খুনে অভিযুক্তের বোনের বিয়েতে তুলকালাম

খুনে অভিযুক্তকে হাতের কাছে না পেয়ে তার খুড়তুতো বোনের বিয়ের আসরে তুলকালাম বাধাল জনতা। প্রায় আড়াই ঘণ্টার তাণ্ডবের পরে পুলিশি-পাহারায় বিয়ের জন্য ভাড়া নেওয়া বাড়ি ছাড়তে হল নবদম্পতিকে। তবে তার আগেই বাড়িটিতে ভাঙচুর হয়ে গিয়েছে, আগুন লাগানো হয়েছে খুনে অভিযুক্তের মোটরবাইকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গাইঘাটা শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৫ ০৩:০৭
Share:

ধৃত দেবদাস মণ্ডল। সোমবার নির্মাল্য প্রামাণিকের তোলা ছবি।

খুনে অভিযুক্তকে হাতের কাছে না পেয়ে তার খুড়তুতো বোনের বিয়ের আসরে তুলকালাম বাধাল জনতা। প্রায় আড়াই ঘণ্টার তাণ্ডবের পরে পুলিশি-পাহারায় বিয়ের জন্য ভাড়া নেওয়া বাড়ি ছাড়তে হল নবদম্পতিকে। তবে তার আগেই বাড়িটিতে ভাঙচুর হয়ে গিয়েছে, আগুন লাগানো হয়েছে খুনে অভিযুক্তের মোটরবাইকে।

Advertisement

রবিবার রাতে উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটার রামপুরের ঘটনা। স্থানীয় বাসিন্দা নির্মল ঘোষকে (৫২) খুনের অভিযোগে সোমবার ওই এলাকারই ভাটপাড়া থেকে দেবদাস মণ্ডলকে ধরেছে পুলিশ। এ দিন বনগাঁ আদালতের বিচারক ধৃতকে সাত দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। এসডিপিও (বনগাঁ) বিশ্বজিৎ মাহাতো বলেন, ‘‘খুনের কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। ধৃতকে জেরা করা হচ্ছে।’’

পুলিশ সূত্রের দাবি, বছর তিরিশের দেবদাসের ‘রেকর্ড’ বিশেষ ‘সুবিধার’ নয়। অতীতে নিজের জ্যাঠামশাইয়ের উপরে ছুরি নিয়ে চড়াও হওয়ার অভিযোগ উঠেছিল তার বিরুদ্ধে। বেশ কিছু দিন সে এলাকার বাইরে ছিল। সম্প্রতি ফিরে বিভিন্ন জনকে বিভিন্ন সূত্রে ভয় দেখানোয় অভিযুক্ত সে। রবিবার সন্ধ্যায় দেবদাস ভাটপাড়ার বাড়ি থেকে মোটরবাইকে ওই এলাকার ন’হাটা রোডের পাশে ওই বিয়েবাড়িতে আসছিল। সেই সময় তার মোটরবাইকের সঙ্গে ধাক্কা লাগে পেশায় দিনমজুর নির্মলবাবুর সাইকেলের। তাতে দু’জনের বচসা বাধে। তারই জেরে দেবদাস নির্মলবাবুকে মারধর করে, রাস্তার পাশের ইটের দেওয়ালে তাঁর মাথা ঠুকে দেয় বলে অভিযোগ।

Advertisement

জেলা পুলিশের একটি সূত্র অবশ্য দাবি করেছে, জেরায় দেবদাস তাদের জানিয়েছে, নির্মলবাবুর কটূক্তি শুনে মেজাজ হারিয়ে সে তাঁকে চড় মারে। তবে মারধর করেনি।

স্থানীয় সূত্রের খবর, রক্তাক্ত নির্মলবাবুকে লুটিয়ে পড়তে দেখে দেবদাস সেখান থেকে চলে যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা নির্মলবাবুর আত্মীয়দের খবর দেন। বনগাঁ হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তারেরা নির্মলবাবুকে সঙ্গে সঙ্গেই মৃত বলে ঘোষণা করেন। এর পরেই ক্ষিপ্ত জনতা দেবদাসের খোঁজে চড়াও হয় ওই বিয়েবাড়িতে। ইটবৃষ্টিতে কাচের জানলা টুকরো হয়ে যায়। আলো ভাঙা হয় লাঠির বাড়িতে। খাবারের ডেকচিতে ছুড়ে ফেলা হয় চেয়ার। ভয়ে কুঁকড়ে যান নিমন্ত্রিতেরা। অনেকে পালান। শেষে স্থানীয় সূত্রে খবর পেয়ে পুলিশ বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

পুলিশি-পাহারায় চাঁদপাড়ায় পাত্রের বাড়িতে ফেরেন নবদম্পতি। তাঁরা এ প্রসঙ্গে কোনও কথা বলতে চাননি। মুখে কুলুপ পাত্রীপক্ষেরও। তবে পাত্রের বাবা বলেন, ‘‘ওখানে যে তাণ্ডব শুরু হয়েছিল, পুলিশ না পৌঁছলে তার মাত্রা আরও বাড়ত। পুলিশ-পাহারা দিল বলে বিয়ের পাটটা ঠিকঠাক মিটেছে। বিপদের সম্ভাবনা ছিল বলে বউমাকেও বাড়িতে নিয়ে এসেছি।’’

নির্মলবাবুর স্ত্রী কল্পনা ঘোষ বলেন, ‘‘স্বামী যাঁর খেতে কাজ করেন, তাঁর কাছ থেকে কিছু টাকা পেতেন। সেটাই আনতে যাচ্ছেন বলে বেরোলেন। আর ফিরলেন না!’’

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, বিয়েবাড়ির সামনে সাজানো তোরণ তছনছ। পোড়া মোটরবাইক থেকে ধোঁয়া উঠছে। চেয়ার-টেবিল ছত্রখান হয়ে পড়ে রয়েছে।

ভাড়াবাড়িটির মালিক মিহিরকান্তি বিশ্বাস বলেন, ‘‘এ বাড়িতে এমন ঘটনা এই প্রথম।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন