স্নেহ: বাবা-মায়ের কৃতী কিশোর। নিজস্ব চিত্র
অনটন পিছনে ফেলে ইচ্ছাশক্তিতে ভর করেই মাধ্যমিকে ভাল ফল করল সুপ্রিয়।
অঙ্কে ১০০ পেয়েছে সে। আরও পাঁচটি বিষয়ে লেটার-সহ ৬২৯ নম্বর তার ঝুলিতে।
জয়নগরের গড়দেওয়ানি গ্রামে বাড়ি সুপ্রিয় মণ্ডলদের। বাবা পলাশ, মা মাধবী। মশলা-মুড়ি বিক্রি করে সংসার চালান পলাশ। পাঁজর বের করা ইটের দেওয়াল, টালির ছাউনির এক চিলতে বাড়িতে বসবাস। অনটনের সংসারে দু’বেলা খাবার জোটে না ঠিক মতো। সকালে বাড়িতে লঙ্কা-পেঁয়াজ দিয়ে পান্তাভাত খেয়ে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে নিমপীঠ রামকৃষ্ণ বিদ্যাভবনে সাইকেল নিয়ে পড়তে যেত সুপ্রিয়। টিফিনের পয়সা জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হয়েছে বাবা-মাকে। পড়াশোনার ফাঁকে বাবা-মায়ের মুড়ির দোকানও সামলাতে হয় সুপ্রিয়কে। সংসারের আরও পাঁচটা কাজে হাত লাগাতো ছেলেটি। যে কারণে, দিনের বেলা কার্যত বই মুখে বসতেই পারত না বলে জানাল। পরীক্ষার কয়েক মাস আগে থেকে প্রায় সারা রাত জেগে পড়াশোনা করেছে সে। সংসারের এই হাল যেখানে, প্রাইভেট টিউশন কথা মাথাতেই আসেনি কখনও।
সুপ্রিয় উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান নিয়ে পড়ে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখে। গ্রামের মানুষের সেবা করতে চায়। সে জানায়, স্কুলের শিক্ষকেরা যথেষ্ট সাহায্য করেছেন। তবে কোচিং সেন্টারের সুকান্ত স্যার সর্বক্ষণ পাশে ছিলেন।
বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছেলের কথা শুনছিলেন বাবা-মা। কথার মাঝে পলাশের গলা ধরে আসে কান্নায়। বলেন, ‘‘ছেলের ইচ্ছে কী ভাবে পূরণ হবে, কে জানে।’’
গ্রামের স্কুলের সামনে মুড়ি বিক্রি করেন তিনি। জানালেন, স্কুলের গরমের ছুটির জন্য গত আঠারো দিন ধরে মশলা-মুড়ির ব্যবসা বন্ধ। হাতে কোনও টাকা-পয়সাই নেই। কী ভাবে ছেলের ভর্তির টাকা জোগাড় করবেন, তা ভেবে রাতের ঘুম উড়েছে বাবার।