কোথাও দরজা ভাঙা, কোথাও তালা বন্ধ 

ট্রেন থেকে নেমে হন্যে হয়ে শৌচাগার খুঁজছিলেন মিনতি বিশ্বাস। প্ল্যাটফর্মের এক প্রান্তে শৌচাগার খুঁজে পেলেও প্রয়োজন মিটল না। কারণ, শৌচাগার ছিল তালা বন্ধ।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

হাবড়া শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০৫:০৮
Share:

বেআব্রু: অশোকনগর স্টেশনে মহিলা শৌচালয়ের দশা। ছবি: সুজিত দুয়ারি

ট্রেন থেকে নেমে হন্যে হয়ে শৌচাগার খুঁজছিলেন মিনতি বিশ্বাস। প্ল্যাটফর্মের এক প্রান্তে শৌচাগার খুঁজে পেলেও প্রয়োজন মিটল না। কারণ, শৌচাগার ছিল তালা বন্ধ। বাধ্য হয়ে তিনি স্টেশন-সংলগ্ন একটি বাড়িতে ছুটলেন। বাড়ির সদস্যদের অনুরোধ করে ব্যবহার করতে পারলেন শৌচালয়।

Advertisement

ঘটনাটি বনগাঁ-শিয়ালদহ শাখার সংহতি স্টেশনের ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মের। শৌচাগার থাকা সত্ত্বেও অনেক মহিলা এখানে প্রয়োজন মেটাতে পারেন না।

যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, মহিলা শৌচাগারে তালা দেওয়া থাকে। শৌচাগারে যেতে হলে টিকিট কাউন্টারে গিয়ে রেলকর্মীদের কাছ থেকে চাবি এনে তারপরে শৌচাগার ব্যবহার করা যায়। অনেকে তা জানেন না। আবার জানলেও সংকোচবশত চাবি চাইতে যান না।

Advertisement

নিত্যযাত্রী এক মহিলার কথায়, ‘‘প্রয়োজনের সময়ে চাবি কোথায় পাওয়া যাবে, তা অনেকেই জানতে পারেন না। ফলে তাঁদের দূর্ভোগের মধ্যে পড়তে হয়।’’ স্থানীয় এক মহিলা বলেন, ‘‘বাড়িতে অচেনা কোনও মহিলা এলেই আমরা বুঝে যাই শৌচাগারে যাবেন। এমনটা দেখা আমাদের অভ্যাস হয়ে গিয়েছে।’’

বনগাঁ-শিয়ালদহ শাখায় শৌচাগার নিয়ে মহিলাদের সমস্যা দীর্ঘদিনের । কোথাও শৌচাগার তালা বন্ধ থাকে। কোনও স্টেশনে শৌচাগার এতটাই নোংরা, সেখানে ঢুকেও বেরিয়ে আসেন অনেকে। কোথাও আবার শৌচাগারের দরজা ভাঙা। নিত্যযাত্রী মহিলাদের অভিযোগ, শৌচাগার নিয়মিত সাফ করার জন্য কর্মীরা রয়েছেন। তাঁরা প্ল্যাটফর্ম চত্বর সাফ-সুতরো করলেও শৌচাগারের দিকে নজর দেন না।

হাবড়া স্টেশনে গিয়ে দেখা গেল, মহিলাদের জন্য শৌচাগার রয়েছে। কিন্তু তারমধ্যে মল জমে আছে। প্রস্রাব চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। দুর্গন্ধে টেঁকা দায়। এক মহিলা জানালেন, হামেশাই এমন অবস্থা থাকে শৌচাগারের।

অশোকনগর স্টেশনে দেখা গেল, দু’টি শৌচাগার। একটির দরজা ভাঙা। অন্যটিতে যেতে হলে টাকা দিতে হয়। দেওয়ালে লেখা আছে, ছোটবাড়ি (প্রস্রাব) ২ টাকা, বড়বাড়ি ৪ টাকা (মল)। নন্দিতা চক্রবর্তী নামে এক যাত্রী বলেন, ‘‘আমরা টিকিট কেটে ট্রেনে যাতায়াত করি। তা হলে কেন শৌচাগারে যেতে টাকা দিতে হবে?’’

মছলন্দপুর স্টেশনে মহিলাদের দু’টি শৌচাগার। অপরিস্কার হলেও মানুষ তা ব্যবহার করছেন। তবে শৌচাগার প্রয়োজনের তুলনায় কম। শৌচাগারের সামনে লাইন দেখা গেল। মহিলারা জানালেন, লাইনে দাঁড়াতে গিয়ে অনেক সময়ে ট্রেন বেরিয়ে যায়।

বনগাঁ স্টেশন মহিলাদের প্রস্রাব করতে টাকা নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। যদিও লেখা আছে, প্রস্রাব করতে টাকা লাগবে না। ওই লেখাটি গামছা দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। নিত্যযাত্রীরা জানালেন, নিত্যযাত্রী ছাড়া যাঁরা মাঝেমধ্যে ট্রেনে যাতায়াত করেন, তাদের কাজ থেকেই টাকা বেশি করে নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ।

পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, যাত্রীদের সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে রেল এখন অনেক সচেতন। শৌচাগার নিয়মিত পরিস্কার করা হয়। কোথাও কোনও অভিযোগ থাকলে পদক্ষেপ করা হয়।

মানুষজনের অভিজ্ঞতা অবশ্য অন্য কথাই বলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন