নোটবন্দি খেল দেখাচ্ছে বাজারেও

নগদ বের করার আগে অনেকেই দু’বার ভাবছেন। বড় শো-রুম, শপিং মলে কেনাকাটা তেমন না কমলেও ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা পড়েছেন মুশকিলে। অনেকেরই বক্তব্য, ‘‘নগদে যাঁরা কেনাকাটা করেন, তাঁদের অনেকেই দোকানে ঢুকে বলছেন, কম দামের মাল দেখান।

Advertisement

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০১:১৮
Share:

ক্রেতার-অপেক্ষায়: হরিতলায়। সেতুর নীচে ফাঁকা বাজার। ছবি: সুদীপ ঘোষ।

জিএসটি আর নোটবন্দি— দুইয়ের জেরে এ বার পুজোর বাজারে ঝটকা লেগেছে। নগদ বের করার আগে অনেকেই দু’বার ভাবছেন। বড় শো-রুম, শপিং মলে কেনাকাটা তেমন না কমলেও ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা পড়েছেন মুশকিলে। অনেকেরই বক্তব্য, ‘‘নগদে যাঁরা কেনাকাটা করেন, তাঁদের অনেকেই দোকানে ঢুকে বলছেন, কম দামের মাল দেখান। আত্মীয়-স্বজনকে দেওয়া-থোওয়া কমিয়ে দিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন অনেক পুরনো ক্রেতা।

Advertisement

পুজোর আগে বারাসতে কেনাকাটা করতে ছুটতেন বনগাঁর দত্তপাড়ার তরুণী দেবপ্রিয়া দাস। এ বারা বারাসতে নতুন শপিং মল খুলেছে। তবু বারাসতে পা রাখা হয়নি দেবপ্রিয়ার। বনগাঁ থেকেই কেনাকাটা সেরেছেন। বললেন, ‘‘কেনাকাটার জন্য অন্যবারের থেকে অনেক কম খরচ দিয়েছে বাবা-মা। বলছে নাকি টাকাই নেই!’’

এলাকাতেই বাজারহাট সেরেছেন বলে জানালেন, দেগঙ্গার বেড়াচাঁপার স্বাতী আচার্য। তিনিও অন্যবারের মতো বারাসতে কেনাকাটা করতে যাননি। জিনিসপত্রের যা দাম, এ বার আর আত্মীয়-স্বজনকে তেমন কিছু দেওয়া হচ্ছে না বলে জানালেন।

Advertisement

দেবপ্রিয়া, স্বাতীর মতো উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ পুজোর সময় কেনাকাটার জন্য বারাসত-মধ্যমগ্রামে আসেন। পর পর অনেক শপিং মল, বহুজাতিক সংস্থার বিপণি তৈরি হয়েছে এই সব এলাকায়। শপিং মল ও বড় শো-রুমগুলি তবু ধাক্কা কিছুটা সামলে উঠেছে, কিন্তু ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা জানালেন, এক ধাক্কায় বিক্রি কমেছে অনেকটাই। নোটবন্দি ও জিএসটির ধাক্কাতেই এই অবস্থা বলে তাঁদের অনেকের মত।

বারাসতে ৩৪ ও ৩৫ নম্বর জাতীয় সড়কের দু’ধারে তৈরি হয়েছে নানা শপিং মল। শুধু তাই নয়, বারাসত থেকে মধ্যমগ্রাম পর্যন্ত রাস্তার দু’ধারে নতুন তৈরি হয়েছে নানা শপিং মল, বস্ত্র প্রতিষ্ঠান। পুজোর সময়ে কেনাকাটার ভিড়ের চোটে ডাকবাংলো ও চাঁপাডালি মোড়ে চলাফেরাই মুশকিল হয়ে পড়ে। কিন্তু এ বার সেখানে রাস্তার পাশের দোকানগুলিতে সেই ভিড় নেই। ভিড় কম উড়ালপুলের নীচে ছোট দোকান, ফুটপাতের স্টলগুলিতেও।

বরং ভিড় জমেছে শপিং মলে। শেঠপুকুরের কাছে একটি বহুজাতিক সংস্থার স্টোর ম্যানেজার চন্দ্রশেখর মিত্র বলেন, ‘‘নোটবন্দির পরে মানুষের হাতে টাকা না থাকায় কেনাকাটা কমেছিল। জিএসটির পরে বিভিন্ন জিনিসপত্রে নতুন দামে কেনা-বিক্রিতেও সমস্যা হয়েছে। তবে আমাদের পরিসংখ্যান বলছে, এখন কেনাকাটা অন্যবারের মত স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে।’’

একই কথা বলছেন বিভিন্ন নামী সংস্থার শোরুমের ম্যানেজার ও নামী প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা। চাঁপাডালি মোড়ের কাছে একটি নামী বস্ত্র প্রতিষ্ঠানের মালিক কান্তি সাহা বলেন, ‘‘নোটবন্দি ও জিএসটির কারণে অনলাইনে কেনাকাটা বেড়েছে। যারা কর ফাঁকি দিতেন, সে সব ব্যবসায়ীরা সমস্যায় পড়েছেন। কিন্তু আমাদের প্রতিষ্ঠানে এ বার বিক্রি কমেনি, বরং বেড়েছে।’’

তবে একেবারে অন্য কথা বলছেন এলাকার ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, বাজার বেশ মন্দা। কলোনি মোড়ের কাছে ছোট কাপড় ব্যবসায়ী নান্টু সরকার বলেন, ‘‘মূলত গরিব মানুষই আমাদের কাছে কিনতে আসেন। তাঁদের কেনাকাটা কমে গিয়েছে। সকলেই বলছে, এ বার টাকা নেই। জিএসটির জন্য আমরাও মাল তেমন কিনতে পারছি না।’’ বারাসতে একের পর এক শপিং মল তৈরি, লাগাতার বৃষ্টি, দুর্গাপুজো অনেকটা এগিয়ে আসার ফলেও কেনাকাটায় টান পড়েছে বলে ছোট ব্যবসায়ীদের মত।

চাঁপাডালি থেকে কলোনি মোড় পর্যন্ত উড়ালপুল হওয়ার আগে দোকান ছিল, এখন হরিতলায় উড়ালপুলের নীচে রাস্তার উপরে বসেই বাচ্চা ও মেয়েদের জামা-কাপড় বিক্রি করেন অসীম রায়। তাঁর কথায়, ‘‘ভয়ে মালপত্র তুলতে পারছি না। তেমন বেচাকেনা নেই।’’ সুনীল মজুমদার নামে আর এক বস্ত্র ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘এ বার পুজোয় মানুষ নিজের জন্যও জামা-কাপড় কম কিনছেন। চেনাশোনা ক্রেতারাও বলছেন, আত্মীয়-স্বজনকে জামা-কাপড় দেওয়া এ বার কমিয়ে দিয়েছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন