marriage

হাঁড়ি-হেঁশেল ঠেলছে কন্যা, শ্রী-হীন প্রকল্প

স্কুলের এক শিক্ষিকা জানান, অনেক ছাত্রীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। জানতে পেরে বাড়ি থেকে অন্যত্র বিয়ের ব্যবস্থা করা হয়।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র  

গোপালনগর শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২১ ০৯:৩৩
Share:

প্রতীকী ছবি।

স্কুল খোলার পরে বেশ কয়েকদিন কেটে গেল। গোপালনগরের নহাটা সারদা সুন্দরী বালিকা বিদ্যামন্দিরে অনেক ছাত্রীই ক্লাসে আসছে না।

Advertisement

খোঁজখবর নিতে শুরু করেন শিক্ষিকেরা। জানা যায়, করোনা ও লকডাউন পরিস্থিতিতে ৩৭ জন নাবালিকা ছাত্রীর বিয়ে হয়ে গিয়েছে। আরও অনেকে নানা কারণে অনুপস্থিত।

প্রধান শিক্ষিকা শম্পা পাল জানান, স্কুল খোলার পরে দেখা যায়, নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীদের মধ্যে ৭৪ জন স্কুলে আসছে না। অনুপস্থিতির কারণ জানতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ নেওয়া শুরু হয়। দেখা যায়, অনেকেরই বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন অভিভাবকেরা। অন্য এলাকায় শ্বশুরবাড়িতে চলে গিয়েছে তাদের অনেকে। কারও হয় তো একই এলাকায় বিয়ে হয়েছে, কিন্তু শ্বশুরবাড়ির মত না থাকায় আর পড়াশোনায় ফিরবে না মেয়েটি। হাঁড়ি-হেঁসেল নিয়েই ব্যস্ত ছোট ছোট কোমল হাতগুলি। কোনও কোনও ছাত্রী তো ইতিমধ্যে মা হয়ে গিয়েছে বলেও জানতে পারেন শিক্ষিকারা। কেউ কেউ আবার অন্তঃসত্ত্বা। এ দিকে, কন্যাশ্রী প্রকল্পের টাকা তো তুলতে হবে, তাই বহু অভিভাবক মেয়েদের বিয়ের তথ্য গোপন করতে চাইছেন বলেও জানতে পেরেছে স্কুল।

Advertisement

স্কুলের এক শিক্ষিকা জানান, অনেক ছাত্রীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। জানতে পেরে বাড়ি থেকে অন্যত্র বিয়ের ব্যবস্থা করা হয়। অপছন্দের পাত্রের বদলে প্রেমিকেই পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছে কেউ কেউ। ওই শিক্ষিকার কথায়, ‘‘এমন নয় যে এই মেয়েরা সকলে বিয়ে করতে চেয়েছিল। কিন্তু বাড়ি থেকে অন্যত্র বিয়ের তোড়জোড় শুরু করায় বাধ্য হয়ে প্রেমিককেই জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছে।’’

অনেক পরিবারে অবশ্য অভিভাবকেরাই নাবালিকা মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। তাঁদের যুক্তি, আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। করোনা পরিস্থিতিতে কাজকর্ম বন্ধ ছিল। রুজিরোজগার কমেছিল। ‘ভাল পাত্র’ পেয়ে তাই আর দেরি করতে চাননি।

শিক্ষকেরা জানান, তাঁরা চেষ্টা করছেন, বিবাহিত মেয়েদের স্কুলে ফিরিয়ে আনতে। প্রধান শিক্ষিকা বলেন, ‘‘৮ জন বিবাহিত ছাত্রী জানিয়েছে, তারা পড়াশোনা করতে চায়। আমরা সহযোগিতা করছি।’’ তবে বাকিদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শিক্ষিকারা চিন্তিত। কারণ, এদের অনেকেই এলাকার বাইরে চলে গিয়েছে।

স্কুল বন্ধ থাকায় ছাত্রীদের বিয়ে হয়ে গেলেও বিষয়টি জানা যায়নি বলে জানাচ্ছে স্কুল। অনলাইন ক্লাসে বেশিরভাগ ছাত্রী হাজির থাকত না। স্কুলের কন্যাশ্রী ক্লাবের মেয়েরা নাবালিকার বিয়ে আটকাতে ভাল কাজ করছিল। কিন্তু সে সবও এতদিন বন্ধ ছিল। এখন আবার ছাত্রীদের বিয়ের খবর পাচ্ছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।

১৩ ডিসেম্বর একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীর বিয়ের আয়োজন করে পরিবার। এক ছাত্রীর কাছ থেকে খবর পেয়ে প্রধান শিক্ষিকা অভিভাবকদের ডেকে বিয়ে বন্ধ করার অনুরোধ করেছেন। আইনি পদক্ষেপ করার কথাও বলা হয়েছে।

বনগাঁ মহকুমার অতিরিক্ত জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক দিব্যেন্দু পাল বলেন, ‘‘স্কুল কর্তৃপক্ষের উচিত, বিবাহিতা ছাত্রীদের তালিকা প্রশাসনকে দেওয়া। তা হলে প্রশাসন তদন্ত করে পদক্ষেপ করতে পারবে।’’

সীমান্ত এলাকায় ছাত্রীদের সত্যিই বিয়ে হয়েছে, নাকি পাচার হয়ে গিয়েছে, সে চিন্তাও আছে বলে জানান তিনি। প্রশাসন ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশ মনে করছেন, কন্যাশ্রী প্রকল্পে ছাত্রীরা বছরে ১ হাজার টাকা পায়। সেটা তাদের পড়ার আগ্রহ ধরে রাখার ক্ষেত্রে যথেষ্ট নয়। অষ্টম শ্রেণি থেকে এই টাকা পাওয়া যায়। এক শিক্ষিকার কথায়, ‘‘৫০০-১০০০ হাজার টাকা ছাত্রীদের কাছে কিছুই নয়। ছাত্রীদের অ্যাকাউন্টে ওই টাকা ঢোকার কথা অনেক সময়ে অভিভাবকেরা জানতেও পারেন না।’’

এই প্রকল্পে আঠারো বছর বয়স হলে এবং ছাত্রী শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত থাকলে এককালীন ২৫ হাজার টাকা পাওয়া যায়। সে কারণে মেয়ের বিয়ে হয়ে গেলেও অভিভাবকেরা অনেকে টাকার জন্য তথ্য গোপন করছেন বলে জানা যাচ্ছে। এমনকী, অনেকে শাখা-সিঁদুর না পরেই স্কুলে আসছে বলে জানতে পারছে স্কুলগুলি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন