ভিনদেশি দাদার হাত ধরে কেঁদে ফেললেন আসমা

না আছে দেশের সম্পর্ক, না আছে ধর্মের। পরিবারটিকে তিনি চিনেছেনই মাত্র কয়েক ঘণ্টা। তবু স্বামী-পুত্র হারা আসমার সঙ্গে তিনি রইলেন শেষ পর্যন্ত। যতক্ষণ না ছেলের কফিন বন্দি দেহ নিয়ে মা টপকে যাচ্ছেন কাঁটাতারের বেড়া।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

পেট্রাপোল শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৭ ০২:২৯
Share:

বাঁ দিকে, রামেশ্বর রায়, ডান দিকে, আসমা বিবি। নিজস্ব চিত্র

না আছে দেশের সম্পর্ক, না আছে ধর্মের। পরিবারটিকে তিনি চিনেছেনই মাত্র কয়েক ঘণ্টা। তবু স্বামী-পুত্র হারা আসমার সঙ্গে তিনি রইলেন শেষ পর্যন্ত। যতক্ষণ না ছেলের কফিন বন্দি দেহ নিয়ে মা টপকে যাচ্ছেন কাঁটাতারের বেড়া।

Advertisement

বাংলাদেশের এক মুসলিম পরিবারের সঙ্গে এ ভাবেই সম্পর্ক গড়ে ফেললেন ভারতের রামেশ্বর রায়।

বছর আটত্রিশের রামেশ্বরের বাড়ি বিহারের জালালপুরে। বাড়িতে স্ত্রী ও দু’টি সন্তান রয়েছে। কয়েক বছর ধরে তিনি পেট্রাপোল বন্দর এলাকায় সুলভ শৌচালয় দেখভালের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। সোমবার ওই শৌচালয়েই ঢুকে অসুস্থ হয়ে পড়েন আসমার স্বামী মহম্মদ রফিক। আসমার চিৎকার শুনে রামেশ্বর ছুটে গিয়ে রফিককে ধরে তুলেছিলেন ভ্যানে। নিয়ে গিয়েছিলেন বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে। রামেশ্বরের কাছে ওই সময় কোনও টাকা ছিল না। দ্রুত এক ব্যক্তির কাছ থেকে দু’শো টাকা ধার নিয়ে আসমার হাতে দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। রামেশ্বর বলেন, ‘‘কী এমন আর করেছি। যদি আসমার স্বামীকে বাঁচাতে পারতাম তা হলে ভাল লাগত।’’ তবে ভিনদেশি বোনের ব্যবহার তিনি মুগ্ধ।

Advertisement

ঢাকার গাজিপুরে সম্পন্ন চাষি ছিলেন মহম্মদ রফিক (৪৫)। কিন্তু পনেরো বছরের ছেলে আসাদ মণ্ডলের ক্যানসার ধরা পড়়ার পর থেকে টাকা-পয়সা তলানিতে এসে ঠেকেছিল। সে দেশে চিকিৎসায় বহু টাকা ব্যয় করে শেষে জমিজমা বন্ধক রেখে ছেলেকে নিয়ে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসেন। রবিবার সেখানেই মারা যায় আসাদ।

মঙ্গলবার সকাল ৮টায় পেট্রাপোল সীমান্ত থেকে ছেলের কফিনবন্দি দেহ নিয়ে যাওয়ার সময়ও তাঁর পাশে ছিলেন রামেশ্বর। স্বামী রফিকের দেহ তখনও বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালের মর্গে। স্বামীর দেহ এ পারে রেখে ছেলের কফিন নিয়ে রওনা দেবেন নিজের দেশে। তখনও পাশে রয়েছেন তাঁর ভিনদেশি দাদা রামেশ্বর। যাওয়ার আগে দাদার হাত ধরে হাউ হাউ করে কেঁদে ফেললেন আসমা। বললেন, ‘‘দাদা তোমার কথা জীবনে ভুলতে পারবো না। একজন অপরিচিত বিদেশি বোনের জন্য আপনি যা করলেন মনে রাখব।’’ রামেশ্বরের চোখেও তখন একরাশ জল। যাওয়ার আগে দাদাকে বাড়িতে যাওয়ার অনুরোধও করেন আসমা। দাদাও কথা দেন সুযোগ পেলে নিশ্চয়ই যাবেন বোনের ভিটেতে। এরপরই ছেলের দেহ নিয়ে আসমা পেট্রাপোল থেকে ভ্যানে এগিয়ে গেলেন জের দেশের দিকে। বেনাপোলে দাঁড়ানো ছিল অ্যাম্বুল্যান্স। কফিন তুলে দেওয়া হল তাতে। বোন রওনা হলেন নিজের দেশে। তখনও হাত নেড়ে চলেছেন রামেশ্বর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন