Bagda

Bagda: অভিযুক্ত অধরা, স্কুলে নিরাপদ বোধ করছেন না প্রধান শিক্ষক

প্রধান শিক্ষককে মারধরের ঘটনাটি ঘটেছিল সোমবার বিকেলে, বাগদা থানার পাটতেলপোতা এফপি স্কুলে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাগদা শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২২ ০৭:৫৭
Share:

মারধরের ঘটনার বিবরণ দিচ্ছেন প্রধান শিক্ষক। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

দাবি মতো কাটমানি না দেওয়ায় প্রধান শিক্ষককে রাস্তায় ফেলে পেটানোর ঘটনায় অভিযুক্ত আসরাফুল মণ্ডলকে এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এ দিকে, নিরাপত্তার অভাবে বৃহস্পতিবারও স্কুলে যেতে পারেননি প্রধান শিক্ষক সুকুমার সর্দার। তিনি বলেন, ‘‘কোন ভরসায় স্কুলে যাব। আমার নিরাপত্তা কোথায়! আমাকে হুমকি দিয়ে বলা হয়েছে, স্কুলে গেলে প্রাণে মেরে ফেলা হবে।’’

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, আসরাফুলের খোঁজে তল্লাশি চলছে। তার বাড়ি-সহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালানো হয়েছে। প্রধান শিক্ষকের নিরাপত্তার বিষয়ে পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘এলাকায় পুলিশি টহল চলছে। প্রধান শিক্ষক স্কুলে গেলে পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা দেওয়া হবে।’’

প্রধান শিক্ষককে মারধরের ঘটনাটি ঘটেছিল সোমবার বিকেলে, বাগদা থানার পাটতেলপোতা এফপি স্কুলে। মঙ্গলবার প্রহৃত প্রধান শিক্ষক সুকুমার সর্দার অভিযুক্ত আসরাফুলের বিরুদ্ধে বাগদা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।

Advertisement

স্কুল ও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যের সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতর থেকে ওই স্কুলে অতিরিক্ত শ্রেণিকক্ষ তৈরির জন্য ১১ লক্ষ ৩০ হাজার বরাদ্দ হয়েছিল। স্কুল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার দুপুর ৩টে নাগাদ আসরাফুল স্কুলে আসে। অভিযোগ, সে প্রধান শিক্ষকের কাছে গিয়ে ওই বরাদ্দ থেকে ১০ হাজার টাকা কাটমানি চায়। প্রধান শিক্ষক রাজি না হওয়ায় তাঁকে গালিগালাজ করে। হুমকি দেয়। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ঘুষ খাওয়া, ঘুষ দিয়ে চাকরি পাওয়ার অভিযোগ তোলে।

স্বাভাবিক দিনে স্কুল ৪টের সময়ে ছুটি হলেও সোমবার গোলমালের জেরে মিনিট কুড়ি আগেই স্কুল বন্ধ করে দেন শিক্ষকেরা।

প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘স্কুল থেকে বেরোতেই আসরাফুল আমাকে মারধর করে। রাস্তায় ধাক্কা মেরে ফেলে লাথি, কিল, ঘুষি মারতে থাকে। সহ-শিক্ষকেরা উদ্ধার করে বাগদা গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসকেরা হাসপাতালে ভর্তি রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমি বাড়ি ফিরে এসে চিকিৎসা করাচ্ছি।’’

বৃহস্পতিবার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, প্রধান শিক্ষকের চোখে আতঙ্ক। জানালেন, হাঁটুতে ব্যথা রয়েছে। মাথা যন্ত্রণা করছে। সুকুমারের কথায়, ‘‘সরাসরি হুমকি দেওয়া না হলেও গ্রাম থেকে ফোন করে বলা হচ্ছে, আপনি কাজটা ঠিক করলেন না। আপনার মনোভাব দেখে মনে হচ্ছে, আপনি আর স্কুলে আসতে চান না। এ সব শুনে কোন ভরসায় স্কুলে যাব!’’

গোটা ঘটনার পিছনে স্থানীয় আষাঢ়ু অঞ্চলের যুব তৃণমূল সভাপতি গিয়াসউদ্দিন মণ্ডলের মদত আছে বলে অভিযোগ প্রধান শিক্ষকের। আসরাফুল গিয়াসউদ্দিনের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত।

মারধরে মদত দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে গিয়াসউদ্দিন বলেন, ‘‘ঘটনার সময়ে আমি সেখানে ছিলাম না। পরে লোকমুখে শুনেছি। তবে জেনেছি, আসরাফুল কাটমানি চায়নি। আসরাফুল ও কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা প্রধান শিক্ষকের কাছে গিয়ে নিম্নমানের মালপত্র দিয়ে শ্রেণিকক্ষ তৈরির প্রতিবাদ করেছিলেন।"

অন্য দিকে, নিম্নমানের মালপত্র দিয়ে শ্রেণিকক্ষ তৈরির অভিযোগ মানতে নারাজ ব্লক প্রশাসনের কর্তারা। বাগদার বিডিও সৌমেন্দু গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শ্রেণিকক্ষ তৈরির কাজ শুরু হওয়ার পরে ব্লকের তরফে ইঞ্জিনিয়ারেরা পরীক্ষা করে দেখেছিলেন। তাঁরা নির্মাণ কাজে নিম্নমানের মালপত্র ব্যবহার করার সন্ধান পাননি। তবে কারও কোনও অভিযোগ থাকলে আমাদের কাছে লিখিত ভাবে জানাতে পারেন। সে ক্ষেত্রে তা খতিয়ে দেখা হবে।’’

এ দিকে, ঘটনার পরে বৃহস্পতিবার স্কুলের বাকি ৫ জন সহ-শিক্ষক স্কুলে গিয়েছিলেন। পঠনপাঠন হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন