ক্রমেই বিরল হচ্ছে ঢেঁকি ছাঁটা চাল, হাতে গড়া পিঠে

কথায় আছে, ‘ঢেঁকি স্বর্গে গিয়েও ধান ভাঙে।’ কিন্তু সেই ঢেঁকিই তো এখন বিরল গ্রামবাংলায়। পৌষ সংক্রান্তিতে বরং ভিড় মিষ্টির দোকানে। সেখান থেকে কেনা রেডিমেড পিঠে খেয়েই বৎসরান্তের পার্বণের মুখ রাখছে বাঙালি।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

বনগাঁ শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:১৪
Share:

চাল-কোটা: ক্রমেই বিরল হচ্ছে এই দৃশ্য। বনগাঁয় তোলা নিজস্ব চিত্র

কথায় আছে, ‘ঢেঁকি স্বর্গে গিয়েও ধান ভাঙে।’ কিন্তু সেই ঢেঁকিই তো এখন বিরল গ্রামবাংলায়। পৌষ সংক্রান্তিতে বরং ভিড় মিষ্টির দোকানে। সেখান থেকে কেনা রেডিমেড পিঠে খেয়েই বৎসরান্তের পার্বণের মুখ রাখছে বাঙালি।

Advertisement

আগে পৌষ মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে গ্রাম বাংলায় মা-মাসি-দিদিমারা ব্যস্ত হয়ে পড়তেন। আতপ চাল ঢেঁকিতে কোটা হত। নাওয়া-খাওয়া ভুলে শীতের দুপুরে রোদ্দুর গায়ে মেখে চাল কুটত বাড়ির মেয়েরা।

গ্রামের বহু বাড়িতে দেখা মিলত ঢেঁকির। তৈরি হত হরেক রকমের পিঠে-পায়েস। মা-দিদিমাদের কাছ থেকে বাড়ির ছোটরাও শিখে নিত পিঠে তৈরির কৌশল। কাস্তেপোড়া, কাঁচিপোড়া, কুলি পিঠে, তেলের পিঠে, রসবড়া, গোকুল পিঠে, পাটিসাপ্টা— কত রকম গড়ন, স্বাদ সে সবের। বহু পিঠের নামও এখন ভুলে গিয়েছেন অনেকে।

Advertisement

কিন্তু কেন এমন হাল? কেন পিঠে তৈরিতে আগ্রহ হারাচ্ছেন নতুন প্রজন্মের মহিলারা?

হাবরার বাসিন্দা স্কুল শিক্ষিকা এক তরুণীর কথায়, ‘‘বাচ্চা সামলে, চাকরি সামলে পিঠে তৈরির আর সময় থাকে না। তাই দোকানের পিঠের উপরেই ভরসা করতে হয়। ছোটবেলায় বাড়িতে মায়ের হাতেই তৈরি পিঠে খেতাম।’’

বনগাঁ, হাবরা, বারাসতের বিভিন্ন মিষ্টির দোকানেই এখন পিঠে কেনার ভিড়। পাটিসাপ্টা, মালপোয়া, পুলিপিঠের চাহিদা আছে। বনগাঁর এক মিষ্টির দোকানের মালিক বলেন, ‘‘সারা বছরই পিঠে বিক্রি হয়। তবে এই সময়ে তা বাড়ে। এ বারও পাটিসাপ্টা ভালই বিক্রি হচ্ছে।’’

এর মধ্যেও এখনও কিছু বাড়ি আছে, যেখানে পৌষ সংক্রান্তিতে পিঠে তৈরি হয়। বনগাঁর বাসিন্দা বছর চব্বিশের মিনতি বিশ্বাস। স্বামী পেশায় স্কুল শিক্ষক। চার বছর ধরে প্রতি পৌষ সংক্রান্তিতে মিনতি বাড়িতেই পিঠে বানান। ওই তরুণীর কথায়, ‘‘বিয়ের পরে স্বামী আমার হাতে পিঠে খেতে চাইতেন। ওঁর ইচ্ছা পূরণ করতেই শাশুড়ির কাছ থেকে শিখে নিয়েছি।’’

পিঠে তৈরিতে লাগে গুড়। কিন্তু এখন ভাল গুড় মেলাই দায়। সে জন্য অনেকেই গ্রাম থেকে গুড় কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। গত কয়েক দিন ভাল শীত পড়ায় খেজুরের রসের উৎকর্ষ বেড়েছে।

বনগাঁর নতুনগ্রামের বাসিন্দা বীথিকা বাছারের বাড়িতে দেখা গেল ঢেঁকি। আশপাশের মহিলারা ওই বাড়িতে এসে চাল ঢেঁকিতে কুটে নিয়ে যাচ্ছেন। জানা গেল, এ বার প্রায় পঞ্চাশ জন মহিলা চাল কুটে নিয়ে গিয়েছেন। গত কয়েক বছরের তুলনায় সম্প্রতি যা অনেক বেশি। তবে বছর কুড়ি পিছনে তাকালে বছরের এই সমটায় ঠেঁকি ভাঙায় ফুরসত মিলত না, জানালেন বাড়ির মেয়েরা।

এখন অনেকে মেশিনেও চাল কোটেন। কিন্তু মেশিনে চাল কুটলে পিঠের স্বাদ কমে যায় বলেই মত বীথিকাদেবীর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন