Ichamati River

ইছামতী ফের ভরছে কচুরিপানায়

স্বাভাবিক ভাবেই ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে নদীপাড়ের বাসিন্দাদের মধ্যে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বনগাঁ শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০২০ ০২:৩৩
Share:

পুনর্মুষিক: এই চেহারা নিয়েছে নদী। নিজস্ব চিত্র

ইছামতী নদী থেকে কচুরিপানা তোলার জন্য কয়েক মাস আগেই ৭৮ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছিল রাজ্য সেচ দফতর। নভেম্বর মাসে কচুরিপানা তোলার কাজ শুরুও হয়েছিল। হঠাৎ করেই ওই কাজ বন্ধ হয়ে যায়। আজও সেই কাজ শুরু করতে পারেনি বিদ্যাধরী ড্রেনেজ ডিভিশন।

Advertisement

এ দিকে, নতুন করে বনগাঁ শহর ও আশপাশের এলাকায় নদীতে কচুরিপানা জমতে শুরু করেছে। স্বাভাবিক ভাবেই ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে নদীপাড়ের বাসিন্দাদের মধ্যে। তাঁদের বক্তব্য, ইতিমধ্যেই গরম পড়তে শুরু করেছে। কচুরিপানা কারণ মশার উপদ্রব শুরু হয়েছে। তৃণমূলের পক্ষ থেকেও নদী থেকে দ্রুত কচুরিপানা তোলার দাবি করা হয়েছে। শুক্রবার বনগাঁ উত্তর বিধানসভা তৃণমূল কংগ্রেস কমিটির তরফে ‘বাংলার গর্ব মমতা’ কর্মসূচি পালন করা। সেখানে সাংবাদিক সম্মেলন করেন বনগাঁ উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান গোপাল শেঠ। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য সেচ দফতর ইছামতী নদী থেকে কচুরিপানা তোলার জন্য অর্থ বরাদ্দ করলেও বিদ্যাধরী ড্রেনেজ ডিভিশন কর্তৃপক্ষের গাফিলতির জন্য কচুরিপানা তোলা বন্ধ রয়েছে। গরম পড়েছে। এখনই নদী থেকে কচুরিপানা তোলা না গেলে এ বারও জ্বর-ডেঙ্গির প্রকোপ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকছে। কেন্দ্রের অবহেলায় নদীটি মৃত্যুর দিকে চলে যাচ্ছে।’’ বনগাঁতে দ্রুত নদী থেকে কচুরিপানা তোলার কাজ শুরু করার জন্য সেচমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীকে জানানো হয়েছে বলে গোপাল জানিয়েছেন।

সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গোপালনগরের বিভূতিভূষণ স্মৃতিঘাট এলাকা থেকে বনগাঁ শহর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৮ কিলোমিটার নদী পথ থেকে কচুরিপানা তোলা হবে প্রকল্প হাতে নেয় বিদ্যাধরী ড্রেনেজ ডিভিশন। কচুরিপানা তোলা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অর্থ অনুমোদিত হয় ৭৮ লক্ষ টাকা। নভেম্বর মাসে বিভূতিভূষণ স্মৃতিঘাট এলাকায় কাজ শুরু হয়েছিল। এর ফলে বহু দিন পর নদীতে জলের মুখ দেখতে শুরু করেছেন নদীপাড়ের বাসিন্দারা। কারণ, দীর্ঘ দিন ধরে নদীবক্ষ কচুরিপানায় ভরা ছিল। স্নান করা, মাছ ধরা, চাষের কাজে নদীর জল ব্যবহার বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। নদীতে কচুরিপানার কারণে মশা ও সাপের উপদ্রবে বাসিন্দারা তিতিবিরক্ত হয়ে উঠেছিলেন। নদী কচুরিপানা মুক্ত হতে দেখে মানুষ স্বস্তি পেয়েছিলেন। কিন্তু কয়েক দিন কাজ চলার পরে তা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।

Advertisement

বিদ্যাধরী ড্রেনেজ ডিভিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, বনগাঁর মানুষ, রাজনৈতিক নেতৃত্ব, জনপ্রতিনিধিরা ওই সময়ে সাড়ে ৮ কিলোমিটার নদী পথের পরিবর্তে বনগাঁ মহকুমা থাকা নদীর সমস্ত অংশ থেকে কচুরিপানা তোলার দাবি তোলেন। কারণ, অতীতে দেখা গিয়েছে, বিক্ষিপ্ত ভাবে নদীর একাংশ থেকে কচুরিপানা তোলার কয়েকমাস পরে ফের নদী কচুরিপানায় ভরে উঠেছে। এলাকার মানুষের বক্তব্য, এক সঙ্গে মহকুমায় থাকা সমস্ত নদী পথ থেকে কচুরিপানা তোলা না হলে সমস্যা মিটবে না।

বনগাঁর প্রাক্তন বিধায়ক গোপাল বলেন, ‘‘যে ভাবে কচুরিপানা তোলা হচ্ছিল তাতে অর্থের অপচয় হওয়ার আশঙ্কা ছিল। আমরা বনগাঁ মহকুমার সমস্ত অংশ থেকে কচুরিপানা তোলার দাবি করেছি। সেচমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীকে জানানো হয়। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন।’’

বিদ্যাধরী ড্রেনেজ ডিভিশনের পক্ষে জানানো হয়েছে, বনগাঁ মহকুমায় দত্তপুলিয়া থেকে কালাঞ্চি পর্যন্ত নদীপথ থেকে কচুরিপানা তুলতে অর্থ বরাদ্দের জন্য সেচ দফতরের কাছে আবেদন করা হয়েছে। ডিপিআর তৈরি করা হয়েছে। অর্থ মঞ্জুর হয়ে গেলেই কচুরিপানা তোলার কাজ শুরু করা হবে নতুন করে। কিন্তু নদীপাড়ের বাসিন্দারা হতাশ। কবে অর্থ অনুমোদন হবে, তা নিয়ে তাঁরা সংশয়ে। সামনেই পুরসভার ভোট। ওই সময়ে এমনিতেই কাজ বন্ধ থাকে। বাসিন্দারা জানালেন, মশা-সাপের উপদ্রব শুরু হয়েছে। নদীতে ভেচাল, কোমর, ডালপালা, বাঁশ তুলে ফেলার দাবি তুলেছেন বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, নদীতে থাকা সমস্ত বাধা সরিয়ে ফেলতে হবে।

গত বছর বারাসতে জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে ইছামতী থেকে কচুরিপানা তোলার বিষয়টি তুলেছিলেন গোপাল। তারপরেই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে নদী থেকে কচুরিপানা তুলতে তৎপরতা শুরু করেছিল সেচ দফতর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন