ভাঙা-চোরা: বৃদ্ধার এই আস্তানা থেকেই মিলেছে টাকা। নিজস্ব চিত্র
বালিশের নীচে এক তাড়া নোট, তোষকের তলায় আরও গোছা গোছা ৫০-১০০ টাকা। হাঁড়ি নাড়াতেই খড়মড় শব্দে জানান দিচ্ছে খুচরোর পাহাড়। নোংরা ছেঁড়া বিশাল ওজনের ব্যাগটা হাতে তুলে হতবাক পাড়ার ছেলে-ছোকরারা। ব্যাগে ঠাসা ১-২-৫ টাকার কয়েন। গুনতে গুনতে দিন কাবা়র।
সব মিলিয়ে টাকার অঙ্কটা প্রায় ১ লক্ষ!
পাওয়া গেল কার বাড়িতে? তিনি পাড়ার এক ভিখারিনী। সব দেখেশুনে পাড়ার এক যুবক বললেন, ‘‘ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে লক্ষ টাকা জমানোর গল্প শুনেছিলাম। এ বার নিজের চোখে দেখলাম!’’
ডায়মন্ড হারবার ২ ব্লকের রামনগরের তেঁতুলতলা পাড়ায় ভাঙাচোরা একখানা মলিন ঘরের মালকিন চণ্ডী মণ্ডল। ভিক্ষা করে, চেয়েচিন্তে দিন কাটাতেন। শোনা যায়, যৌবনকালে স্বামী ছেড়ে চলে যান। ছেলেপুলে নেই। একাই কোনও মতে দিন কাটাতেন। বহু বছর ধরে এমনটাই দেখে আসছেন এলাকার মানুষজন।
বুধবার সকালে বছর সত্তরের বৃদ্ধা চণ্ডীদেবীর ঘর থেকে গোঙানির শব্দ শোনা যায়। প্রতিবেশীরা ঢুকে দেখেন, বৃদ্ধা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। পাড়ার কয়েকজন মিলে তাঁকে নিয়ে ভর্তি করিয়ে দেয় ডায়মন্ড হারবার হাসপাতালে। চিকিৎসা, ওষুধ-পথ্যের জন্য টাকার দরকার পড়তে পারে মনে করে লোকজন ঠিক করেন, বৃদ্ধার কোনও সঞ্চয় আছে কিনা খোঁজ করবেন। সেই মতো ঘরে ঢুকে খোঁজ করতেই চোখ ছানাবড়া। যেখানে হাত যাচ্ছে, সেখান থেকেই বেরিয়ে আসছে টাকা। নেপাল শিকদার, সুব্রত পাড়ুইরা অবশ্য জানালেন, ওই টাকার কথা তাঁরা মাথায় রাখছেন না। চাঁদা তুলেই সব ব্যবস্থা হচ্ছে।
বাতিল ৫০০-১০০০ টাকার নোটও মিলেছে কিছু। সব মিলিয়ে সাড়ে ৩ হাজার টাকা। পাড়ার এক যুবকের কথায়, ‘‘তা-ও ভাল। বাতিল টাকার অঙ্কটা কম। ওঁর নিশ্চয়ই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নেই। মোদীজীর জমানায় নোট বদলাতে না পারার শোকে তো আগেই অসুস্থ হয়ে পড়তে হতো ওঁকে!’’