জগদ্দলে শ্লীলতাহানি

ধরা পড়েছে একজন, তবু পুলিশের ভূমিকায় ক্ষোভ

প্রতিবেশী দুই কিশোরীর শ্লীলতাহানি এবং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এক ছাত্র-সহ কয়েকজনকে মারধরের ঘটনায় পুলিশি নিস্ক্রিয়তার অভিযোগ ওঠার পরে শনিবার ভোলা মণ্ডল নামে এক অভিযুক্তকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। বাকিরা এখনও পলাতক বলে পুলিশের দাবি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৬ ০০:২১
Share:

ধৃত ভোলা মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র।

প্রতিবেশী দুই কিশোরীর শ্লীলতাহানি এবং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এক ছাত্র-সহ কয়েকজনকে মারধরের ঘটনায় পুলিশি নিস্ক্রিয়তার অভিযোগ ওঠার পরে শনিবার ভোলা মণ্ডল নামে এক অভিযুক্তকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। বাকিরা এখনও পলাতক বলে পুলিশের দাবি।

Advertisement

দোলের দিন, বুধবার জগদ্দলের কেউটিয়ায় সরকারি আমতলা পুকুরে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়া দুই কিশোরী স্নান করতে গেলে প্রতিবেশী আট যুবক তাদের শ্লীলতাহানি করে বলে অভিযোগ। এই ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে ওই যুবকদের মারে জখম হন জয়দীপ বিশ্বাস নামে পাশের মন্টু কলোনির বাসিন্দা ওই ছাত্র। দোলের ছুটিতে বাড়ি ফিরেছিলেন তিনি।

এই ঘটনায় অভিযুক্তদের পক্ষ থেকেও পাল্টা অভিযোগ করা হয়, জয়দীপ কিছু ছেলেকে নিয়ে অভিযুক্তদের বাড়িতে চড়াও হয়ে আগে মারধর করেন। যদিও এই ঘটনার পরে জয়দীপকেই রক্তাক্ত অবস্থায় কল্যাণী জেএনএম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তাঁর কাঁধ ও পাঁজরের হাড়ে চোট লেগেছে বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। জয়দীপের প্রতিবেশী এক প্রতিবন্ধী মহিলাকেও মারধর করা হয়।

Advertisement

শ্লীলতাহানির ঘটনা থেকে মারামারির সূত্রপাত হলেও দুই পাড়ার ক্ষমতা দখলের ছবিটাই স্পষ্ট হয়েছে এই ঘটনায়। বাম আমলে জয়দীপের বাবা জগন্নাথবাবু সিপিএম নেতা হিসাবে এলাকায় প্রভাবশালী ছিলেন। অভিযুক্তদের তাঁর ছত্রছায়ায় থাকতে দেখা যেত বলেই স্থানীয়দের দাবি। কিন্তু রাজ্যে সরকার পরিবর্তনের পরে শাসক দলের ছত্রচ্ছায়ায় চলে যায় অভিযুক্ত আটজন, এমনটাই দাবি করেছেন এলাকার বাসিন্দারা। আর শাসকদলের ছাতার নীচে থাকার দৌলতেই দোল পার করে তিন দিন পেরিয়ে গেলেও অভিযুক্তদের গ্রেফতারে পুলিশ গড়িমসি করছে বলে অভিযোগ জগন্নাথবাবুর পরিবারের।

শুধু কি গ্রেফতারে গড়িমসি!

ঘটনার দিন থানায় যাওয়ার পর পুলিশ অভিযোগ নিতেই চার-পাঁচ ঘণ্টা পার করে দেয় বলে অভিযোগকারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। এমনকী, অভিযোগ নিলেও কোনও নথিভুক্তিকরণ নম্বর দেওয়া হয়নি। পরে আসতে বলা হয় অভিযোগকারীদের। রুটিন টহল ছাড়া তদন্তের জন্য এলাকায় পুলিশ যায়নি বলেও অভিযোগ।

পুলিশের এই ভূমিকা নিয়ে এর আগেও ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটে একাধিকবার প্রশ্ন উঠেছে। টিটাগড়ে পুলিশের গুলি চালনার ঘটনা বা বেলঘরিয়ায় প্রাথমিকের শিক্ষকদের আটকে রেখে হয়রানি— সংবাদমাধ্যমে নজরকাড়া ঘটনা হিসাবে জায়গা পেলেও নিত্য দিন পুলিশের বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ উঠছে।

‘খুঁটির জোর’ না থাকলে আম জনতার কেউই থানার পুলিশকে ছাপিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অনুযোগ করতেও সাহস করেন না বলে জানালেন অনেকে।

বুধবারের ঘটনার পরে ওই দুই ছাত্রী ভয়ে ওই পুকুরে স্নান করা বন্ধ করেছে। দেখাদেখি অনেকেই পুকুরে যেতে সাহস পাচ্ছেন না। মন্টু কলোনির পুষ্পিতা বিশ্বাস বা মধুমিতা সরকারদের মতো গৃহবধূদের বক্তব্য, ‘‘এখন সব শান্ত। কিন্তু আইনানুগ ব্যবস্থায় যদি ফল না পাওয়া যায়, তবে যে কোনও এলাকাতেই এই ঘটনা ঘটবে এবং অপরাধীরা বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াবে।’’ তাঁদের বক্তব্য, ‘‘পুলিশ যদি এলাকায় এসে সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলত, বাসিন্দাদের কাছ থেকে পরিস্থিতি জানতে চাইত, তা হলে বুঝতে পারত সব এখন শান্ত থাকলেও চাপা উত্তেজনাটা রয়েই গিয়েছে।’’

পুলিশের এই ভূমিকা নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন থানার আধিকারিকেরা। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের গোয়েন্দা প্রধান অজয় ঠাকুর অবশ্য এই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে কোনও মন্তব্য না করলেও অভিযোগ খতিয়ে দেখার কথা বলেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘পুলিশ তদন্ত করছে। কারও কোনও অভিযোগ থাকলে কমিশনারেটে লিখিত ভাবে অবশ্যই জানাবেন। আমরা ব্যবস্থা নেব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement