ডেঙ্গি কেড়ে নিয়েছে মাকে, সন্তান নিয়ে অসহায় বাবা

দেগঙ্গার সুবর্ণপুর হাইস্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়ে বারো বছরের ফরিদা। বাড়ি আমুলিয়ায়। মা নয়নতারা বিবি মারা গিয়েছেন ২৭ সেপ্টেম্বর।

Advertisement

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৭ ০১:১৭
Share:

একা-হাতে: সংসার সামলাতে ব্যস্ত সিরাজুল। নিজস্ব চিত্র

রোগা রোগা অনভ্যস্ত হাতে বাটনা বাটছিল ফরিদা। কাঠের উনুনের ধোঁয়ায় চোখের জল বাধ মানতে চায় না। ওড়নায় চোখ মুছে বলল, ‘‘আব্বার জন্য রান্না করে তারপরে স্কুলে যাব। কত দিন এ ভাবে পড়া চালিয়ে যেতে পারব জানি না।’’

Advertisement

দেগঙ্গার সুবর্ণপুর হাইস্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়ে বারো বছরের ফরিদা। বাড়ি আমুলিয়ায়। মা নয়নতারা বিবি মারা গিয়েছেন ২৭ সেপ্টেম্বর। জ্বর নিয়ে বারাসত জেলা হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। ন’বছরের যমজ দুই ছেলে আর ফরিদাকে নিয়ে এখন আতান্তরে পড়েছেন নয়নতারার স্বামী নাসিরুদ্দিন। বললেন, ‘‘দিনমজুরি করে কোনও মতে সংসার চালাই। সারা দিন বাইরে বাইরে কেটে যায়। ছেলেমেয়েগুলো কী ভাবে বড় হবে কে জানে!’’

দেশ জুড়ে যখন শিশু দিবস পালিত হচ্ছে তখন শৈশব হারিয়ে কঠিন বাস্তবের মুখে দেগঙ্গার এমন বহু পরিবারের ছেলেমেয়েরা। জ্বর আর ডেঙ্গি বহু পরিবারের একমাত্র রোজগেরে সদস্যকে কেড়ে নিয়েছে। আর অনেক পরিবারে এক ধাক্কায় ছোট ছেলেমেয়েদের জীবনটাই বদলে দিয়েছে।

Advertisement

মায়ের মৃত্যুর পর থেকে স্কুলে যেতেই পারেনি নবম শ্রেণির মকবুল হোসেন। আমুলিয়াতেই তাদের বাড়ি। মা রাকিয়া বিবি মারা গিয়েছেন গত ২৫ সেপ্টেম্বর। স্বামী মতিয়ার রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। একাদশ শ্রেণির এক ছেলে, নবম শ্রেণির মকবুল আর প্রথম শ্রেণিতে পড়া একরত্তি মেয়েকে নিয়ে সংসার। মা মারা যাওয়ার পর থেকে হেঁসেল সামলাচ্ছে মকবুল। ছেলেটির কথায়, ‘‘মা নেই। বোনটা ছোট। বাবা সারা দিন কাজে ব্যস্ত। আমাকেই সংসার সামলাতে হচ্ছে। পড়াশোনা আর চালাতে পারলাম না।’’

পারুলিয়া মাধবপুরের সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী রোজিনা মারা গিয়েছেন দিন কয়েক আগে। বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, দশ মাসের মেয়েকে কোলে নিয়ে রান্না চাপিয়েছেন সিরাজুল। পাশে থালা হাতে দাঁড়িয়ে ছোট ছোট আরও চার সন্তান। মা-হারা ছেলেমেয়েদের কী ভাবে বড় করবেন, জানা নেই সিরাজুলের।

বেড়াচাঁপার উত্তর কাউকেপাড়ার মেহেরুন বিবি ডেঙ্গিতে মারা গিয়েছেন আরজিকরে। ৩০ সেপ্টেম্বর ওই ঘটনার পর থেকে দুই মেয়ে, এক ছেলেকে নিয়ে নাজেহাল অবস্থা মেহেরুনের স্বামী সামসের মণ্ডলের। হকারি করে পেট চালান। বাড়িতে বসে থাকলে ভাত বন্ধ হওয়ার জোগাড়। তাই এগারো বছরের মেয়ে সাবিনাকে সংসারের ভর দিয়ে বেরোচ্ছেন। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে সাবিনা।

সামসের বলেন, ‘‘ছোট মেয়েটার পড়া তো বন্ধ হতে বসেছে। সংসারের সব দায়িত্ব এখন ও-ই সামলাচ্ছে।’’

হঠাৎ যেন বড় হয়ে গিয়েছে ছেলেমেয়ের দল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন