পানীয় জলের সমস্যায় জর্জরিত গোসাবাবাসী

দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার অনেক জায়গায় জলের জন্য হাহাকার করছেন মানুষ। এক বালতি জল পেতে রাতও জাগতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে। সরেজমিনে খোঁজ নিল আনন্দবাজার। গোসাবা ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকাও পানীয় জলের সঙ্কটে। রাজ্য জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের তরফ থেকে পুকুরের জল সংশোধন করে গোসাবা ব্লকের আরামপুর ও গোসাবা মৌজার বিভিন্ন এলাকায় নলবাহিত পরিস্রুত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছিল।

Advertisement

প্রসেনজিৎ সাহা

ক্যানিং শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৯ ০৬:২৩
Share:

জলের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে এলাকাবাসী। নিজস্ব চিত্র

নদীঘেরা জায়গা। অথচ তা পানের অযোগ্য। সুন্দরবন অঞ্চলের জল-ছবিটা অনেকটা এমনই। অনেক দিন ধরেই পানীয় জলের কষ্টে ভুগছে সুন্দরবন।

Advertisement

গোসাবা ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকাও পানীয় জলের সঙ্কটে। রাজ্য জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের তরফ থেকে পুকুরের জল সংশোধন করে গোসাবা ব্লকের আরামপুর ও গোসাবা মৌজার বিভিন্ন এলাকায় নলবাহিত পরিস্রুত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু এখনও সেখানকার বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ জল-কষ্টে ভুগছেন বলে অভিযোগ।

গোসাবা ব্লক ও সংলগ্ন এলাকাগুলিতে পানীয় জলের স্তর কোনওকালেই ঠিকঠাক ছিল না। যত দিন যাচ্ছে, সমস্যা বাড়ছে। বাম আমলে গোসাবা ব্লকের বিভিন্ন দ্বীপে পাইপ লাইনের মাধ্যমে জল সরবরাহ শুরু হয়েছিল। কিন্তু অনেক জায়গাতেই পাইপলাইনের বিভিন্ন জায়গায় ফাটল ধরেছে। যা দিয়ে ময়লা, আবর্জনা তো ঢুকছেই, অনেক সময়ে সাপ-ব্যাঙও পাওয়া গিয়েছে বলে জানালেন স্থানীয় মানুষজন। দীর্ঘ দিন ধরে পাইপলাইন সারানো হয় না বলে তাঁদের অভিযোগ। তা ছাড়া, দিনে তিনবার পাইপলাইনের মাধ্যমে জল সরবরাহ করার কথা। কিন্তু কখনও দিনে একবার মাত্র জল দেওয়া হয় বলেও স্থানীয় মানুষের অভিজ্ঞতা। কোনও কোনও তো জল একেবারেই আসে না বলে জানালেন অনেকে।

Advertisement

জল যা আসে, তা-ও ঘোলা ও অস্বাস্থ্যকর। চড়া রোদে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে লাইন দিয়ে যে জল মানুষ সংগ্রহ করেন, তা থেকে নানা রোগের সংক্রমণ ঘটছে বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের। অনেকে ভোগেন পেটের সমস্যায়। যাঁদের আর্থিক সচ্ছলতা আছে, তাঁরা জল কিনে খাচ্ছেন। কিন্তু অনেকের পক্ষেই তা সম্ভব হয় না। সব থেকে বেশি সমস্যা গোসাবার রাঙাবেলিয়া, সাতজেলিয়া, লাক্সবাগান, পাখিরালয়, বালি, সত্যনারায়ণপুর, আমতলি, কচুখালির বাসিন্দাদের।

দু’তিন বছর রাজ্য সরকারের উদ্যোগে গোসাবা ব্লকের দ্বীপগুলিতে নলবাহিত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার কাজ নতুন করে শুরু হয়েছিল। প্রথম দফায় গোসাবা মৌজায় পুকুরের জল শোধন করে তা পাইপের মাধ্যমে সরবরাহ করা হচ্ছে। যদিও এলাকাবাসীর দাবি, গোসাবা পঞ্চায়েত এলাকায় পুকুরের জল পরিশোধন করে গ্রামে গ্রামে পৌঁছে দেওয়া হলেও এখনও পর্যন্ত সেই ব্যবস্থায় যথাযথ পরিকাঠামোর অভাব রয়েছে। অনেক জায়গাতেই কোনও রকমে শুধু জলের নলটুকু রয়েছে। কলতলার মেঝে বাঁধিয়ে দেওয়া হয়নি। তৈরি হয়নি জল যাওয়ার নালাও। তার উপরে মাঝেমধ্যেই পাইপ ফেটে বিপত্তি ঘটছে। ধস নেমেই মূলত পাইপ ফাটছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে। রয়েছে লোডশেডিংয়ের সমস্যাও। যার জেরে মাঝে মধ্যেই জল সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।এলাকার বিধায়ক জয়ন্ত নস্করের দাবি, “পানীয় জলের সমস্যা সমাধানের জন্য গোসাবা ব্লক জুড়ে জোরকদমে কাজ চলছে। ইতিমধ্যেই প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয়ে পুকুরের জল পরিশোধন করে তা পাইপ লাইনের মাধ্যমে গ্রামে গ্রামে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে গোসাবা ও আরামপুর মৌজার অন্তত চল্লিশ হাজার মানুষ উপকৃত হয়েছেন। বাকি সাতজেলিয়া, বালি ১, বালি ২, ছোট মোল্লাখালি-সহ অন্যান্য দ্বীপগুলিতেও জল পৌঁছে দেওয়ার জন্য কাজ চলছে। দ্রুত গোসাবা ব্লকের প্রতিটি প্রান্তে জল পৌঁছে যাবে।”

গোসাবার আরএসপি নেতা সমরেন্দ্রনাথ মণ্ডল অবশ্য বলেন, ‘‘এই সরকার কাজ করছে ঠিকই। কিন্তু তা সঠিক পরিকল্পনামাফিক হচ্ছে না। যার ফলে সাধারণ মানুষ সেই প্রকল্পের সুবিধাও পাচ্ছেন না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন