প্রতীকী ছবি
এলাকার মানুষের চাপে গোবরডাঙা গ্রামীণ হাসপাতালের হাল ফেরাতে পদক্ষেপ করতে চলছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদ। তবে তাতে হাসপাতালটি চালু হবে কিনা তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন গোবরডাঙাবাসী।
তৃণমূল পরিচালিত জেলা পরিষদের স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ জ্যোতি চক্রবর্তী সোমবার জানান, হাসপাতালের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য দফতরের কাছে আবেদন করা হবে। এই মাসেই একটি বৈঠক ডাকা হবে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য। জ্যোতিবাবু বলেন, ‘‘ওই হাসপাতালের উপর এলাকার প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষ নির্ভর করে আছেন। স্বাস্থ্য দফতরের কাছে আবেদেন করা হবে যে, তারা যেন বিষয়টি মানবিকতার সঙ্গে বিবেচনা করেন।’’ অতীতেও একবার জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য দফতরের কাছে একই আবেদন করা হয়েছিল।
গোবরডাঙা গ্রামীণ হাসপাতালে আছে একটি পরিচালন কমিটি। তাতে জেলা পরিষদের সভাধিপতি, জেলাশাসক, জেলা পরিষদের স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ-সহ মোট সাতজন তাঁর সদস্য। বহু দিন অবশ্য ওই কমিটির কোনও বৈঠক হয়নি। জ্যোতিবাবু জানিয়েছেন, হাসপাতালের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য শীঘ্রই ওই কমিটিরও বৈঠক ডাকা হচ্ছে। জেলাশাসক ছুটিতে আছেন। তিনি ফিরলেই তাঁর সঙ্গে আলোচনা করে বৈঠকের দিন ঠিক করা হবে।
কেন জেলা পরিষদ হাসপাতালটি পরিচলনা করতে পারছে না?
জেলা পরিষদ সূত্রে জানানো হয়েছে, হাসপাতাল পরিচালনার মতো পরিকাঠামো নেই। আর্থিক সামর্থও জেলা পরিষদের নেই। অতীতে বিভিন্ন ফেরিঘাট থেকে জেলা পরিষদের রোজগার হতো। এখন সে সব আয় অনেকটাই কমে গিয়েছে। তা ছাড়া বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের অর্থ এখন জেলা পরিষদের পরিবর্তে সরাসরি পঞ্চায়েত সমিতি বা পঞ্চায়েতে চলে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে জেলা পরিষদের আর্থিক অবস্থা খারাপ।
মূলত চিকিৎসকের অভাবেই ২০১৪ সাল থেকে ওই হাসপাতালে অন্তর্বিভাগ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বলে জানা গিয়েছে। কেন চিকিৎসক নিয়োগ করা গেল না? স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ জানিয়েছেন, জেলা পরিষদের নিয়ম অনুযায়ী, চিকিৎসককে ২১,০০০ হাজার টাকার বেশি বেতন দেওয়া যায় না। কোনও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ওই টাকায় গোবরডাঙা হাসপাতালে আসতে চাইছেন না। তবে চিকিৎসকের সমস্যা ২০১৮ সাল থেকে মিটে যাবে বলে আশা করছেন জ্যোতিবাবু। কারণ ওই সময় থেকে বছরে প্রায় তিন হাজার করে চিকিৎসক পাওয়া যাবে গোটা রাজ্যে। সেখান থেকে কয়েকজন চিকিৎসক অবশ্যই মিলবে ওই হাসপাতালের জন্য বলে তাঁর আশা।
সম্প্রতি ব্যারাকপুরে জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী গোবরডাঙার পুরপ্রধান সুভাষ দত্তকে জানিয়ে দিয়েছেন গোবরডাঙায় হাসপাতাল হবে না। এরপর থেকেই এলাকাবাসীরা হতাশায় ভুগছেন। হাসপাতালের দাবিতে সোশ্যাল মিডিয়ার পাশাপাশি রাস্তায় নেমেও মানুষ অন্দোলন শুরু করেছেন। রবিবার এলাকায় একটি মিছিলও হয়।
মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরেই পুরপ্রধান হতাশই, এলাকার তৃণমূল নেতারাও হতাশ। তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত মানতে পারছেন না। স্থানীয় এক তৃণমূল নেতার কথায়, ‘‘আমরা দলীয় স্তরেও চেষ্টা করছি মুখ্যমন্ত্রীকে হাসপাতাল সম্পর্কে সঠিক তথ্য দেওয়ার। কারণ এখানে হাসপাতালের পরিকাঠামো রয়েছে। নতুন করে কিছু তৈরি করতে হবে না।’’