পাথরপ্রতিমায় বেহাল নদীবঁাধ

বর্ষায় গ্রাম প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা

বর্ষা দোরগোড়ায়। অথচ, এ বারেও বর্ষার আগে নদীনালা ঘেরা পাথরপ্রতিমা ব্লকের বেশ কিছু বিপজ্জনক বাঁধ এখনও সংস্কার হল না। ফলে, বর্ষায় এ বারেও বাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কায় ভুগছেন গ্রামবাসীরা। তাঁদের ক্ষোভ, আয়লার পরে ৬ বছর কেটে গিয়েছে। কিন্তু এখনও প্রশাসন পাকাপাকি ভাবে বাঁধ মেরামতির কাজ শেষ করে উঠতে পারল না। যেটুকু হচ্ছে, তা জোড়াতালি দিয়ে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পাথরপ্রতিমা শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৫ ০০:৪২
Share:

বনশ্যামনগর তেঁতুলতলা জেটিঘাটের পাশে পাখিনালা নদীবাঁধের ভাঙন।

বর্ষা দোরগোড়ায়। অথচ, এ বারেও বর্ষার আগে নদীনালা ঘেরা পাথরপ্রতিমা ব্লকের বেশ কিছু বিপজ্জনক বাঁধ এখনও সংস্কার হল না। ফলে, বর্ষায় এ বারেও বাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কায় ভুগছেন গ্রামবাসীরা। তাঁদের ক্ষোভ, আয়লার পরে ৬ বছর কেটে গিয়েছে। কিন্তু এখনও প্রশাসন পাকাপাকি ভাবে বাঁধ মেরামতির কাজ শেষ করে উঠতে পারল না। যেটুকু হচ্ছে, তা জোড়াতালি দিয়ে।

Advertisement

ব্লকের কিছু নদীবাঁধ যে এখনও মেরামত হয়নি, তা মেনে নিয়েছেন সেচ দফতরের পাথরপ্রতিমা সাব-ডিভিশনের সহকারী বাস্তুকার চন্দন পুরকাইত। তিনি বলেন, ‘‘আয়লা প্রকল্পের কেন্দ্রীয় সাহায্য এবং ত্রয়োদশ অর্থ কমিশনের বরাদ্দ টাকায় ২০টি নদীবাঁধ তৈরি করা হয়েছে। তার মধ্যে ১০টির মতো বাঁধ পাকাপাকি ভাবে তৈরি। বাকিগুলি অস্থায়ী ভাবে। সংস্কারের জন্য জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা হচ্ছে। বর্ষার মুখে বাঁধ মেরামতির জন্য যে টাকা বরাদ্দ হচ্ছে তা দিয়ে অস্থায়ী ভাবে বাঁধ মেরামতি শুরু হয়েছে।’’

২০০৯ সালের ২৫ মে আয়লায় জলোচ্ছ্বাসে বাঁধ ভেঙে পাথরপ্রতিমার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছিল। ক্ষতিগ্রস্ত হয় হাজার হাজার বিঘা কৃষিজমি, মাছের পুকুর এবং বসতবাড়ি। সেই ক্ষয়ক্ষতির ছবি গ্রামবাসীদের স্মৃতিতে এখনও টাটকা। এই ক’বছরে বাঁধ মেরামতির কাজ এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। তাই বর্ষা এলেই গ্রামবাসীরা সিঁদুরে মেঘ দেখেন।

Advertisement

ব্লকে মোট পঞ্চায়েতের সংখ্যা ১৫। এর মধ্যে বর্তমানে ওই ব্লকে বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে পাথরপ্রতিমা পঞ্চায়েতের দক্ষিণ লক্ষ্মীনারায়ণপুর শেখ পাড়ার কাছে ওয়ার্ল্ড ক্লিক নদীবাঁধ। তার প্রায় ৫০০ অংশ কবে মেরামত হবে, সে চিন্তায় গ্রামবাসীদের ঘুম উবেছে। মাধবনগর ও বরদাপুর গ্রামের কাছে প্রায় ৪০০ মিটার ও পঞ্চিম দ্বারকাপুরের আদিবাসীপাড়ার কাছে সপ্তমুখী নদীবাঁধের প্রায় এক কিলোমিটার ধস নেমেছে। বনশ্যামনগর পঞ্চায়েতে তেঁতুলতলা জেটিঘাটের পাশে জগদ্দল নদীবাঁধের প্রায় ৩০০ মিটার বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। ব্রজবল্লভপুর পঞ্চায়েতে ক্ষেত্রমোহনপুর গ্রামের কাছে ওয়ার্ল্ড ক্লিক নদীবাঁধের প্রায় ৭০০ মিটার বেহাল। একই ভাবে গোপালনগর পঞ্চায়েতে দুর্গাগোবিন্দপুর ও উত্তর গোপালনগর গ্রামের কাছে গোবদিয়া নদীবাঁধের প্রায় ৫০০ মিটার বিপজ্জনক। দূর্বাচটি পঞ্চায়েতে পঞ্চিম সুরেন্দ্রনগর গ্রামের কাছে সপ্তমুখী নদী বাঁধের প্রায় ৫০০ মিটার ধস নেমেছে। রামগঙ্গা পঞ্চায়েতে রামগঙ্গা গ্রামের কাছে বরচোরা নদীবাঁধের ৭০০ মিটার বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। জি-প্লট পঞ্চায়েতে সিতারামপুর গ্রামের কাছে জগদ্দল নদীবাঁধের ৩০০ মিটার ধস নেমে রয়েছে। একই ভাবে শ্রীধরনগর পঞ্চায়েতে উপেন্দ্রনগর গ্রামের কাছে পাখিনালা নদীবাঁধের প্রায় ৫০০ মিটার বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে।

বানশ্যামনগর গ্রামের বাসিন্দা শেখ মফিজউদ্দিন, শেখ রহমানদের অভিযোগ, ‘‘এখানে তেঁতুলতলা জেটিঘাটের পাশে আয়লার সময় প্রায় ৩০০ মিটার বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছিল। এখনও পাকাপাকি ভাবে বাঁধটি মেরামত হল না। যে কোনও সময় বাঁধটি ভেঙে এলাকা ফের প্লাবিত হতে পারে। বাঁধের বেহাল দশার কথা পঞ্চায়েত থেকে প্রশাসন সকলেই জানে।’’ পাথরপ্রতিমার প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক তথা জেলা পরিষদ সদস্য যোগেশ্বর দাস বলেন, আয়লার সময় এলাকার ৪২টি পয়েন্টে নদীবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এর মধ্যে মাত্র পাঁচটি ঠিকঠাক ভাবে তৈরি হয়েছে। বাকিগুলি বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে।’’

পাথরপ্রতিমা পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ রজনীকান্ত বেরা বিপজ্জনক বাঁধের কথা স্বীকার করেই বলেন, ‘‘সেচ দফতরকে নদীবাঁধ মেরামতির জন্য বলা হয়েছে। আয়লায় ক্ষতিগ্রস্ত ৪২টি পয়েন্টের মধ্যে ১৮টি পয়েন্টের বাঁধ তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। বাকিগুলির কাজ শুরু হবে।’’ কিন্তু অস্থায়ী ভাবে বাঁধ মেরামতিতে লাভ কী হবে, সে প্রশ্নই ভাবাচ্ছে গ্রামবাসীদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন