সমুদ্রবাঁধে ধস, তলিয়ে যাচ্ছে পিকনিক স্পট

এই পরিস্থিতির মধ্যে শুধু সুকুমার জানা পড়ে নেই। পাথরপ্রতিমার জি প্লট পঞ্চায়েতের গোবর্ধনপুর গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দারই ঘর-জমি-বাগানের এই দশা।

Advertisement

দিলীপ নস্কর

পাথরপ্রতিমা শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৯ ০২:১৪
Share:

ভাঙন: বাড়ছে আতঙ্ক। নিজস্ব চিত্র

সমুদ্রের পাশেই ঘর সুকুমার জানার। বাঁধে উঠে সমুদ্রের দিকে আঙুল তুলে দেখালেন, প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে তাঁর বসতি ছিল। ছিল আট বিঘা কৃষিজমিও। সব গিলেছে সমুদ্র। ভাঙতে ভাঙতে সমুদ্র এসেছে গ্রামের দিকে। আর পিছোতে-পিছোতে এই নিয়ে তাঁরা চারবার ঘর পাল্টালেন।

Advertisement

এই পরিস্থিতির মধ্যে শুধু সুকুমার জানা পড়ে নেই। পাথরপ্রতিমার জি প্লট পঞ্চায়েতের গোবর্ধনপুর গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দারই ঘর-জমি-বাগানের এই দশা।

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই গ্রাম-লাগোয়া সমুদ্রবাঁধে ২০০৬ সালে ধস নামার পরে ইট বসিয়ে মেরামতি করা হয়েছিল। কিন্তু তারপর থেকে বাঁধটির সে ভাবে সংস্কার না হওয়ায় কয়েক বছরের মধ্যে সমুদ্রের ঢেউয়ের তোড়ে ভাঙল সেই নির্মাণ। সে সময়ে তৈরি প্রায় ১ কিলোমিটার সমুদ্রবাঁধের মধ্যে বর্তমানে প্রায় ৫০০ মিটার বাঁধেই ফাটল ধরেছে। অমাবস্যা বা পূর্ণিমার জোয়ারে প্রায় ১৫ ফুট উচ্চতার ঢেউ ধাক্কা মারে বাঁধে। ঢেউয়ের তোড়ে প্রতিদিনই বাঁধের কোনও না কোনও অংশে ধস নামে। আতঙ্ক তাড়া করে বেড়াচ্ছে এলাকাবাসীকে। বর্ষায় যে কোনও মুহূর্তে সমুদ্রবাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হতে পারে বলে আশঙ্কা তাঁদের। তাঁদের অভিযোগ, গোবর্ধনপুর এলাকা হল জি প্লটের সদর দরজা। সুতরাং ওখানে সমুদ্রবাঁধ ভাঙলে সারা দ্বীপ প্লাবিত হবে। ওই দ্বীপে গোবর্ধনপুর ছাড়াও রয়েছে বুড়াবুড়ির তট, সীতারামপুর, ইন্দ্রপুর, উত্তর ও দক্ষিণ সুরেন্দ্রগঞ্জ, সত্যদাসপুর গ্রামগুলি। বাঁধ ভাঙলে প্লাবিত হবে এই গ্রামগুলিও।

Advertisement

ওই বাঁধের পাশে বছর দশেক আগে পঞ্চায়েতের উদ্যোগে ঝাউবন-ঘেরা একটি পিকনিক স্পট তৈরি হয়েছিল। ওই পিকনিক স্পটে বসার জায়গা, শৌচালয়, পানীয় জলের ব্যবস্থা— সবই ছিল। অদূরে ছিল সুন্দর সাজানো-গোছানো ঘর। পিকনিক স্পটটিও ভাঙনের কবলে। কয়েক বছরের মধ্যে প্রায় ১০০ মিটার পিকনিক স্পট সমুদ্র তলিয়ে গিয়েছে। ঢেউ আটকাতে পঞ্চায়েত থেকেই ইটের দেওয়াল তুলে দেওয়া হয়েছিল। ঢেউয়ের তোড়ে সে প্রাচীরও ভেঙে পড়েছে। সমুদ্রঘেঁষা ঝাউ গাছগুলি উল্টে পড়ে আছে।

ওই এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, বর্ষা পড়লেই সেচ দফতর বাঁধ মেরামতির কাজ শুরু করে। কিন্তু বর্ষায় কাজ ঠিকমতো হয় না। এ দিকে ফি বছর এ জন্য লাখ লাখ টাকা জলে চলে যাচ্ছে। ভরা কোটালে বাঁধ ভেঙে নোনাজলে প্লাবিত হতে পারে এলাকা।

ওই এলাকার বাসিন্দা পাথরপ্রতিমা পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য স্বর্ণজিৎ বাগ ও রামপদ দাস বলেন, ‘‘বাঁধ মেরামতির জন্য সেচ দফতরকে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া পঞ্চায়েতের তৈরি ওই পিকনিক স্পটটি বাঁচাতেও সকলকে আবেদন করা হয়েছে।’’

পাথরপ্রতিমার বিধায়ক সমীর জানা বলেন, ‘‘পিকনিক স্পটটি আপাতত অস্থায়ী ভাবে সরানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাকাপাকি ভাবে সংস্কারের কাজ অচিরেই শুরু হবে। আমরা সর্বদাই বাঁধের উপরে নজর রাখেছি।’’ পাথরপ্রতিমা সাব ডিভিশনের সেচ দফতর থেকে জানানো হয়েছে, বাঁধের ধস নামা অংশগুলিতে শীঘ্রই সংস্কারের কাজ শুরু হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন