শনিবার রাতে ঘটিহারানিয়া বাজারে নেপালি নৈশপ্রহরী খুনের ঘটনায় সোমবার পর্যন্ত কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তবে পাঁচ জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে তারা। সোমবার বিকেলে ফিঙ্গারপ্রিন্ট বিশেষজ্ঞেরা ঘটনাস্থলে এসে হাতের ছাপের নমুনা সংগ্রহ করেন।
এ দিকে, দোষীরা কেউ ধরা না পড়ায় আতঙ্কে আছেন গ্রামবাসীরা। ক্ষোভও দানা বাঁধছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে। অতীতের নানা অভিজ্ঞতায় পুলিশের ভূমিকায় তাঁদের তেমন আস্থা নেই। এলাকার সব ক’টি রাজনৈতিক দল ও ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, সাধারণ মানুষের পাশাপাশি পুলিশও জানে কারা এলাকায় তোলাবাজি, মস্তানি, চুরি, ডাকাতি করে। তা-ও পুলিশ তাদের ধরে না। এমনকী, দুষ্কৃতীদের ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার পরেও তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়, এমন অভিযোগও আছে। ঘটিহারানিয়া বাজার থেকে দু’শো মিটারের মধ্যেই পুলিশ ক্যাম্প থাকলেও দিন দিন তাকে দুর্বল করে দেওয়া হচ্ছে।
ঘটিহারানিয়া বাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সম্পাদক অনন্ত সাঁপুই বলেন, ‘‘আমরা আতঙ্কিত। দেওয়ালে পিঠ থেকে গিয়েছে। পুলিশ দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করার জন্য মঙ্গলবার পর্যন্ত সময় চেয়ে নিয়েছে। তার মধ্যে গ্রেফতার না হলে বুধবার থেকে লাগাতার বাজার ও রাস্তা বন্ধ রাখবেন ব্যবসায়ীরা।’’ খুনের প্রতিবাদে সোমবার ব্যবসা বন্ধ রাখা হয়েছিল।
দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে সঙ্ঘবদ্ধ হওয়ার লক্ষে বুধবার এলাকায় গণ কনভেনশনের ডাক দিয়েছে সিপিএম, তৃণমূল, এসইউসি ও ব্যবসায়ী সমিতি। স্থানীয় বাসিন্দা ও কুলতলির বিধায়ক সিপিএমের রামশঙ্কর হালদার বলেন, ‘‘এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশের ডাকা সর্বদল বৈঠকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছি, এ ক্ষেত্রে শাসক দল আশ্রিত দুষ্কৃতীদেরও রেয়াত করা চলবে না।’’ এসইউসি নেতা গোবিন্দ হালদার বলেন, ‘‘এলাকায় ঘটে যাওয়া লাগাতার অপরাধ আটকাতে ২০০২ সাল থেকে স্থানীয় ফ্লাড সেন্টারে পুলিশ ক্যাম্প চালু করা হলেও দিন দিন তা দুর্বল করে দেওয়া হচ্ছে। অথচ বাজারে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক রয়েছে। ভোর ৪টে থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বাজারে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকার লেনদেন চলে। কিন্তু নিরাপত্তার দিকটি অবহেলিত। পুলিশ সব জেনে-বুঝেও নির্বিকার থাকে।” বাজার কমিটির সদস্য তথা তৃণমূল নেতা আবু তালেব শেখের কথায়, ‘‘পুলিশের উপরে সম্পূর্ণ ভরসা না রেখে ব্যবসায়ীদেরও সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে মোকাবিলা করতে হবে।’’ রাজনৈতিক দল ও ব্যবসায়ীরা মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, বাজারে পুলিশ ক্যাম্প তুলে আনা, ক্যাম্পে অন্তত একজন অফিসার নিয়োগ করা ও মানবিক কারণে বিদেশি ওই নৈশপ্রহরীর মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে আবারও দাবি জানানো হবে। সেই সঙ্গে নিজেরাও চাঁদা তুলে নিহতের পরিবারের হাতে আর্থিক সাহায্য তুলে দেবেন। পুলিশের পাশাপাশি নিজেরাও পালা করে রাতে বাজার পাহারা দেবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
পুলিশের বক্তব্য, ডাকাতির চেষ্টা ও খুনের ঘটনায় কারা জড়িত, তা ইতিমধ্যেই জানা গিয়েছে। তদন্ত চলছে। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানান, পুলিশ ক্যাম্প বাজারে তুলে আনতে চাইলেও স্থানাভাবে তা সম্ভব হয়নি। কুলতলি থানা এলাকার মধ্যে একাধিক এই রকম ক্যাম্প রয়েছে। অফিসার সংখ্যার অভাবে সর্বত্র তাঁদের রাখা যায় না বলেই ক্যাম্পে শুধুমাত্র রাইফেলধারী কনস্টেবলরা থাকেন। তা ছাড়া, ঘটিহারানিয়া ফ্লাড সেন্টারটি ভাঙাচোরা। জানালা, দরজা, বিদ্যুৎ, শৌচাগার, পানীয় জল— কিছুই নেই। ভবনটির অবস্থানও ফাঁকা জায়গায়। ওই পরিবেশে রাইফেলধারী পুলিশ কর্মীদেরও নিরাপত্তা থাকে না। তা-ও যথাসম্ভব পরিষেবা দেওয়া হয়।