জলের জন্য ভোর থেকে লাইন পড়ে যায়

হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকে ৯টি পঞ্চায়েত। সাহেবখালি নদীর অন্য পাড়ে দুলদুলি, সাহেবখালি, গোবিন্দকাটি, যোগেশগঞ্জ ও কালীতলা— এই ৫টি পঞ্চায়েত। স্থানীয় বাসিন্দা স্বপন মণ্ডল, নিতাইপদ রায় বলেন, ‘‘পানীয় জলের বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় লবণাক্ত জল খেতে বাধ্য হচ্ছি।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

হিঙ্গলগঞ্জ শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৭ ০২:৩৪
Share:

কষ্টের-যাত্রা: জল আনতে যাচ্ছেন মহিলারা। নিজস্ব চিত্র

কোথাও পাইপ ফুটো। কোথাও বা পাইপ ফেটে গিয়ে জল বের হচ্ছে। সমস্যা এখানেই শেষ নয়। জল ধরে রাখার চৌবাচ্চার অধিকাংশ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তাই সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষকে বাধ্য হয়েই খেতে হচ্ছে অস্বাস্থ্যকর জল। তা-ও দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে সংগ্রহ করতে সেই হচ্ছে জল।

Advertisement

হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকে ৯টি পঞ্চায়েত। সাহেবখালি নদীর অন্য পাড়ে দুলদুলি, সাহেবখালি, গোবিন্দকাটি, যোগেশগঞ্জ ও কালীতলা— এই ৫টি পঞ্চায়েত। স্থানীয় বাসিন্দা স্বপন মণ্ডল, নিতাইপদ রায় বলেন, ‘‘পানীয় জলের বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় লবণাক্ত জল খেতে বাধ্য হচ্ছি। পরিস্রুত পানীয় জলের অভাবে রোগ-ব্যাধি ছাড়তে চায় না।’’

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জলের অভাব দেখা দিয়েছে দুলদুলি ও সাহেবখালি পঞ্চায়েতের বিভিন্ন গ্রামে। দুলদুলির সাহেবখালি, মঠবাড়ি, দুলদুলি, দেউলি, রমাপুর, পুকুরিয়া, চাঁড়ালখালি, কাঁঠালবেড়িয়া-সহ বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষকে দূর থেকে এক কলসি জল আনতে কয়েক ঘণ্টা সময় লেগে যায়। ওই সব এলাকার বাসিন্দাদের পানীয় জল নিতে রাত থাকতে উঠে কলসি নিয়ে ছুটতে হয় কলের লাইনে। কিন্তু তারপরেও যে জল মিলবে, সে নিশ্চয়তা নেই। প্রায় দিনই কলতলায় জল নিতে গিয়ে চলে ঝগড়া-মারামারি।

Advertisement

সাহেবখালি গ্রামের বাসিন্দা রুমনা মণ্ডল, কাজল মণ্ডলরা বলেন, ‘‘এক কলসি জল নেওয়ার জন্য ভোরে উঠে লাইন দিতে হয়। জল নিয়ে ঘরে ফিরতে ফিরতে দুপুর গড়িয়ে যায়। চৌবাচ্চার কল খারাপ হয়ে গেলে তিন কিলোমিটার হেঁটে তবেই জল নিতে হয়। এত করেও অনেক দিন এক কলসি জলের জন্য ঝগড়াঝাটি হচ্ছে।’’

সাঁতরা গ্রামে পাম্পের মাধ্যমে জল তুলে তা পাঠানো হয় দুলদুলি গ্রামের পাম্প হাউসে। সেখান থেকে জল পাম্পের সাহায্যে পাঠানো হয় চৌবাচ্চাগুলিতে। সেখান থেকে জল নেন গ্রামবাসীরা। কিন্তু ওই জল পানের অযোগ্য বলে জানালেন দুলদুলি পাম্প হাউসের এক কর্মী। তাঁর কথায়, আয়লায় মাটির নীচের পাইপ ফেটে যাওয়ায় জল চৌবাচ্চায় জল পৌঁছনোর আগেই মাঝপথে পড়ে যায়। যেটুকু আসে, তাতে নোংরা মিশে যায়।

কী বলছে প্রশাসন?

হিঙ্গলগঞ্জে সুন্দরবন-লাগোয়া এলাকায় মাটির নীচে পানীয় জলের যথেষ্ট অভাব। বারোশো ফুট পাইপ বসিয়েও পানীয় জল মেলে না। যতটুকু জল পাওয়া যায় তা-ও পাইপের ফাটা অংশ দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ায় চৌবাচ্চা ভরে না। বিকল্প কোনও ব্যবস্থা না নেওয়া পর্যন্ত সুন্দরবন এলাকার মানুষের পানীয় জলের সুরাহা করা মুশকিল বলে জানাচ্ছেন প্রশাসনিক কর্তারা।

এলাকাবাসীর প্রশ্ন, তা হলে এই পরিস্থিতি থেকে কি মুক্তি পাবেন না তাঁরা?

হিঙ্গলগঞ্জের বিডিও সুদীপ্ত মণ্ডল বলেন, ‘‘সুন্দরবন এলাকায় মানুষের কাছে পরিস্রুত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার জন্য জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের তরফ থেকে নতুন প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়েছে। তা শেষ হলেই বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নতি করা হবে। বেশিক্ষণ পাম্প চালানো হবে। তার পরে ভ্যাট পরিষ্কার করে কী ভাবে পানীয় জলের সমস্যর সমাধান করা যায় তা দেখা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন