ, রাত ১০টা নাগাদ বাড়ি ফিরে শিবশঙ্কর ফের ভাত নিয়ে অশান্তি শুরু করে। মাকে চড়-ঘুষি মারে। রড দিয়েও মারার চেষ্টা করে। লক্ষ্মীর চিৎকারে পাড়া-পড়শিরা ছুটে আসেন। তাঁরা শঙ্করকে আটকে পুলিশে খবর দেন। লক্ষ্মীকে অশোকনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ।

লক্ষ্মীর এক নাতনির কথায়, ‘‘মা মারা যাওয়ার পর থেকে বাবার অত্যাচার আরও বেড়েছে। আমরা চাই, বাবা ভাল হয়ে যাক।’’

ছেলেদের হাতে বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা মার খেয়ে, অপমানিত হয়েও যে ভাবে ছেলেদের স্নেহ দিয়ে আড়াল করতে চাইছেন, তাতে বিস্মিত সকলে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন