ষণ্ড: রায়দিঘিতে। নিজস্ব চিত্র
ধরা পড়েছে ভোলা। সে এখন থানায়। এ খবর রটতেই সকাল থেকে দলে দলে থানায় হাজির লোকজন। তাঁদের কেউ কেউ ভোলার কাছে গিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ছে, এ কী হাল হল রে তোর! ভোলাও এসব শুনে বক্তাদের দিকে অবুঝ নয়নে তাকিয়ে থাকছে।
ভোলা অবশ্য কোনও দুষ্কৃতী নয়। এ হল ধর্মের ষাঁড়। এলাকায় যে ‘ভোলা’ নামেই পরিচিতি।
রবিবার রাতে দু’টি ধর্মের ষাঁড়কে গাড়ি করে পাচার করতে যাচ্ছিল পাঁচ দুষ্কৃতী। গাড়ি নিয়ে তারা রায়দিঘির মণি নদীর সেতুর উপরে উঠতেই উপস্থিত লোকজনদের সন্দেহ হয়। গাড়ি আটকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়। পাচারকারীদের মারধরও করা হয়। তারপরই তাদের আসল উদ্দেশ্য বলে ফেলে তারা।
টহলদারি পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে কালো ও ধূসর রঙের দু’টি ষাঁড় ও গাড়ি আটক করে এবং পাঁচ দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করে থানায় আনে। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের নাম— মজিত গাজি, ফিরোজ মোল্লা, বাবলু মোল্লা, সফিক শেখ ও হিফিজ শেখ। তাদের বাড়ি রায়দিঘি, বারুইপুর ও বিষ্ণুপুর এলাকায়। ধৃতদের সোমবার ডায়মন্ড হারবার আদালতে তোলা হলে পুলিশ ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।
দুষ্কৃতীরা যখন গাড়িতে তোলে তখন ধর্মের ষাঁড়দু’টি পায়ে চোট পায়। ষাঁড়দের পরিচর্যায় তাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে পুলিশ। তাদের স্বাস্থ্যপরীক্ষার জন্য পশু চিকিৎসককে আনা হয়েছে থানায়। তবে শুধু চিকিৎসকের আশায় না থেকে ষাঁড়দু’টির পায়ে গরম জলের সেক ও চুন-হলুদ লাগানোর ব্যবস্থা আগেই করা হয়।
ষাঁড়দু’টি কী খাবে, তা নিয়েও চিন্তিত হয়ে প়ড়েছে পুলিশ। সাধারণ ভাবে এ জাতীয় জীবকে ঘাস-খড়-বিচালিই দেওয়া হয়। কিন্তু বাজারে, রাস্তা-ঘাটে, দোকানিদের দেওয়া ভাল-মন্দ খাবার খেয়েই ওরা বেড়ে উঠেছে। যাইহোক, শেষমেশ খাবারের ব্যবস্থা ওদের জন্য করা হয়। পাশাপাশি, পশু চিকিৎসকের পরামর্শমতো দু’জনের উপর নজরদারির জন্য দু’জন অস্থায়ী কর্মীও রাখা হয়েছে।
রায়দিঘি থানার ওসি অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায় সাফ জানান, দু’টি নিরীহ জীবের উপরে বড় মায়া পড়ে গিয়েছে। একটু ভয়ও ছিল। তবে, সকালে এলাকা থেকে দল বেঁধে অনেকে এসে কালো রঙের ষাঁড়টিকে ‘ভোলা’ নামে ডাকতেই কাজ হাসিল। থানার সামনের মাঠে ষাঁড়দু’টিকে বেঁধে রাখা রয়েছে। এক পুলিশকর্মী জানান, ভোলাকে আমরা পোষ মানিয়ে থানার সামনে বেঁধে রাখব। দুষ্ট লোক দেখলেই ও যেন
গুঁতিয়ে দেয়।