এখানেই হওয়ার কথা বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
মতুয়াদের জন্য আরও একবার প্রকল্পের ঝুলি উপুড় করলেন মুখ্যমন্ত্রী।
মতুয়াদের ধর্মগুরু হরিচাঁদ গুরুচাঁদ ঠাকুরের নামে বিশ্ববিদ্যালয়, ঠাকুরনগরে মতুয়া ঠাকুরবাড়িতে দু’টি আধুনিক গেট তৈরি, গোটা এলাকা আলো দিয়ে সাজানো, ঠাকুরবাড়ির পুকুর (মতুয়া ভক্তদের কাছে যা কামনা সাগর নামে পরিচিত) সংস্কার ও সৌন্দর্যায়ন-সহ একগুচ্ছ প্রকল্পের ঘোষণা করেছেন তিনি।
মতুয়া মহাসঙ্ঘের প্রধান উপদেষ্টা বীণাপানিদেবীর (বড়মা) জন্মশতবর্ষে তাঁকে শ্রদ্ধা জানানোর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে গাইঘাটার ঠাকুরনগরে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের তরফে আয়োজিত ওই সভামঞ্চ থেকে এ দিন মতুয়া ঠাকুরবাড়ি ও মতুয়াদের উন্নয়নে একাধিক প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তাঁর কথায়, ‘‘আগেই আমরা প্রমথরঞ্জন ঠাকুরের (বড়মার স্বামী ও ঠাকুরবাড়ির প্রতিষ্ঠাতা) নামে কলেজ করেছি। এ বার হরিচাঁদ গুরুচাঁদ ঠাকুরের নামে বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করা হচ্ছে।’’ মুখ্যমন্ত্রী জানান, বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির জন্য চাঁদপাড়ায় ৮.৮ একর জমি দেখা হয়েছে। কৃষি দফতর থেকে ওই জমি নিয়ে শিক্ষা দফতরকে দেওয়ার কাজও সারা।
বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির কাজ দ্রুত শেষ করা হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক অন্তরা আচার্যকে মঞ্চ থেকেই নির্দেশ দিয়েছেন, আজই ওই জমিতে বোর্ড লাগিয়ে দিতে। মমতার কথায়, ‘‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওই বিশ্ববিদ্যালয়টি চালু করা হবে। ভবন তৈরির কাজটাই শুধু বাকি।’’
মতুয়া উন্নয়ন পর্ষদ গঠনের কাজ আগেই হয়ে গিয়েছে। এ দিন মতুয়াসঙ্ঘ বিকাশ পর্ষদ তৈরির কথা জানান মমতা। মুখ্যমন্ত্রীর লক্ষ্য, ঠাকুরনগরকে ‘আন্তর্জাতিক নগরী’ করার। যাতে পৃথিবীর ইতিহাসে ঠাকুরনগর ঐতিহাসিক স্থান হিসাবে গণ্য হয়। মমতা জানান, সে জন্য ঠাকুরনগরকে আরও সাজিয়ে তোলা হবে।
মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের ঘোষণায় সভায় আসা মতুয়ারা খুশি। মতুয়া ধর্ম প্রচারক রবি হালদার বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী ছাড়া ঠাকুরবাড়ি ও মতুয়াদের এত উন্নয়ন আর কেউ করেননি। গুরুচাঁদ ঠাকুর ছিলেন প্রকৃত শিক্ষাবিদ। তিনি বহু স্কুল তৈরি করেছিলেন।’’
অতীতেও মমতা ঠাকুরবাড়ির আদলে ঠাকুরনগর স্টেশনটি তৈরি করেছেন। স্টেশন থেকে ঠাকুরবাড়ি আসার জন্য নতুন রাস্তা, কামনা সাগর সংস্কার ও বাঁধানোর কাজ হয়েছে। প্রথমরঞ্জন ঠাকুরের নামে কলেজ করেছেন।
বাগদায় হরিগুরুচাঁদের নামে আইটি কলেজ হয়েছে। জেলা তৃণমূল সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘মতুয়াদের উন্নয়নের কথা মুখ্যমন্ত্রী ছাড়া আর কেউ ভাবেননি।’’
অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি তথা সাংসদ মমতা ঠাকুর বলেন, ‘‘বাম আমলে চাঁদপাড়ায় হরিচাঁদ গুরুচাঁদ ঠাকুরের নামে একটি কলেজের শিলান্যাস হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে হয়নি। এ বার সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে। মতুয়াদের মধ্যে সমস্ত ধর্মের লোকজন আছেন। এর ফলে সকলেই উপকৃত হবেন।’’
বিরোধীরা অবশ্য এ সব ঘোষণায় কটাক্ষই করছেন। বিজেপির জেলা সভাপতি প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মতুয়াদের নিয়ে সস্তা রাজনীতি করছেন মুখ্যমন্ত্রী।’’ সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি শান্তনু ঠাকুর বলেন, ‘‘এখন ঝুড়ি ভর্তি করে মতুয়াদের উন্নয়নের কথা বলছেন মুখ্যমন্ত্রী। গত সাত বছর কোথায় ছিলেন?’’