অবশেষে ঘর খুঁজে পেলেন উমা

শনিবার সকালে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালের ঘটনা। হ্যাম রেডিয়ো ক্লাবের সাহায্যে বৃদ্ধা উমা বিশ্বাস ফিরে পেলেন ছেলে কৃষ্ণপদ, বৌমা কবিতা ও নাতি সুশান্তকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বনগাঁ শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৯ ০১:৪৮
Share:

পরিবারের সঙ্গে উমা। ছবি তুলেছেন নির্মাল্য প্রামাণিক

হাসপাতালের বিছানায় বসে পঁচানব্বই বছরের বৃদ্ধা। পাশেই বসে কয়েকজন। বৃদ্ধার চোখে জল। ক’মাস পরে ছেলে-বৌমা-নাতিকে ফিরে পেয়েছেন খুশিতে দু’চোখ ভরে এসেছে।

Advertisement

শনিবার সকালে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালের ঘটনা। হ্যাম রেডিয়ো ক্লাবের সাহায্যে বৃদ্ধা উমা বিশ্বাস ফিরে পেলেন ছেলে কৃষ্ণপদ, বৌমা কবিতা ও নাতি সুশান্তকে।

হুগলির পাণ্ডুয়া থানার বেড়েলা গ্রামের বাসিন্দা উমা। তাঁর ভোটার কার্ড থাকে এক আত্মীয়ের বাড়িতে। লোকসভা ভোটের আগের দিন উমা কার্ড আনতে আত্মীয়ের বাড়ি যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন উমা। তারপর থেকে আর খোঁজ মিলছিল না।

Advertisement

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কোনও ভাবে ঘুরতে-ঘুরতে বনগাঁয় চলে আসেন বৃদ্ধা। অপরিচিত এক বৃদ্ধা ঘোরাঘুরি করছেন বলে খবর রটে যায়। শান্তনু হালদার, রুদ্রপ্রসাদ ঘোষ এবং সৌম্যদীপ রায় সে কথা জানতে পারেন। ১৪ জুন সন্ধ্যায় বনগাঁর দেবগড় এলাকায় রাস্তা থেকে বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে তাঁরা বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করান। ওই যুবকেরা জানান, ‘‘বৃদ্ধার দু’হাতে ব্যান্ডেজ করা ছিল। শুনছিলাম, এলাকার লোকজন ওঁকে খেতে দিচ্ছিলেন। তবে কোনও আশ্রয় মেলেনি। রাস্তাতেই থাকছিলেন।’’

বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসকেরা উমাকে শল্যবিভাগে ভর্তি করে চিকিৎসা শুরু করেন। সুপার শঙ্করপ্রসাদ মাহাতো বলেন, ‘‘চিকিৎসার পরে বৃদ্ধা সুস্থ। হাতে ব্যথা নেই। বাড়ির ঠিকানা বলেছিলেন সুভাষপল্লি। তবে আমরা সেখানে খুঁজে কিছু পাইনি।’’ইতিমধ্যে বৃদ্ধার কথা জানতে পেরে বনগাঁর মহকুমাশাসক কাকলি মুখোপাধ্যায় ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিও ক্লাবের সম্পাদক অম্বরীশ নাগবিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। অম্বরীশ বলেন, ‘‘হাসপাতালে গিয়ে আমরা বৃদ্ধার সঙ্গে কথা বলে তাঁর পরিচয় জানার চেষ্টা করি। নিজের নাম, স্বামীর নাম, ছেলের নাম বলতে পারলেও বৃদ্ধা ঠিকানা বলতে পারছিলেন না। শেষে আমরা রেডিও নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বৃদ্ধার কথা চারিদিকে পৌঁছে দিই। পরে ভোটার লিস্ট সার্চ করে তাঁর ঠিকানা উদ্ধার করি। বাড়ির লোকজনকে বৃদ্ধার ছবি দেখানো হলে তাঁরা চিনতে পারেন।’’

এ দিন হাসপাতালে উমাকে নিতে এসেছিলেন আত্মীয়েরা। নাতির মুখ থেকে ‘ঠাকুমা’ ডাক শুনে চোখ তুলে তাকান উমা। নিমেষে জলে ভরে যায় দু’চোখ। নাতিকে কাছে টেনে নিয়ে তার গায়ে-মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। ছেলে-বৌমার সঙ্গেও কথা বলেন।

শনিবার দুপুরে হাসপাতাল থেকে উমাকে নিয়ে বাড়ি ফেরার আগে কৃষ্ণপদ ও কবিতা বলে গেলেন, ‘‘এত দিন পরে মাকে ফিরে পেয়ে খুব আনন্দ হচ্ছে। আর ওঁকে চোখের আড়াল করব না।’’ আর কখনও একা-একা বাড়ি থেকে বেরবেন না বলে জানিয়েছেন উমাও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন