নেশা ছাড়ানোর কাজে ব্যস্ত বনগাঁর সঙ্কর্ষণ

বনগাঁ দীনবন্ধু কলেজ থেকে প্রাণিবিদ্যায় অনার্স নিয়ে পাস করার পরে যাদবপুরে পড়াশোনা করতে গিয়েছিলেন সঙ্কর্ষণবাবু। সেখানেই হেরোইনের আসক্তি তৈরি হয়। প্রথমে বন্ধু-বান্ধবদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে নেশা করলেও পরের দিকে বাবা-মায়ের থেকে জোর করে টাকা নিয়ে নেশা করতেন বলে জানালেন নিজেই।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৭ ০৩:১৫
Share:

পাঠ: সুস্থ জীবনের। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

নেশা ছাড়ানোর জন্য পাঠ দিচ্ছেন তিনি। সময় পেলেই নেশাগ্রস্তদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পরিবারের লোকেদের বোঝাতে দেখা যাচ্ছে তাঁকে। অশোকনগরের তিনটি রিহ্যাব সেন্টারের ‘মোটিভেটর’ হিসেবে কাজ করছেন বনগাঁর জয়পুরের বাসিন্দা বছর একত্রিশের সঙ্কর্ষণ আচার্য।

Advertisement

এক সময়ে নিজেও নেশার টানে হারিয়ে যাচ্ছিলেন অন্ধকার জগতে। জানালেন, বহু কষ্টে নেশা ছেড়ে জীবনের মূলস্রোতে ফিরতে পেরেছেন। তারপরেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সমাজে যাঁরা নেশায় আচ্ছন্ন তাঁদের নেশা ছাড়াতে পাশে দাঁড়াবেন। সঙ্কর্ষণবাবু বলেন, ‘‘যখন কেউ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যান, তখন তাঁদের পরিবারের লোকজনের মুখের স্বস্তি, হাসিটুকু আমাকে তৃপ্তি দেয়। মনে হয় সমাজের জন্য কিছু করতে পারছি।’’

বনগাঁ দীনবন্ধু কলেজ থেকে প্রাণিবিদ্যায় অনার্স নিয়ে পাস করার পরে যাদবপুরে পড়াশোনা করতে গিয়েছিলেন সঙ্কর্ষণবাবু। সেখানেই হেরোইনের আসক্তি তৈরি হয়। প্রথমে বন্ধু-বান্ধবদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে নেশা করলেও পরের দিকে বাবা-মায়ের থেকে জোর করে টাকা নিয়ে নেশা করতেন বলে জানালেন নিজেই। নিজেও টুকটাক টিউশন করে যা রোজগার করতেন, সেই টাকাও চলে যেত নেশার পিছনে।

Advertisement

বললেন, ‘‘সেই সময়টা ছিল ভয়ঙ্কর। বাবা-মাকে এ জন্য বহু কষ্ট সহ্য করতে হয়েছিল। আর আমিও পরিবার থেকে, সমাজ থেকে ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছিলাম।’’ সঙ্কর্ষণের অভিজ্ঞতা, ‘‘কেউ ভাল চোখে দেখত না। ঘেন্নাও করত বুঝতে পারতাম। কিন্তু নিজেকে বদলানোর ক্ষমতা ছিল না। ক্রমশ একটা অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে তলিয়ে যাচ্ছিলাম।’’

এমন পরিস্থিতি থেকে মুক্তির উপায় খুঁজছিল সঙ্কর্ষণের পরিবারও। বাবা গোবিন্দবাবু খোঁজ পান হাবরার এক রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারের। ছেলেকে তিনি সেখানে ভর্তি করেন। ধীরে ধীরে সুস্থ জীবনে ফিরতে থাকে ছেলে। প্রায় পাঁচ বছর পেরিয়েছে, আর নেশার জিনিস ছোঁননি সঙ্কর্ষণ, জানালেন তিনি। পুরোপুরি সুস্থ। তবে এখন আর বাবা-মা বেঁচে নেই।

পুরনো দিনের কথা মনে করতে চান না যুবকটি। এখন আক্ষেপ, যখন নেশা করতেন, মা অনেক অত্যাচার সহ্য করেছেন। আজ যখন নেশা ছাড়তে পেরেছেন, তখন মা পাশে নেই।

সঙ্কর্ষণ জানান, নেশা-মুক্তির জন্য রিহ্যাব সেন্টারে অনেকে আসেন। প্রায় ৭০ জনকে তিনি এখন নেশা-মুক্তির পাঠ দিচ্ছেন। সঙ্কর্ষণবাবুর রিহ্যাব সেন্টারে এসেছেন বোলপুরের এক যুবক। ওই যুবক নবম শ্রেণিতে পড়ার সময়েই নেশায় আসক্ত হন। নেশার টাকা জোগাড় করতে চুরি করতেন। এখন চিকিৎসায় অনেকটা সুস্থ। আজ, ২৬ জুন বিশ্ব মাদক বিরোধী দিবস নিয়ে নিজের অনুভূতির কথা জানতে চাইলে বললেন, ‘‘আমার কাছে প্রতিটি দিনই এখন মাদক বিরোধী দিবস। কারণ, প্রত্যেক দিন নেশা থেকে মুক্তি পেতে লড়াই করছি আমি।’’

এক দিন সব ঠিক হয়ে যাবে, দেখবেন— প্রত্যয় যুবকের গলায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement