Coronavirus

বাবার মৃত্যু সংবাদেও ফেরা হল না বাড়িতে

বাসন্তী থানার অন্তর্গত দক্ষিণ নারায়ণতলা গ্রাম থেকে বছরখানেক আগে মহারাষ্ট্রে কাজের জন্য গিয়েছিলেন শিবনাথ পৈলান নামে বছর পঁয়ত্রিশের এক যুবক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০২০ ০২:৩৩
Share:

মুম্বইয়ে আটকে পড়া শ্রমিক। —নিজস্ব চিত্র

মারা গিয়েছেন বাবা। সেই খবর পাওয়ার পরেও ফিরতে পারছেন না বাড়িতে। এমনই অবস্থা ভিন রাজ্যে কাজে যাওয়া শ্রমিকের। তার মধ্যে জমানো পুঁজিও শেষ।

Advertisement

বাসন্তী থানার অন্তর্গত দক্ষিণ নারায়ণতলা গ্রাম থেকে বছরখানেক আগে মহারাষ্ট্রে কাজের জন্য গিয়েছিলেন শিবনাথ পৈলান নামে বছর পঁয়ত্রিশের এক যুবক। গ্রামে কাজকর্ম না থাকার কারণে মুম্বইয়ে হোটেলে কাজ শুরু করেন। এই এলাকায় সুন্দরবনের গোসাবা, বাসন্তী এলাকার বহু মানুষ রয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেই এই এলাকায় কাজের জন্য গিয়েছিলেন শিবনাথ। গত কয়েকমাস ধরে মাসে দশ-বারো হাজার টাকা রোজগারও হচ্ছিল।

মাস তিনেক আগে স্ত্রী শিবানী পৈলান ও দুই সন্তানকেও মুম্বইয়ে নিয়ে যান শিবনাথ। সেখানে স্বামী-স্ত্রী মিলে কাজ শুরু করেন। সব কিছু ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু করোনা সংক্রমণের জন্য দেশ জুড়ে লকডাউন শুরু হওয়ায় পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন এই যুবক। জমানো টাকা প্রায় শেষ। আগে এলাকার কিছু সহৃদয় মানুষ ও প্রশাসনের তরফ থেকে খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু গত বেশ কিছু দিন ধরে তা-ও বন্ধ হয়েছে। ফলে খাবারের সমস্যায় ভুগছেন তাঁরা। বাড়ির সঙ্গে প্রতিদিন যোগাযোগ হচ্ছে ফোনে। সেখানে তাঁদের সমস্যার কথা শুনে পরিবারের লোকেরাও বিচলিত হয়ে পড়েছেন।

Advertisement

এরই মধ্যে শুক্রবার রাতে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয় শিবনাথের বাবা নিবাস পৈলানের (৬৩)। বাবার মৃত্যুর খবর পেয়েও বাড়ি আসতে পারছেন না ছেলে। মুম্বই থেকে এ রাজ্যে ফেরার কোনও উপায় নেই বলেই ফোনে জানান শিবনাথ। তিনি বলেন, “একাধিকবার এখানকার স্থানীয় প্রশাসন, বিধায়কের কাছে গিয়েছি, কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। অন্য রাজ্যের আটকে পড়া মানুষদের ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। শুধু আমরা পশ্চিমবঙ্গের মানুষই আটকে রয়েছি।’’ একই অবস্থা এই এলাকায় আটকে থাকা গোসাবা, বাসন্তীর প্রায় শ’দুয়েক পরিযায়ী শ্রমিকের।

অন্য দিকে, বাসন্তীর ঝড়খালি ও নফরগঞ্জ এলাকা থেকে অসমের গোলাঘাট জেলায় ওএনজিসি কোম্পানির কাজে গিয়েছিলেন প্রায় ৩২০ জন শ্রমিক। বিশু মাখাল নামে এক ঠিকাদারের সঙ্গে এই সমস্ত শ্রমিকেরা কাজে গিয়েছিলেন। কিন্তু লকডাউনের শুরু থেকেই কাজ বন্ধ সেখানে। নদীর পাশে তাঁবু খাটিয়ে কোনও রকমে দিন গুজরান হচ্ছে এই শ্রমিকদের। অসমে বৃষ্টি শুরু হয়ে যাওয়ায় তাঁবুতে থাকার সমস্যা হচ্ছে। পাশাপাশি পানীয় জল ও খাবারের সমস্যাও রয়েছে। বিচ্ছিন্ন এলাকায় পড়ে থাকার কারণে কোনও রকম সাহায্যও মিলছে না এই শ্রমিকদের। এই অবস্থায় তাঁরাও বাড়ি ফিরতে চাইছেন। তাঁদেরকে বাড়ি ফেরানোর জন্য যাতে সরকার উদ্যোগ করে, সেই দাবি তুলেছেন তাঁরা।

অসমে আটকে থাকা বাসন্তীর বাসিন্দা প্রদীপ মণ্ডল, ঝন্টু কর্মকার, অমল মণ্ডলরা বলেন, “কোনও রকমে নদীর পাড়ে মাঠের মাঝখানে তাঁবু খাটিয়ে দিন কাটাচ্ছি। পানীয় জলের সমস্যা, খাবারের সমস্যা রয়েছে। তা ছাড়া, আমাদের পরিবারের সকলে খুব উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। যে কোনও উপায়ে আমাদের বাড়িতে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হোক।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement