রাজস্থান থেকে বারাসতে

ভিন্‌ রাজ্যের পুলিশের পাশে সীতা

চাকরি দেওয়ার নাম করে উত্তর ২৪ পরগনার আমডাঙার ওই মহিলা, সীতাদেবীকে (নাম পরিবর্তিত) বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল বছর দুয়েক আগে।

Advertisement

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য

বারাসত শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৭ ১২:৫৫
Share:

প্রতীকী চিত্র।

এক সময়ে জীবনে ঝড় বয়ে গিয়েছে। এখন নতুন সংসারে দিব্যি আছেন তিনি। তবুও চান অভিযুক্তদের কঠিন শাস্তি হোক। তাই উত্তর ২৪ পরগনা পুলিশের তদন্তে সাহায্য করতে সুদূর রাজস্থান থেকে ছুটে এসেছেন বছর তিরিশের এক মহিলা।

Advertisement

চাকরি দেওয়ার নাম করে উত্তর ২৪ পরগনার আমডাঙার ওই মহিলা, সীতাদেবীকে (নাম পরিবর্তিত) বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল বছর দুয়েক আগে। দিল্লি, হরিয়ানার মতো এলাকায় এক হাত থেকে অন্য হাতে বিক্রি হতে হতে অবশেষে এক জনের সঙ্গে আলাপ ও পরে বিয়ে হয় সীতাদেবীর। অন্য একটি মহিলা পাচারের তদন্তে পুরনো এই ঘটনা সামনে চলে এসেছে। ওই ঘটনার তদন্তে নেমে ৩ পাচারকারীকে গ্রেফতার করেছে উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ।

মামলাটি উঠেছে বারাসত আদালতে। রাজস্তানের আলোয়ার থেকে সীতাদেবী এসে সাহায্য করছেন তদন্তকারী অফিসারদের। সীতাদেবী জানান, ‘‘কাজ দেওয়ার নাম করে আমার মতো আর কোনও মেয়ের এমন সর্বনাশ কেউ যাতে করতে না পারে সেই তাগিদেই আমি এসেছি।’’

Advertisement

পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘সাম্প্রতিক একটি ঘটনার তদন্তে নেমে পুরনো এই ঘটনার কিনারা হয়েছে। কিন্তু ওই মহিলার অভিযোগ বা সাহায্য ছাড়া বিষয়টি প্রমাণ করা শক্ত ছিল।’’ ভাস্করবাবুর কথায়, ‘‘এখন পরিবার নিয়ে সুখে শান্তিতে থাকা সত্ত্বেও ওই মহিলা দোষীদের শাস্তির জন্য যেভাবে পুলিশকে সাহায্য করছেন, তা প্রশংসনীয়।’’

২০১২ সালের ঘটনা। পুলিশ জানিয়েছে, আমডাঙা থানার বেড়াবেড়ি এলাকার বাসিন্দা সীতাদেবীর বিয়ে হয় প্রতিবেশী এক যুবকের সঙ্গে। কিন্তু স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় বিয়ের কিছু দিন পরে তাঁকে বাপের বাড়ি ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বাপের বাড়ির অর্থনৈতিক অবস্থা ভাল না হওয়ায় কাজের খোঁজ শুরু করেন সীতাদেবী। সেই সময়ে তাঁর সঙ্গে আলাপ হয় ওই এলাকার বাসিন্দা হাসিনা বানু ওরফে বুড়ির সঙ্গে। বুড়ি জানায়, তার স্বামী মুশারেফ মণ্ডল ওরফে রাজুর দিল্লিতে অনেক চেনাজানা রয়েছে। সেখানে ভাল কাজ মিলবে।

২০১৪ সালের অক্টোবর মাসে মুশারেফের সঙ্গে দিল্লি পাড়ি দেন সীতাদেবী। অভিযোগ, দিল্লিতে নিয়ে গিয়ে মুশারেফ ফিরোজ নামে এক জনের কাছে তাঁকে বিক্রি করে দেয়। ফিরোজ সীতাদেবীকে দিল্লির এক যৌনপল্লিতে বিক্রি করে। সীতাদেবী জানিয়েছেন, সেখানে তিনি আপত্তি, কান্নাকাটি করলে তাঁকে মারধর করে নানা কাজ করানো হত। তিনি পালানোর চেষ্টা করলে তাঁকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় হরিয়ানার আর একটি যৌনপল্লিতে। এর পরেই এক দিন সীতাদেবীর সঙ্গে আলাপ হয় রাজস্থানের এক ব্যক্তির। তাঁকে সমস্ত ঘটনা খুলে বলেন সীতাদেবী। তিনি সীতাদেবীকে বাড়িতে নিয়ে যান। বিয়েও হয় তাঁদের।

এ দিকে বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার পরে তাঁর খোঁজখবর না পেয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানায় সীতাদেবীর পরিবার। সম্প্রতি অন্য একটি পাচারের ঘটনার তদন্তে নেমে বুড়িকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাকে জেরা করে পুরনো এই ঘটনাটি জানতে পারে পুলিশ। সেই সূত্র ধরে গ্রেফতার করা হয় মুশারেফ ও ফিরোজকে। তাদের জেরা করে প্রথমে দিল্লি এবং পরে হরিয়ানার যৌনপল্লিতে হানা দেয় উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ। তার পরে যোগাযোগ করা হয় রাজস্থান পুলিশের সঙ্গে। খোঁজ মেলে সীতাদেবীর।

পুলিশ জানিয়েছে, সমস্ত ঘটনা জানানো এবং দোষীদের শনাক্তকরণই শুধু নয়, কলকাতা এসেও তদন্তকারী পুলিশ অফিসারদের সাহায্য করেছেন সীতাদেবী। তাঁর সঙ্গে স্বামী, পরিবারও চান দোষীদের কঠোর শাস্তি হোক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন