Shahjahan Sheikh

বাসন্তী হাইওয়েতে মৃতের পরিবারের সঙ্গে শাহজাহানের পুরনো শত্রুতা! কী ভাবে পারমিট ফেল করা ট্রাক রাস্তায়?

বুধবার সকালে সরবেড়িয়া থেকে বসিরহাট আদালতে যাচ্ছিলেন ভোলা ঘোষ। চার চাকার গাড়িতে ছিলেন তাঁর কনিষ্ঠ পুত্র সত্যজিৎ ঘোষ এবং আরও এক ব্যক্তি। বাসন্তী হাইওয়েতে উল্টো দিক থেকে আসা ট্রাকের ধাক্কায় ভোলাদের গাড়ি পড়ে নয়ানজুলিতে। মৃত্যু হয় সত্যজিৎ এবং গাড়িচালক শাহানুর মোল্লার।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২৫ ২০:৫৪
Share:

(বাঁ দিকে) শাহজাহান শেখ। (ডান দিকে) সাক্ষী ভোলা ঘোষ। পিছনে দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়ি। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

ট্রাকের পারমিট এবং ফিটনেস ফেল। কিন্তু তার পরেও সন্দেশখালির সিঙ্গল রোড থেকে বাসন্তী হাইওয়েতে তার অবাধ যাতায়াত! বুধবার সেই ট্রাকেরই ধাক্কায় প্রাণ গিয়েছে দু’জনের। মৃতদের এক জন তৃণমূল থেকে বহিষ্কৃত শাহজাহান শেখের বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের করা মামলার অন্যতম সাক্ষীর পুত্র। দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়িতে ওই সাক্ষীও ছিলেন। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচেছেন তিনি। অভিযোগ উঠেছে, শাহজাহানের অঙ্গুলিহেলনেই ট্রাকচালক গাড়িতে ধাক্কা দিয়েছেন। তার মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে, পারমিট এবং ফিটনেস ফেল হওয়ার পরেও কী ভাবে রাস্তায় চলছিল ট্রাকটি?

Advertisement

বুধবার সকালে সরবেড়িয়া থেকে বসিরহাট আদালতে যাচ্ছিলেন ভোলা ঘোষ। চার চাকার গাড়িতে ছিলেন তাঁর কনিষ্ঠ পুত্র সত্যজিৎ ঘোষ এবং আরও এক ব্যক্তি। বাসন্তী হাইওয়েতে উল্টো দিক থেকে আসা ট্রাকের ধাক্কায় ভোলাদের গাড়ি পড়ে নয়ানজুলিতে। মৃত্যু হয় সত্যজিৎ এবং গাড়িচালক শাহানুর মোল্লার। অল্পবিস্তর জখম হন শাহজাহানের বিরুদ্ধে মামলার সাক্ষী ভোলা। নয়ানজুলিতে পড়ে ট্রাকটিও। তবে চালক পালিয়ে যান। ভোলার পরিবারের অভিযোগ, ট্রাকচালক আলিম মোল্লা সন্দেশখালির বাসিন্দা এবং শাহজাহানের ঘনিষ্ঠ। আর বুধবার নিছক দুর্ঘটনা হয়নি। পরিকল্পনামাফিক ভোলাদের গাড়িতে ধাক্কা দেওয়া হয়েছিল।

এখন পলাতক ট্রাকচালকের খোঁজে পুলিশ। তার মধ্যে ঘাতক ট্রাকটি সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গিয়েছে। জানা যাচ্ছে, গত ১৪ অক্টোবর সেটির পারমিট ফেল হয়। এ-ও জানা গিয়েছে, সম্প্রতি ট্রাকটি বিক্রি করা হয়েছিল।

Advertisement

সূত্রের খবর, পারমিট ফেল করা ট্রাকটির মালিকের নাম আব্দুল সামাদ মোল্লা। তিনি সন্দেশখালি-১ ব্লকের সরবেড়িয়া আগারাটি পঞ্চায়েতের লাউখালি এলাকার পঞ্চায়েত সদস্যও বটে। বাড়ি লাউখালি গ্রামেই। বুধবার বাসন্তী হাইওয়েতে দুর্ঘটনার পর সামাদের খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা যায়, তিনি বাড়িতে নেই। তাঁর মেয়ে হাসনুহানা সুলতানা জানান, ওই ট্রাক তাঁরা আট মাস আগে নজরুল মোল্লা নামে এক ব্যক্তিকে বিক্রি করে দিয়েছেন।

ট্রাকের পারমিট ফেল করেছিল। তার পরেও কী ভাবে রাস্তায়? প্রশ্ন উঠছে। —নিজস্ব চিত্র।

কিন্তু ৮ মাস আগে ট্রাক কিনলেও খাতায়কলমে মালিকানা পরিবর্তন করেননি নজরুল। সুলতানার দাবি, নজরুলের ঠিকানা তাঁরা জানেন না। নজরুলের হদিস না-মিললেও এটুকু জানা যাচ্ছে যে, ট্রাকের রেজিস্ট্রেশন থেকে বিমার কাগজপত্র, সমস্ত কিছুর মেয়াদ পেরিয়ে গিয়েছে। এ নিয়ে পুলিশের তরফে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে পুলিশ সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার দুর্ঘটনাস্থলে যাবেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা।

অন্য দিকে, ভোলার পরিবার সূত্রে খবর, শাহজাহানের সঙ্গে তাদের পুরনো বিবাদ ছিল। প্রাক্তন তৃণমূল নেতা ভোলার বিরুদ্ধে একাধিক মিথ্যা মামলা করেছিলেন বলে অভিযোগ। সিবিআইয়ের মামলায় শাহজাহানের বিরুদ্ধে সেই ভোলা সাক্ষী হওয়ার পরে গোলমাল আরও বেড়েছে। জেলে থেকেও নাকি শাহজাহান নির্দেশ পাঠাচ্ছেন তাঁর অনুগামীদের। তাঁরা দলবল দিয়ে হুমকি দিতেন ভোলা এবং তাঁর পরিবারের লোকজনকে। ভোলার জ্যেষ্ঠ পুত্র বিশ্বজিৎ ঘোষের অভিযোগ, সবিতা রায়, মোসলেম শেখদের মতো স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা শাহজাহানের কথা মতো তাঁদের হুমকি দিতেন। তিনি জানান দুর্ঘটনা নয়, চক্রান্ত করে খুনের করা হয়েছে তাঁর ভাইকে। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সন্দেশখালির পঞ্চায়েত সবিতা, মোসলেমরা। মোসলেম বলেন, ‘‘ট্রাকচালক বলে যাঁর নাম বলা হচ্ছে, তাঁকে চিনি। তবে আমাদের নাম জড়িয়ে যা বলা হচ্ছে তা ভিত্তিহীন। তদন্তের দাবি করছি আমরাও।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement