ফি বর্ষায় জল ঠেলে জল আনাই দস্তুর

সকালের দিকে কেউ জল নিতে যায় না। দুপুরের স্নানের সময়ে নলকূপের কাছে ভিড় জমে। কারণ, জল-ভর্তি কলসি, বালতি নিয়ে জল ঠেলে আসতে গেলে গা ভিজে একসা হয়। তাই স্নানের সময়েই জল তোলার জন্য বরাদ্দ রেখেছেন গাঁয়ের মহিলারা।

Advertisement

দিলীপ নস্কর

মগরাহাট শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৭ ০৩:২১
Share:

নিত্য-যন্ত্রণা: মাঝ পুকুরে কল নয়। রাস্তার পাশে জমা জলে এই দশা। নিজস্ব চিত্র

চারদিকে জলে থই থই। হাঁস চরে বেড়াচ্ছে। গলা বের করে আছে নলকূপ। সেখান থেকেই হাঁটু জল ভেঙে কলসি কাঁখে পানীয় জল আনতে যাচ্ছেন মহিলারা।

Advertisement

বন্যা কবলিত এলাকার চিত্র নয়। মগরাহাট ২ ব্লকের রাধানগর মুসলিমপাড়া গ্রামের এক মাত্র পানীয় জলের নলকূপটি থেকে এ ভাবেই বছরের বেশ খানিকটা সময় জল আনতে হয় মহিলাদের। রাস্তা থেকে প্রায় ৪০ ফুট দূরত্বে কল। ওই অংশটি ডুবে থাকে জলে। যাতায়াতের রাস্তা নিচু হওয়ায় ফি বছর বর্ষায় এই পরিস্থিতি এখন অনেকটা যেন গা-সওয়া হয়ে গিয়েছে মহিলাদের। তাঁরা জানালেন, পরিস্থিতি কারও অজানা নয়। তবু কেউ কোনও ব্যবস্থা নেয় না। ওই ব্লকের মগরাহাট পূর্ব পঞ্চায়েতে রাধানগর মুসলিমপাড়া ও খাঁপাড়ার জন্য বরাদ্দ এই একটিই নলকূপ। পাইপ লাইনের জলের সরবরাহ এখনও হয়নি এলাকায়। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত ওই গ্রামে প্রায় ছ’হাজার মানুষের বাস। গ্রামের মাঝামাঝি পুকুর-লাগোয়া মূল রাস্তার পাশে ২০-২৫ বছর আগে সরকারি টাকায় নলকুপটি বসানো হয়েছিল। এমন জায়গা নলকূপটি বসানো হয়েছে, বর্ষা এলেই তার চারদিকে জল জমে যায়। বেশি বৃষ্টি হলে নলকূপও অর্ধেক ডুবে থাকে। জল আনতে যাওয়ার রাস্তার জমা জলে পানা ভরা।

সকালের দিকে কেউ জল নিতে যায় না। দুপুরের স্নানের সময়ে নলকূপের কাছে ভিড় জমে। কারণ, জল-ভর্তি কলসি, বালতি নিয়ে জল ঠেলে আসতে গেলে গা ভিজে একসা হয়। তাই স্নানের সময়েই জল তোলার জন্য বরাদ্দ রেখেছেন গাঁয়ের মহিলারা। জমা জলে হাঁটতে গিয়ে অনেকের পা কাটে। সাপের ছোবলও খেয়েছেন অনেকে। সন্ধ্যায় আলো না থাকায় ও পথে কেউ পা মাড়ান না।

Advertisement

গ্রামের কিশোরী ইনসিয়া রানি খাতুন জানায়, সারা দিনে তিন-চারবার জল ঠেলে জল আনতে হয়। অনেকবার জলের নীচে শামুকের খোলে পা কেটে রক্তারক্তি হয়েছে। একই অভিযোগ আশাদুল খাঁ, নুর হোসেন খাঁয়ের। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘ দৈনন্দিন সমস্যা তো আছেই, গ্রামে কারও বাড়িতে অনুষ্ঠান থাকলে জল ঠেঙিয়ে বার বার জল আনতে যাওয়াটা খুবই সমস্যার।’’

মগরাহাট পূর্ব পঞ্চায়েতের ওই গ্রামের সদস্য মান্নান খাঁ বলেন, ‘‘সমস্যায় বিষয়ে পঞ্চায়েত থেকে ব্লক প্রশাসনকে একাধিক বার জানিয়েও কোনও সুরাহা হচ্ছে না।’’ মগরাহাট ২ বিডিও অনির্বাণ বসু জানিয়েছেন, বর্ষার পরেই মাটি ফেলে সমস্যা সমাধান করা হবে। এমন প্রতিশ্রুতি অবশ্য গ্রামের মানুষের কাছে নতুন নয়। তবু এ বার কী হয়, দেখার আশায় বসে সকলে। তত দিন জল ঠেলে জল বওয়ার কাজ থেকে নিষ্কৃতি নেই তাঁদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন