মায়ের সঙ্গে সুজিত। ছবি: সামসুল হুদা
নিজেদের নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থা। স্ত্রী ও দু’ছেলে নিয়ে অভাবের সংসার ভাঙড়ের কাশীপুর থানার পোলেরহাটের কামারবাড়ির আলম মোল্লার। তবুও রাস্তায় মানসিক ভারসাম্যহীন এক নাবালককে ঘুরতে দেখে তাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন আলম। পরে তাকে তার পরিবারের হাতে তুলেও দেন।
৫ জুন দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর থানার মায়াহাউড়ি গ্রামের বাসিন্দা বাবুরাম মণ্ডলের বড় ছেলে বছরবারোর সুজিত মণ্ডল বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। সে মানসিক ভারসাম্যহীন। বাবুরামের এক ছেলে, দুই মেয়ে। সুজিত বাড়ি থেকে বার হওয়ার পর রিকশায় ধাক্কায় মাটিতে পড়ে যায়। বাড়ির ঠিকানা জানতে চাইলে সে ‘জয়নগর’ বলায় লোকজন তাকে বাসে তুলে দেয়। তবুও সুজিত ভুল পথে চলে যায় কসবায়। সেখানে লোকজন তাকে ভাঙড়ের জয়নগর ভেবে ভাঙড়ের বাসে তুলে দেন। সে তখন চলে আসে ভাঙড়ের পোলেরহাটের কামারবাড়ির।
শুক্রবার বাজার থেকে ফেরার পথে আলম দেখতে পান একটি ছেলে খিদের জ্বালায় কাঁদছে। আলম তাঁকে মুড়ি কিনে দিয়ে নিজের বাড়ি নিয়ে যান। ছেলেটির সঙ্গে কথা বলতে বলতেই আলম এবং তাঁর স্ত্রী বুঝতে পারেন, সুজিত মানসিক ভারসাম্যহীন। আলমের স্ত্রী সাহানারা ছেলেটিকে খেতে দেন। তার ময়লা জামা-কাপড় বদলে তাকে নতুন পোশাকও দেন। তাঁরা বাড়ি কোথায় জানতে চাইলে সুজিত শুধু বলতে পারে, জয়নগর থানা। সেই মতো আলম ওই থানার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিন্তু থানা থেকে তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হয়, সঠিক ঠিকানা না পেলে তাদের পক্ষে সুজিতের পরিবারকে খুঁজে দেওয়া সম্ভব নয়। এর মধ্যে আলম তার সমস্ত পরিচিত ও বন্ধুদেরও বিষয়টি জানান।
কামারবাড়ি এলাকার এক ব্যক্তি জয়নগর এলাকায় অটো চালান। তিনিই ওই এলাকায় সুজিতের পোস্টার দেখে আলমকে জানান। সেই সূত্র ধরে আলম সুজিতের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সুজিতের মা সরমা মণ্ডল ও দাদু সুজিতকে নিতে শনিবার কামারবাড়ি আসেন। সেখানে তাঁরা আলম-সহ গ্রামবাসীদের সুজিতের ছবি ও তার নিখোঁজ ডায়েরির প্রতিলিপি দেখালে আলমরা সুজিতকে তার মা ও দাদুর হাতে তুলে দেন। সুজিতও মা-দাদুকে পেয়ে আনন্দিত হয়।
সুজিতের মা সরমা মণ্ডল বলেন, ‘‘ও আমাদের পরিবারের একমাত্র ছেলে। ওর মাথার ঠিক নেই। আমরা খবর নিয়ে জানতে পারি, রাস্তার লোকজন ওকে ভুল করে বাসে তুলে দেয়। তার পর থেকে বিভিন্ন জায়গায় ওকে খুঁজি। থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করি। শেষে আলমের মারফত সুজিতকে ফিরে পেলাম। আলম ও তাঁর পরিবার যে ভাবে আমার ছেলেকে আদরযত্ন করে আমাদের হাতে তুলে দিলেন, তা আমরা কোনও দিন ভুলব না।’’
আলম মোল্লা ও সাহানারা বিবি বলেন, ‘‘ছেলেটিকে দেখে খুব মায়া হয়েছিল। কী করে ওকে পরিবারের হাতে তুলে দেব, বুঝতে পারছিলাম না। পরে ওর পরিবারের খোঁজ পাই। শেষ পর্যন্ত সুজিতকে তার পরিবারের হাতে তুলে দিতে পেরে ভীষণ ভাল লাগছে।’’