বসিরহাটে শ্রম দফতরের অফিসে বিক্ষোভ। শুক্রবার। ছবি: নির্মল বসু।
বাড়িতে ‘কাজের মাসি’র রান্নায় তাঁর মন ভরে না। তাই দফতরের এক অধস্তন মহিলা কর্মচারীকে প্রায় জোর করেই তাঁর ভাড়া বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন বসিরহাটের সহকারী শ্রম আধিকারিক।
অভিযোগ, সেখানে রান্নার পরে ওই মহিলার শ্লীলতাহানিরও চেষ্টা করেন তিনি। পুলিশকে ওই মহিলা জানান, ওই শ্রম-কর্তার ‘কুপ্রস্তাবে’ সম্মত না হওয়ায় এবং এ ব্যাপারে কাউকে জানালে তাঁর চাকরি ‘খেয়ে নেওয়ার’ হুমকিও দিয়েছেন ওই আধিকারিক।
মঙ্গলবারের ওই ঘটনার পরে ভয় পেয়ে দু’দিন চুপ করে ছিলেন তিনি। পরে বিষয়টি দফতরের অন্যদের জানালে তাঁরাই উদ্যোগী হয়ে ওই মহিলাকে নিয়ে যান স্থানীয় থানায়। শুক্রবার এ ব্যাপারে পুলিশে অভিযোগও দায়ের করেছেন ওই মহিলা কর্মী।
ব্যারাকপুরের সহকারী শ্রম-কমিশনার আশিস সরকার বলেন, “বসিরহাটের দফতরের এক মহিলা কর্মী লিখিত অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।” তবে অভিযুক্ত শ্রমকর্তার হুমকিতে সন্ত্রস্ত ওই মহিলা কর্মীকে আপাতত জেলা সদরে বদলি করা হয়েছে বলেও শ্রম দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। মহিলার অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে বসিরহাট থানার পুলিশও।
এ ব্যাপারে ওই শ্রমকর্তা অবশ্য বলছেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে কী অভিযোগ হয়েছে, তা স্পষ্ট জানা নেই। তবে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।”
ওই মহিলার অভিযোগ, মঙ্গলবার বসিরহাট স্টেশনে তাঁকে দাঁড়াতে বলে সটান গাড়ি নিয়ে এসে হাজির হয়েছিলেন ওই শ্রমকর্তা। তারপর, বসিরহাটের সাঁইপালা জোড়াপুকুর ধারে নিজের ভাড়া বাড়িতে মহিলাকে নিয়ে যান তিনি। সেখানে জোর করে তাঁকে দিয়ে রান্না করানোর পরে শ্লীলতাহানিরও চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, “নিজের স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ভাল না, খুব শীঘ্রই বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যাবে এ সব কথা পেড়ে আমাকে কুপ্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনি।” শুধু তাই নয়, এর পরে অফিসে নিয়ে গিয়েও নানা ছুতোয় তাঁকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আটকেও রেখেছিলেন বলেও অভিযোগ।
ওই দফতরের অন্য কর্মীদেরও অভিযোগ, সকলের সঙ্গেই দুর্ব্যবহার করেন ওই আধিকারিক। দফতরের অন্য মহিলা কর্মীদের অভিযোগ, “ওই আধিকারিক আমাদের সকলের সঙ্গে অত্যন্ত দুর্ব্যবহার করেন। তাঁর আচরণে মহিলারা নিরাপত্তার অভাব বোধ করেন।” তাঁদের প্রশ্ন, শ্রম দফতরের আধিকারিক হিসাবে শ্রমিকদের কাজের মূল্যায়ণ করার কথা তাঁর, সেখানে এক জন সরকারি কর্মীকে কী করে নিজের বাড়িতে জোর করে নিয়ে গিয়ে রান্না করালেন ওই আধিকারিক?
ওই মহিলা কর্মীকে অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া হলেও ওই শ্রমকর্তা অবশ্য শুক্রবারও বহাল তবিয়তেই রয়েছেন বসিরহাটের দফতরে। তা নিয়েও এ দিন ক্ষোভ দেখান দফতরের কর্মীরা।