নজরদারির অভাব পিকনিক স্পটে, এখনও খোঁজ মেলেনি সেই যুবকের

নদীর পাড়ে দিনভর অপেক্ষায় কাটিয়েছেন শুভঙ্করের আত্মীয়-বন্ধুরা। বাকি তিনজনের দেহ ময়নাতদন্তের পরে এ দিন বিকেলের দিকে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

দিলীপ নস্কর

কুলপি শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৮ ০৭:০০
Share:

চলছে-তল্লাশি: কুলপিতে। —নিজস্ব চিত্র।

স্নান করতে নেমে তলিয়ে যাওয়া যুবকের খোঁজ মিলল না সোমবারও। রবিবার দুপুরে কলকাতার গড়িয়াহাটের পণ্ডিতিয়া রোড থেকে ১৬ জনের একটি দল কুলপিতে পিকনিক করতে এসেছিল। হুগলি নদীতে স্নান করতে নেমে বিকেলের দিকে তলিয়ে যায় চার যুবক। তিন জনের দেহ উদ্ধার হলেও শুভঙ্কর নারুয়া নামে বছর ছাব্বিশের যুবকের এখনও হদিস মেলেনি। সোমবার সকাল থেকে মাছ ধরা নৌকো, স্পিড বোট, ডুবুরি নামিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে কুলপি থানার পুলিশ। নদীর পাড়ে দিনভর অপেক্ষায় কাটিয়েছেন শুভঙ্করের আত্মীয়-বন্ধুরা। বাকি তিনজনের দেহ ময়নাতদন্তের পরে এ দিন বিকেলের দিকে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কুলপি ব্লকের বেলপুকুর পঞ্চায়েতে নিশ্চিন্তপুর পয়লা নম্বর ঘেরি গ্রামের কাছে হুগলি নদীর তীরে গজিয়ে ওঠা চর জনপ্রিয় পিকনিক স্পট। কুলপির ১১৭ নম্বর জাতীয় সড়কের নিশিন্তপুর চৌমাথা মোড় থেকে ডান দিকে সোজা প্রায় আড়াই কিলোমিটার দুরে হুগলি নদী। নদীবাঁধ-লাগোয়া প্রায় তিন কিলোমিটার জুড়ে ওই চরে বছর পাঁচেক ধরে শীতের মরসুমে বহু দল আসে পিকনিক করতে। চরটি সেচ দফতরের হলেও বহু বছর ধরে বন্দর কর্তৃপক্ষের অধীনে রয়েছে। ফলে পিকনিক স্পটটি রক্ষণাবেক্ষণের দায় পুলিশ বা পঞ্চায়েতের নেই। পানীয় জল, শৌচালয়, যাত্রী ছাউনি বা আলোর ব্যবস্থাও অমিল।

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, অরক্ষিত পিকনিক স্পটে পিকনিক করতে এসে গত পাঁচ বছরে জনা দশেক জলে তলিয়ে গিয়ে মারা গিয়েছেন। স্থানীয় মানুষের বক্তব্য, চরের সামনেই নদী খুব গভীর। চোরা স্রোতও রয়েছে। পিকনিক করতে আসা যাত্রীদের নদীতে নামার বিষয়ে মৌখিক ভাবে নিষেধ করলেও অনেকেই তা শোনে না। অনেকে মদ্যপ অবস্থায় নদীতে নেমে দুর্ঘটনায় পড়েন।

Advertisement

স্থানীয় মানুষজন জানালেন, ডিসেম্বর থেকে মাস তিনেক পিকনিকের ভরা মরসুমে তবু এলাকায় পুলিশের দেখা মেলে। কিন্তু বাকি বছরভর নজরদারির কোনও ব্যবস্থা থাকে না।

তবে পর পর দুর্ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। সোমবার সকালে তল্লাশি অভিযানে নেতৃত্ব দিতে ঘটনারস্থলে আসেন কুলপির বিডিও সঞ্জীব সেন, ওসি সঞ্জয় দে। ছিলেন জাতীয় বিপর্যয় দফতরের কর্মী ও পঞ্চায়েতের লোকজন। পিকনিক স্পটের পরিকাঠামো নিয়ে বেলপুকুর পঞ্চায়েতের প্রধান ঝুমা বিশ্বকর্মার বক্তব্য, ‘‘এটা ঠিক পিকনিক স্পট নয়। ফাঁকা নদীর ধার দেখে পর্যটকেরা আসেন। ফলে, কে এল তা আমরা দেখি না।’’ তবে তিনি বলেন, ‘‘এ বার থেকে কর্মী পাঠিয়ে নজরদারি করার চেষ্টা করব।’’

ওসি জানান, গত পাঁচ বছর ধরে পিকনিকের মরসুমে পুলিশ মোতায়ন করা হয়। কেউ নদীতে নামছে কিনা তা নজরদারি করা হয়। এ বার থেকে পর্যটকদের নদীতে নামতে নিষেধ করে মাইকে প্রচার করা হবে। পাশাপাশি, নদীতে নামতে নিষেধ করে বোর্ডও লাগানো হবে। সারা বছর ধরে পুলিশ মোতান রাখা যায় কিনা, সে বিষয়েও ভাবনাচিন্তা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন