সিলিকোসিসে আক্রান্ত মিনাখাঁর গ্রামের বহু মানুষ

পর পর মৃত্যুতেও উদাসীন প্রশাসন

রাজ্যে সিলিকোসিসে আক্রান্ত হয়ে মিনাখাঁর গ্রামে একের পর এক মৃত্যুর ঘটনায় রাজ্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলি দায়িত্ব অস্বীকার করছে বলে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে অভিযোগ জমা পড়ল।

Advertisement

সামসুল হুদা

মিনাখাঁ শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৭ ০২:০০
Share:

পাশে: আক্রান্ত পরিবারকে দেওয়া হচ্ছে চাল-ডাল-ওষুধ। নিজস্ব চিত্র

রাজ্যে সিলিকোসিসে আক্রান্ত হয়ে মিনাখাঁর গ্রামে একের পর এক মৃত্যুর ঘটনায় রাজ্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলি দায়িত্ব অস্বীকার করছে বলে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে অভিযোগ জমা পড়ল।

Advertisement

আয়লা পরবর্তী সময়ে পেটের তাগিদে আসানসোল, জামুড়িয়া, রানিগঞ্জ, কুলটি এলাকায় পাথর খাদানে কাজ করতে গিয়ে সিলিকোসিসে আক্রান্ত হয়েছিলেন বহু মানুষ। ওই রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় রিপোর্ট দিতে রাজ্যকে নির্দেশ দেয় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। কিন্তু রাজ্য সরকারের রিপোর্টের উপরে আস্থা রাখতে না পেরে তারা আর একটি রিপোর্ট জমা দিতে বলে পরিবেশ কর্মী বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়কে। তিনি আক্রান্ত গ্রামগুলি ঘুরে কমিশনকে শুক্রবারই একটি রিপোর্ট জমা দেন। রিপোর্টে বিশ্বজিৎবাবু জানিয়েছেন, রাজ্য পরিবেশ দফতর, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ এবং শ্রম দফতরের নির্দিষ্ট দায়িত্ব থাকা সত্ত্বেও তারা আক্রান্ত প্রান্তিক পরিবারগুলির পাশে দাঁড়ায়নি।

বিশ্বজিৎবাবু বলেন, ‘‘সিলিকোসিসে আক্রান্ত হয়ে এই সব এলাকার গরিব, অসহায় মানুষগুলি দিন দিন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন। অথচ সরকারে ও সংশ্লিষ্ট দফতরগুলি উদাসীন। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নির্দেশে আমি আক্রান্ত এলাকায় ঘুরে সেই রিপোর্ট জমা দিয়েছি।’’

Advertisement

উত্তর ২৪ পরগনার মিনাখাঁ ব্লকের গোয়ালদহ, দেবীতলা-সহ বিভিন্ন এলাকায় সিলিকোসিসে ১৮৯ জন আক্রান্তের মধ্যে এখনও পর্যন্ত ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২০১২ সাল থেকে মৃত্যু-মিছিল চললেও অভিযোগ, আক্রান্তদের পাশে দাঁড়ায়নি রাজ্য সরকার। আক্রান্ত পরিবারগুলির পাশে দাঁড়াতে শনিবার সবুজের অভিযান, পরিবেশ কর্মী ও বিজ্ঞান মঞ্চের পক্ষ থেকে আক্রান্ত ও মৃত পরিবারগুলির হাতে চাল, ডাল, আলু ও নানা রকম ওষুধ তুলে দেওয়া হয়। এ দিন মিনাখাঁর বিডিও সৈয়দ আহম্মেদও এলাকায় এসে আক্রান্ত পরিবারগুলির সঙ্গে কথা বলেছেন এ দিন।

সিলিকোসিসে আক্রান্ত কারিমুল্লা মোল্লা বলেন, ‘‘গত বছর আমার ভাই নাজিম আলি মোল্লা মারা যায়। আমি নিজেও সিলিকোসিসে আক্রান্ত। যে কোনও মুহূর্তে মারা যেতে পারি। অথচ এখনও পর্যন্ত কোনও সরকারি সাহায্য পাইনি। বাইরের কিছু সংস্থার কিছু সাহায্য অবশ্য এসেছে।’’

আক্রান্ত সফির আলি পাইক বলেন, ‘‘পরিবারের কথা ভেবে বাইরে কাজে গিয়েছিলাম। কিন্তু এখনও অসুস্থ। কোনও কাজ করতে পারি না। ছোট ছোট দুই বাচ্চা। স্ত্রী কোনও রকমে কাজ করে সংসার চালাচ্ছে। আমার চিকিৎসার টাকা পর্যন্ত জোগাড় করা যাচ্ছে না। বাড়িটা প্রায় ভেঙে পড়ছে। সরকারি সুবিধা আমরা পাচ্ছি না।’’

গত ৪ মার্চ সিলিকোসিসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান সইদুল মোল্লা। তাঁর বাবা হামিদ মোল্লা বলেন, ‘‘চোখের সামনে ছেলেটা মারা গেল। কিছু করতে পারলাম না। আমার বয়স হয়েছে। সংসার চালাব কী করে? এখনও পর্যন্ত সরকারি কোনও অনুদান পেলাম না।’’

আক্রান্ত ও মৃত পরিবারগুলির আক্ষেপ, দিনের পর দিন মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। অথচ সরকারের হেলদোল নেই। আক্রান্ত পরিবারগুলির অনেকের বিপিএল কার্ড নেই। প্রায় কেউ-ই ২ টাকা কেজি দরে চাল পর্যন্ত পাচ্ছেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন