শিশু ও নারী পাচার রুখতে পুলিশের সচেতনতা শিবির

গত চার বছরে সূর্যের আলো দেখিনি স্যার। প্রতি দিন ২০-২৫ জন পুরুষ এসে অত্যাচার উপরে যৌন অত্যাচার চালাত। কথাগুলো পুলিশ আধিকারিকের কাছে বলেছিল এক কিশোরী, যাকে ভিনরাজ্যের যৌনপল্লি থেকে উদ্ধার করে এনেছিল পুলিশ।

Advertisement

দিলীপ নস্কর

ডায়মন্ড হারবার শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:০২
Share:

গত চার বছরে সূর্যের আলো দেখিনি স্যার। প্রতি দিন ২০-২৫ জন পুরুষ এসে অত্যাচার উপরে যৌন অত্যাচার চালাত।

Advertisement

কথাগুলো পুলিশ আধিকারিকের কাছে বলেছিল এক কিশোরী, যাকে ভিনরাজ্যের যৌনপল্লি থেকে উদ্ধার করে এনেছিল পুলিশ। মেয়েটি আরও বলেছিল, ‘‘এত কষ্ট সহ্য করতে পারতাম না, জানেন। কিন্তু কিছু বললেই শুরু হতো মারধর। সারা শরীর ফুলে যেত। অসম্ভব ব্যথা। তার মধ্যেই চলত পুরুষমানুষের অত্যাচার। মনে মনে বলতাম, এ বার মৃত্যু হলেই ভাল। খোলা হাওয়ায় কোনও দিন আর শ্বাস নিতে পারব, ভাবিনি।’’

শিশু ও নারী পাচার নিয়ে ক’দিন আগে সচেতনতা শিবির হয়ে গেল দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাটে। সেখানেই মেয়েটির কথা জানান জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পশ্চিম) চন্দ্রনাথ বর্ধন। শিশু ও নারী পাচার রুখতে পুলিশ এ বার আরও কঠোর পদক্ষেপ করবে বলে জানান তিনি। সচেতনতা শিবিরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ফলতার ডিএসপি সন্দীপ সেন, ডায়মন্ড হারবার মহিলা থানার আধিকারিক পিঙ্কি ঘোষ, বিডিও অনির্বাণ সেন, মগরাহাটের ওসি হিমাংশু বিশ্বাস, মগরাহাট পূর্ব কেন্দ্রের বিধায়ক নমিতা সাহা। দর্শকের আসনে উপস্থিত ছিলেন আইসিডিএস ও আশা কর্মী-ছাড়াও স্থানীয় মানুষজন।

Advertisement

যৌনপল্লিতে বিক্রি হওয়ার পরে কী ভয়ঙ্কর পরিণতি হতে পারে মেয়েদের, সে কথা উল্লেখ করেন পিঙ্কি ঘোষ। জানান, পাচার করে নিয়ে যাওয়ার পরে চোখে গরম শিক ঢুকিয়ে অন্ধ করে দেওয়া বা হাত-পা কেটে প্রতিবন্ধী করে রাস্তায় ভিক্ষা করতে বসানো হয় অনেককে। পাচার হওয়া শিশু ও নারীদের কিডনি বের করে ভিন রাজ্যে এমনকী, ভিন দেশেও বিক্রি করা হয়।

স্মার্ট ফোনের ব্যবহার নিয়ে কয়েকটি ঘটনার উদাহরণ টেনে পিঙ্কিদেবী জানান, মিসড্ কল দিয়ে ভাব জমায় অনেক পাচারকারী। গলা নকল করে কথা বলে অন্য প্রান্তের কিশোরী বা মহিলাদের সঙ্গে ভাব জমায়। এ সব নিয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন পুলিশ আধিকারিকেরা।

ডিএসপি ফলতা আবার বলেন, ‘‘সারা ভারতবর্ষের মধ্যে এই জেলায় শ’য়ে শ’য়ে নারী-শিশু পাচার হয়ে যাচ্ছে। এটা আটকাতে হলে পরিবারের লোকজনকে এবং স্কুলগুলিকেও সজাগ হতে হবে।’’

সভায় বক্তারা আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়ে আলোচনা করেন। তা হল, পাচারের পরে উদ্ধার করে আনা মেয়েদের সামাজিক ভাবে যেন হেনস্থা হতে না হয়, সে ব্যাপারেও সকলের সচেতন হওয়া জরুরি বলে মনে করেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন