ঠেসে লোক তুলে বিপদের আশঙ্কা বাড়াচ্ছে নৌকো

নৌকো ঘাটে ভিড়তেই শ’খানেক মানুষ হুড়মুড়িয়ে উঠে পড়লেন। তারই মধ্যে হেঁইও হেঁইও করে তোলা হল গোটা চারেক মোটরবাইক। অথচ, নিয়ম হল, নৌকোয় ৪০ জনের বেশি যাত্রী তোলা যাবে না।

Advertisement

সামসুল হুদা

ক্যানিং শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৬ ০২:২৭
Share:

এই দৃশ্য প্রতিদিনই দেখা যায় বিভিন্ন নদীপথে। গোসাবার বিদ্যানদীতে তোলা নিজস্ব চিত্র।

নৌকো ঘাটে ভিড়তেই শ’খানেক মানুষ হুড়মুড়িয়ে উঠে পড়লেন। তারই মধ্যে হেঁইও হেঁইও করে তোলা হল গোটা চারেক মোটরবাইক। অথচ, নিয়ম হল, নৌকোয় ৪০ জনের বেশি যাত্রী তোলা যাবে না। কিন্তু কে শুনছে কার কথা। মাঝি-মাল্লাদের কাউকে অবশ্য ওজর-আপত্তি তুলতেও দেখা গেল না! এ দিকে, জল তখন নৌকো ছাপিয়ে ভিতরে ওঠে ওঠে।

Advertisement

শান্তিপুরে নৌকোডুবির পরেও শিক্ষা নেয়নি সুন্দরবন। এ ভাবেই প্রাণের ঝুঁকি নিয়েই এই অঞ্চলের বিভিন্ন নদী পারাপার করেন মানুষ। প্রতিনিয়ম একই চিত্র। প্রায়শই ছোটখাট দুর্ঘটনাও যে ঘটে না, তেমন নয়। কিন্তু প্রশাসন সব জেনেও কোনও ব্যবস্থা নেয় না বলে অভিযোগ যাত্রীদের একাংশের।

প্রশাসন সুত্রে জানা গিয়েছে, ছোট নৌকোয় ১০-১৫ জন এবং বড় নৌকোর ক্ষেত্রে ৩০-৪০ জনের বেশি তোলার নিয়ম নেই। দু’টির বেশি মোটর বাইকও তোলা যায় না। সে ক্ষেত্রে যাত্রী সংখ্যাও কমাতে হবে। কিন্তু সব নিয়মই খাতায়-কলমে।

Advertisement

ক্যানিঙের মহকুমাশাসক প্রদীপ আচার্য বলেন, ‘‘অতিরিক্ত যাত্রী বহন নিয়ে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ঘাট মালিকদের এ নিয়ে বার বার সাবধান করা হয়। তবু অনেক ক্ষেত্রে নিয়ম মানা হচ্ছে না। পুলিশকে বলা হয়েছে দেখার জন্য।’’

জেলা পরিষদ থেকে খেয়া মালিকদের টেন্ডার দেওয়া হয়। কী বলছে জেলা পরিষদ?

জেলা পরিষদের সহ সভাধিপতি শৈবাল লাহিড়ি বলেন, ‘‘আমরা যখন টেন্ডার দিই, তখন যাত্রী পরিষেবার সমস্ত নিয়ম বলে দেওয়া হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয়, খেয়া মালিকেরা যাত্রী সুরক্ষার কথা মাথায় রাখেন না। আমরা প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছি।’’

গোসাবার এক ঘাট মালিক বলেন, ‘‘আমরা যে টাকা দিয়ে ঘাটের টেন্ডার নিই, তার টাকা ঠিক মতো ওঠে না। এরপরে আবার কর্মীদের বেতন দিতে হয়। বাধ্য হয়ে স্পেশাল নৌকো চালাতে হয়।’’

‘স্পেশাল’ নৌকো কী জিনিস?

জানা গেল, যেখানে সারা দিনে তিনটি খেয়া পারাপার করার কথা, সেখানে ঘাট মালিকেরা দু’টি নামান জলে। একটি হাতে রেখে দেওয়া হয়। তাতে ঘাটে যাত্রীদের অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘক্ষণ। কখনও কখনও আধ-এক ঘণ্টাও লেগে যায়। তারপরে যখন অতিরিক্ত নৌকোটি নামানো হয়, তখন তাতে যাত্রী বেশি থাকে। ভাড়াও হাঁকা হয় বেশি। এই নৌকোই চলতি কথায়, ‘স্পেশাল’।

যাত্রীদের বক্তব্য, সরকার থেকে যদি আরও খেয়ার ব্যবস্থা করা হয়, তা হলে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে নৌকো পারাপার কমবে।

অতিরিক্ত যাত্রী বহন করতে গিয়ে ২০১০ সালের ৩১ নভেম্বর মুড়িগঙ্গা নদীতে ট্রলার ডুবি হয়। ওই ঘটনায় প্রায় ৮৩ জনের মৃত্যু হয়। খোঁজ মেলেনি অনেকের। ২০১১ সালের ৩১ অগস্ট ঝড়খালিতে মাতলা নদীতে ভুটভুটি উল্টে মারা যান ৪ জন। ওই বছরই ৩১ অক্টোবর মুড়িগঙ্গায় ট্রলার ডুবিতে কয়েকজনের মৃত্যু হয়।

সুন্দরবন নাগরিক মঞ্চের সম্পাদক চন্দন মাইতি বলেন, ‘‘এই এলাকায় নৌকো, ভুটভুটির অতিরিক্ত যাত্রী বহনের বিরুদ্ধে আমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ঘাট মালিকেরাই স্পেশাল ভুটভুটি চালান।’’ বেশি টাকার লোভে মালিকেরা এ রকম করেন বলে অভিযোগ করেন তিনিও।

তা ছাড়া, রাত সাড়ে ৮টা বেজে গেলে আর খেয়া চালানো হয় না। সে সময়ে নদী পারাপার করতে হলে যাত্রীদের থেকে ২০০-২৫০ টাকা নেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। বাসিন্দাদের দাবি, রাত ১০টা পর্যন্ত খেয়া চলাচল করলে ভাল হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন